মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের জাফরাকান্দির বাসিন্দা সজিব মোল্লা। ছিলেন মসজিদের ইমাম। স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে অনেকটা জেদের বশে নেমে পড়েন বিরিয়ানি-চপ বানাতে। আর এতেই বাজিমাত। মাসে উপার্জন করেন প্রায় লাখ টাকা।
সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সজীব মোল্লা তার নিজের হাতে বানানো চপের নাম দিয়েছেন ‘বিরিয়ানি চিকেন চপ’। চপ ছাড়াও বিভিন্ন রকমের খাবার পরিবেশন করেন তিনি। ছেলে মেয়ের নামে দোকানের নাম দিয়েছেন ‘আল্লাহর দান তালহা-তোয়া রেস্টুরেন্ট এ্যান্ড ফাস্ট ফুড কর্ণার’। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তার দোকানে ভিড় লেগেই থাকে। বাড়ির পাশের বাজারে তার মজাদার চপ-বিরিয়ানির দোকান।
তিনি বলেন স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করেছি প্রায় একযুগ। মসজিদের ইমাম থাকাকালীন সজীব মোল্লার একদিন রাতে বিরিয়ারি খাওয়ার খুব সখ হয়। সেই রাতেই ইমাম সজীব মোল্লা বিরিয়ানি রান্না করার জন্য বাজার থেকে মুরগি, চাল ও বিভিন্ন মসলা নিয়ে বাড়িতে হাজির হন এবং স্ত্রীকে বিরিয়ানি রান্না করতে বলেন। গভীর রাতে তার স্ত্রী বিরায়ানি রান্না করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এবং বেশ বিরক্তি বোধ করেন। সজীব মোল্লা তার স্ত্রীকে বিরিয়ানি রান্না করার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করলেও তার স্ত্রীর মোটেও মন গলেনি। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে রাগারাগিও হয়।
শেষমেশ গভীর রাতে রাগ-ক্ষোভ আর জেদের বশবর্তী হয়ে নিজেই শুরু করেন বিরিয়ানি রান্না। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় তার রান্না ভালো হয়না। কিন্তু চাল ও মুরগির মাংস একসঙ্গে জমে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিরায়ানির চাল, মশলা, মাংস দিয়ে চপ বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। রাতেই চপ বানানো শুরু করেন তিনি। সেই রাতে নিজের বানানো চিকেন চপ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকলে ঘুম থেকে উঠে তার স্ত্রী কৌতুহলবশত স্বামীর হাতে বানানো বিরিয়ানি চপ খান। সুস্বাদু হওয়ায় বাড়ির ও এলাকাবাসীকে খাওয়ান। সবাই বিরিয়ানি চপ খেয়ে মজাদার চপ বানানোর জন্য ইমামকে ধন্যবাদ জানান। সেই থেকে শুরু। তারপর থেকেই তিনি বাড়ির পাশে বসে পড়েন বিরিয়ানি চপের দোকান নিয়ে। আর এভাবেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম ডাক।
সজীব মোল্লা বলেন, স্ত্রীর উপর রাগ-ক্ষোভ আর জেদ করে বিরিয়ানি-চপের ব্যবসায় আসা। তবে স্ত্রীর প্রতি এখন আর রাগ-ক্ষোভ নেই। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পাশাপাশি হালালভাবে মানুষকে বিরিয়ানি-চপ বানিয়ে খাওয়াই। এটাকে এখন পেশা হিসেবেই বেছে নিয়েছি।
এখন নিজ গ্রাম ছারাও উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ আসেন আমার বিরিয়ানি-চপ সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থেকে খেতে আসে। যা মহান আল্লাহর মেহেরবানী। নিজের ঘরের কোণে বসে মাসে প্রায় লাখ টাকা আয় করাটা আল্লাহর দয়া ছাড়া সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে তিনি সেদিনের রাতের ঘটনাটি তার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, তার রেস্তোরাঁয় মুরগির চপ, কোয়েল পাখির চপ, মুরগির ফ্রাই, কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, বিভিন্ন প্রকারের ভুনা খিচুড়ি, ফুচকা, ঝালমুড়ি ছাড়াও কয়েক প্রকারের বিভিন্ন ধরনের আচার পাওয়া যায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য পার্সেল খাবারও পরিবেশন করা হয়।
মধুখালী পৌরসভার বাসিন্দা আব্দুর নূর বলেন বলেন, এখানে বিভিন্ন প্রকার পাখির মাংসের চপ বিক্রি করা হয়। আমি প্রায়ই চপ খেতে চলে আসি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন সজীব মোল্লার দোকানে চপ খেয়ে মনে হয়েছে তার নিজ হাতে তৈরি খাবারের মান ও স্বাদের কারণে অল্প সময়ের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে ওই এলাকার বাসিন্দা ও মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল হক বকু বলেন, সজীব মোল্লা ব্যক্তি হিসেবেও একজন ভালো মানুষ। তার বানানো বিরিয়ানি চপের সুনাম এলাকা ছাড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। দূর-দুরান্ত থেকে প্রতিদিন বহু মানুষ ছুটে আসেন তার বানানো চপের স্বাদ নিতে।