• ঢাকা
  • শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
এখনই নতুন ঝড়ের প্রস্তুতি না নিলে সমূহ বিপদ

বর্তমান সময়ে এসে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কিছুটা কমে এসেছে। আমরাও এখন চেষ্টা করছি কিছুটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার। কিন্তু আমাদের এখন দ্বিতীয় ঝড়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়া উচিত।

অনেক দেশ এখন ধীরে ধীরে লকডাউন তোলার পথে হাঁটছে। কিন্তু সবকিছু নির্ভর করছে কতটা কঠোরভাবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতি মানা হচ্ছে তার ওপর। মাত্র কদিন আগেই কভিড-১৯-এর হাতে অসহায় হয়ে ছিল সবাই। হাসপাতালগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। অনেক দেশে এখনো সে অবস্থা চলমান। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাও ঊর্ধ্বমুখী।

জর্জিয়া অঞ্চলের হাসপাতালগুলো নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, কভিড-১৯ যদি চূড়ায় ওঠে এবং সব হাসপাতাল রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হয় তার পরও বেশির ভাগ অঞ্চলের জন্য তা অপর্যাপ্ত হবে।

কোনো কোনো অঞ্চলে এই মারাত্মক ঘাটতি কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঘরে থাকা এবং শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার যে নীতি তার ওপর জোর দেয়া। পরে ঘরের বাইরে আসার অনুমতি পেলেও শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি যেন অব্যাহত থাকে।

পেছনের মডেল

জর্জিয়ায় করা এ প্রকল্পের ভিত্তি হচ্ছে এজেন্টভিত্তিক মডেল। যা কিনা তৈরি করা হয়েছে ভৌগোলিকভাবে কভিড-১৯-এর বিস্তারের পূর্বাভাস দেয়ার লক্ষ্যে। এ মডেলের প্রতিবেদনগুলোর ক্ষেত্রে পূববর্তী ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর দুটি প্রতিবেদনের মডেল অনুসরণ করা হয়েছে।

কার্ভ-ফিটিং মডেলের বিপরীতে এজেন্ট বেজড সিমুলেশন আমাদের রোগের অগ্রগতির সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে (একজনের শরীরে রোগ কীভাবে কাজ করে তা নির্ভর করে বয়সের ওপর), সেই সঙ্গে ব্যক্তির আচরণের ওপরও। এটা তুলে ধরে ঘরে, কাজের ক্ষেত্রে, স্কুল ও সংঘগুলোতে রোগ ছড়ায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে। এক্ষেত্রে পরিবারের আকার, কর্মপ্রবাহ এবং জনসংখ্যার ডেমোগ্রাফির বিশদ ডাটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সিমুলেশন মডেলে স্থিতিকাল এবং বিভিন্ন মেয়াদে ঘরে থাকা, স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিন, স্কুল বন্ধ থাকার বৈচিত্র্যময় চিত্র পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এই মডেল দেখাচ্ছে প্রথম ১৮০ দিনে যদি কোনো বাধা না দেয়া হয় তবে জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ এতে আক্রান্ত হতে পারে। যা কিনা এপ্রিলের মাঝামাঝিতে গিয়ে সর্বোচ্চ শিখড় ছুঁতে পারে। স্কুল বন্ধ করায় এটি কমিয়ে আনে ৫৫ শতাংশে। তবে আরেকটি বিষয় হচ্ছে স্কুল বন্ধ করার ফলে কিছুটা প্রভাব পড়লেও কেবল স্কুল বন্ধ করে কভিড-১৯-এর বিস্তারকে থামানো সম্ভব নয়।

আমরা কী করতে পারি?

কিছু কিছু ফার্মাসিউটিক্যাল ক্ষেত্র থেকে আশার আলো দেখা গেলেও তা এখন পর্যন্ত কভিড-১৯ কে থামাতে বা শ্লথ করতে যথেষ্ট নয়। এখনো অ্যান্টিভাইরাল ও ভ্যাকসিনের দেখা মেলেনি। এখন পর্যন্ত এই উচ্চ সংক্রমণসম্পন্ন ভাইরাসটির বিরুদ্ধে আমাদের প্রাথমিক অস্ত্রটি হচ্ছে শারীরিক দূরত্বের নীতি পুরোপুরিভাবে মেনে চলা (স্কুলগুলো বন্ধ রাখাসহ)। আক্রান্ত রোগীকে শেল্টার-ইন-প্লেস কিংবা আইসোলেশনে রাখা এবং স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনের নীতি মেনে চলা। বিভিন্ন দেশে এখন স্কুলগুলো বন্ধ এবং মার্চ-এপ্রিলে মানুষ লকডাউন চলাকালে নিজের ঘরেই বন্দি ছিল। যা কিনা কিছুটা হলেও ভাইরাসের লাগাম টানতে পেরেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘরে থাকার যে নীতি তা রোগের বিস্তার কমাতে বিশেষভাবে কাজ করেছে। এটা ভালো, কিন্তু সাময়িকও বটে। এখন আমরা একটি সংকটময় মুহূর্তে আছি।

স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিন কতটা সহায়ক?

যদি ঘরে কোনো সদস্যের মাঝে কভিড-১৯-এর লক্ষণসমূহ দেখা যায় তবে সেক্ষেত্রে ঘরের সবাইকে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এমনকি টেস্ট না করলে কিংবা কভিড-১৯ নিশ্চিত না হলেও। যতক্ষণ না ঘরের সবাই উপসর্গমুক্ত হয়, ততক্ষণ এটি করে যেতে হবে। গবেষণা বলছে, জনসংখ্যার কত শতাংশ লোক আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রতিদিন আক্রান্তের নতুন সংখ্যার ওপর স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনের দারুণ প্রভাব রয়েছে। এমনকি চার সপ্তাহের বাধ্যতামূলক ঘরে থাকা আদেশ তুলে দেয়ার পর গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, আগস্টের মাঝে জর্জিয়ার ২৮ থেকে ৪৬ শতাংশ লোক কভিড-১৯ আক্রান্ত হতে পারে। সে সঙ্গে জুন থেকে আগস্টের মাঝে যেকোনো সময় এটি সর্বোচ্চ সীমায় উঠতে পারে।

তবে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনের ক্ষেত্রে উচ্চ সম্মতি পাওয়া গেলে সেটি ভাইরাসের ওপরে ওঠাকে থামিয়ে দিতে পারে এবং আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিতে পারে। যা কিনা স্বাস্থ্যকর্মী, হাসপাতালের বেড, আইসিও বেড, ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য উপকরণের ওপর থেকে চাপ কমিয়ে দিতে পারে।

যাই হোক, এ সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার যে এটি ভাইরাসকে কেবল বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘরের কেউ কেউ আক্রান্ত হতে পারে, যাদের কিনা লক্ষণ প্রকাশ পাবে না। এক্ষেত্রে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিন তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না এবং তারা অন্যদের আক্রান্ত করতে পারে।

সাফল্যের পথ

কভিড-১৯ মানুষের জীবনের সবগুলো দিককে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে; জনস্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সাপ্লাই চেইন ও অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলোকেও। মানুষের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এখানে স্বাভাবিক জীবন ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপে ফিরতে শারীরিক দূরত্ব নীতি শিথিল করার তাড়নাও বাড়ছে।

কিন্তু সংক্রমণ এড়াতে এটিই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। ঘরে থাকার নীতি দীর্ঘ সময় ধরে বলবৎ থাকলে তা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি করবে। অন্যদিকে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনের নীতি কেবল যাদের লক্ষণ দেখা গেছে তাদের জন্য প্রযোজ্য হয়ে থাকে। তবে একই সময়ে অনেক মানুষ ঘরে থাকলে তা স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনের মাত্রাকেও কমিয়ে আনে।

এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার কোনো সহজ উপায়ের দেখা মেলেনি। কিন্তু নতুন বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের শারীরিক দূরত্বের বিধি সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। আমাদের ভুললে চলবে না লক্ষণবিহীন রোগীরাও অন্যদের আক্রান্ত করতে পারে। এখন তাই ঘরে থাকা, কোয়ারেন্টিনে থাকা ও শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি বেশ জোর দিয়ে দেখা উচিত সরকারের। আমাদের সম্মিলিত ধৈর্য ও শারীরিক দূরত্ব বজায়ের নীতির প্রতি অনুগত থাকাই এখন বাঁচিয়ে দিতে পারে অনেকগুলো প্রাণ। যা কিনা আমাদের ফিরিয়ে আনতে পারে সুস্থ সমাজে।

সায়েন্টিফিক আমেরিকান

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।