সজ্ঞিব দাস, গলাচিপা , পটুয়াখালী।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধসহ কয়েকশ কোটি টাকার সম্পত্তি চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের হাতে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবশালীরা এসব সম্পত্তি যুগের পর যুগ দখল করে রেখেছেন। তারা এসব জায়গায় স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া আদায় ও বিক্রি করছেন। অন্যদিকে বেড়িবাঁধে পাকা স্থাপনাসহ গড়ে উঠেছে হাটবাজার। গলাচিপা পৌরসভাও পাউবোর বাঁধে স্টল নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে কিচেন মার্কেটও।অনুসন্ধানে জানা যায়, বেড়িবাঁধের রিভার ও কান্ট্রি সাইডের স্লোপে নির্মিত স্থাপনা থেকে কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আদায় করা হচ্ছিল। পাউবোর মহাপরিচালকের নির্দেশে বর্তমানে একসনা ডিসিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বন্ধ রয়েছে। রাজস্ব আদায় না করায় এসব সম্পত্তি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অবৈধ দখলে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাধীনতা-উত্তর এবং পরবর্তী সময়ে গলাচিপা উপজেলায় পাউবো ৫৫/১ পোল্ডার নিয়ে ডাকুয়া, গলাচিপা সদর, রতনদি তালতলী ও পানপট্টি ইউনিয়ন নিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ পোল্ডারের আওতায় গলাচিপা পৌর এলাকায় প্রায় ৫ কিলোমিটারে প্রচুর বাণিজ্যিক ও আবাসিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি গলাচিপা শহরে বেড়িবাঁধের ১২ ফুট প্রস্ত ও ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি জায়গা ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। বেড়িবাঁধের বেশ কিছু স্থানে বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় আকাশচুম্বী দামে হস্তান্তর হচ্ছে জমি ও স্থাপনা। সদর ইউনিয়নের পক্ষিয়া ও বোয়ালিয়া এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার, একই ইউনিয়নের ডাকুয়া ব্রিজ বাজার ও রতনদি তালতলী ইউপির উলানিয়া বন্দরে প্রায় দুই কিলোমিটার, আমখোলা ইউনিয়নের ৪৩/২বি পোল্ডারের আমখোলা বন্দর, গোলখালী ইউপির ৪৩/২সি পোল্ডারের সুহরী ব্রিজ বাজার, হরিদেবপুর, কালিরচর, জুলেখা বাজার, ৫৫/২ বির গজালিয়া ও কলাগাছিয়া ইউপির কলাগাছিয়া বন্দর, খারিজ্জমা বাজার, ৫৫/২ সির চিকনিকান্দি বন্দর, ৫৫/৩ পোল্ডারের চরকাজল ও চরবিশ্বাসের চরকাজল লঞ্চঘাট বাজার ও নোমোর স্লুইস বাজারে পাউবোর সম্পত্তিতে শতাধিক বন্দর, হাটবাজার গড়ে উঠেছে। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাউবোর এসব সম্পত্তি থেকে স্থাপনা ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় জমিগুলো দখল হয়ে যায়। এ ছাড়া বেড়িবাঁধ নির্মাণে মাটি কাটতে অধিগ্রহণ করা কয়েক হাজার একর জমিও বেহাত হয়ে গেছে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান জানান, দিয়ারা ভূমি জরিপের কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশ কিছু জমি ব্যক্তি মালিকানায় এবং কিছু ব্যক্তি মালিকানার জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নামে রেকর্ড হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এটি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ডিসিআর দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে না। নানা অনিয়মের অভিযোগের কারণে একসনা ডিসিআর বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, প্রচুর অবৈধ দখলদার আছে। তাদের নামে নোটিশ করা হয়েছে। আরও কিছু নোটিশ প্রক্রিয়াধীন আছে। ডিসি অফিসে নোটিশের তালিকা দেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হবে। এর পরই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে।