• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
গ্রামগুলো কী প্রস্তুত ?

বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো গ্রামীণ ও নগর সমাজের সমন্বিত রূপ। এখানে কৃষিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার পাশাপাশি আধুনিক শিল্পভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থাও কার্যকর অবদান রাখছে। সেবাখাতের ক্রমবর্ধমান বিকাশও বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে কৃষিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা। আবহমান কাল থেকে এদেশের মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষিতে খোরাকি উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যবস্থায় রূপান্তর ঘটেছে। যদিও জিডিপিতে কৃষির অবদান এবং কৃষিখাতে শ্রমশক্তির পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে, কিন্তু দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে কৃষির অবদান এখনো অপরিসীম।

অল্প পরিশ্রম ও অধিক লাভের নিশ্চয়তায় অনেকেই ট্র্যাডিশনাল কৃষি কাজ ছেড়ে দিয়ে ‘ঢাকায় টাকা ওড়ে’ ধারণার বশবর্তী হয়ে বহু ভাগ্যান্বেষী মানুষ জীবিকার তাগিদে শহরমুখী হয়েছিল এবং এখনও হচ্ছে না সেটা সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। অনেকে বৈধ ও অবৈধ উপায়ে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। তবে ইদানিং শহরের মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবি শ্রেণির ব্যাপকহারে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। করোনার কারণে চাকরি হারিয়েছেন অনেকে। যারা ফুটপাথে ব্যবসা কিংবা বাসা বাড়িতে কাজ করতেন তাদেরও নেই কোনো কাজ। দীর্ঘদিনের বেকারত্ব ও আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় বাসাভাড়া দেয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন অনেকে। ফলে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইট-পাথরের শহর ঢাকায় আসা লোকজন এবার দুর্ভাগ্য নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে। প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা যাচ্ছ মালপত্র ভর্তি বাহনে করে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। তাদের মধ্যে কেউ দিনমজুর, কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কেউ গার্মেন্টস শ্রমিক, ছাত্র-প্রাইভেট শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

জীবন ও জীবিকার সংকট দেখা দেয়ায় শহর ছেড়ে মানুষ গ্রামে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। গ্রামে গিয়ে এরা কি করবে? এই মানুষকে ধারণ করার জন্য আমাদের গ্রাম কী প্রস্তুত?
ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২ হাজার ৩৭১ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে ব্র্যাক মে মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এতে দেখা যায়, ৩৬ শতাংশ লোক চাকরি বা কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। ৩ শতাংশ লোক চাকরি থাকলেও বেতন পাননি। আর দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের ৬২ ভাগই কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। করোনার কারণে ১০টি জেলার মানুষের আয় কমে গেছে। ঢাকা জেলার মানুষের আয় কমেছে ৬০ ভাগ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)তথ্য মতে করোনাভাইরাসের প্রভাবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত সারা দেশের প্রায় এক কোটি লোক কাজ হারিয়েছেন। আর তৈরি পোশাক খাতে কাজ হারিয়েছেন এক লাখ লোক। প্রতিদিন পোষাক খাতে কাজ হারাচ্ছেন ৫ শতাধিক।(তথ্য সূত্র: প্রথম আলো)

গ্রামে ফিরে যাওয়া বেশিরভাগ মানুষগুলো আবার কৃষি কাজেই মনোনিবেশ করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। শহরে আসার আগে সম্ভবত তারা এ পেশায় নিয়োজিত ছিলো। কেউবা নতুন করে কোন পেশায় যুক্ত হবেন। সে পেশাগুলো হতে পারে মুদি দোকান,ছোট পরিসরে খাবার দোকান, পশু পালন কিংবা মাছ চাষ। কিন্তু একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে গ্রামে বসবাসকারী মানুষ জন কৃষিকাজসহ অন্যান্য কাজগুলো করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। নতুন করে যুক্ত হওয়া মানুষের কারণে সেখানে কৃষি শ্রমিকের আধিক্য দেখা দিতে পারে। ফলে কৃষি শ্রমিকের মজুরী কমে গিয়ে আয় কমে যেতে পারে। বিপরীত দিকে অধিক শ্রমিকের কর্মক্ষমতাকে ব্যবহার করে উৎপাদন বেড়ে যাবে। কিন্তু বাজার ব্যবস্থার ত্রুটির কারনে উৎপাদন বৃদ্ধির সুফল প্রান্তিক কৃষকের কাছে পৌছাবেনা।

মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের কারণে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন চাষিরা। পাইকারদের সঙ্গে সরাসরি ব্যবসায়িক সংযোগ গড়ে না ওঠার কারণে ফলন ভালো হলেও কৃষকরা প্রকৃত দাম পান না। এ ছাড়া কৃষিপন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের উৎপাদন মৌসুমে পুরো ফসল বাধ্য হয়েই কম দামেই বিক্রি করে দিতে হয়। কৃষকের উৎপাদিত ফসল মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা পানির দরে কিনে তিন থেকে চারগুণ বেশি দামে বিক্রি করেন ঢাকাসহ বিভিন্ন বাজারে।একারণে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পন্য ক্রয়ের সুযোগ এবং সরকারী অথবা বেসরকারী ব্যবন্থাপনায় পন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা না গেলে কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হবে না।আর পরিবর্তিত এ সময়ে এ দুটি বিষয়ে নজর দেওয়ার পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে নতুন ফসল উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, আত্নকর্মসংস্থানমুখী প্রশিক্ষণ ও স্বল্প সুদে জামানত বিহীন ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

শুধুই কি শহরের মানুষ গ্রামে ফিরছে? বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরাও তো কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসছেন। তাদের গন্তব্যও তো সেই গ্রাম। তারা কী করবে? উত্তর সেই একই, কৃষিকাজ নতুবা কোন ছোট ব্যবসা। ফলাফল দাড়াচ্ছে প্রচুর কর্মক্ষম মানুষের অবস্থান হতে যাচ্ছে গ্রামে। কৃষি নির্ভর আমাদের অর্থনীতির কারণে এর প্রভাব সমাজ কাঠামোতে সাথে সাথে প্রভাব ফেলবেনা। তবে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এই শ্রমশক্তিকে কাজে লাগাতে না পারলে বেকারত্ব ও দারিদ্র হাতে হাত ধরে এগিয়ে আসবে। তখন অনেকের জন্য গ্রামে টিকে থাকার লড়াই শহরের চেয়েও জটিল ও কঠিন হতে পারে।

২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনকালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৩০ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে।সেই লক্ষ্যে ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। করোনার ফলে উল্লিখিত হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে। তবে কাংখিত লক্ষে পৌঁছাতে দারিদ্র্ নির্মূল করতে হবে– সবার জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। নগরের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে প্রতিটি গ্রামে। ৮৭,২২৩টি গ্রামকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেই এ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। এজন্য গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচিকে সাফল্যমণ্ডিত করতে হবে।

লেখক: মো:কামাল হোসেন
গণসংযোগ কর্মকর্তা

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

ডিসেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« নভেম্বর    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।