জুলাই ১৪, ২০২০
নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশে দেশে দীর্ঘ লকডাউন ক্ষতিগ্রস্ত করছে ব্যবসা-বাণিজ্যকে। তবে এশিয়ার মধ্যে মহামারীর কঠিততম রুদ্র রূপটি দেখল ছোট্ট ধনী নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। এশিয়ার ‘শাইনিং স্টার’ খ্যাত এই দেশটির অর্থনীতি গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এসে পড়েছে বড় ধরনের মন্দায়, যা দেশটির ইতিহাসে বৃহত্তম।
সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি ঠিক আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৪১ দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংকোচন।
কর্তৃপক্ষ পূর্বাভাস দিয়েছে, ১৯৬৫ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এটাই হতে চলেছে সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দা।
করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বের অর্থনীতির ওপর দিয়ে কতটা ধকল যাচ্ছে যা সিঙ্গাপুরের চিত্র দেখলেই উপলব্ধি করা যায়।
সরকারি তথ্য বলছে, বছর থেকে বছর হিসাবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে সিঙ্গাপুরের জিডিপি সংকুচিত হয়েছে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ।
লকডাউনে অবরুদ্ধ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির তথ্য যেসব দেশ প্রকাশ করেছে তাদের মধ্যে অন্যতম সিঙ্গাপুর। তাতে দেখা গেল, সিঙ্গাপুরের বিধ্বস্ত অর্থনীতিই বলছে মহামারীতে গোটা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর দিয়ে কী ঝড় যাচ্ছে!
সিঙ্গাপুরের প্রত্যাশার চেয়েও খারাপ অর্থনীতি বলছে, বছরব্যাপী হিসেবে জিডিপির পতন হয়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ, আর প্রান্তিকের হিসাবে আগের প্রান্তিকের চেয়ে পতন হয়েছে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ।
ক্রমেই গভীরতর হতে থাকা মন্দা অবশ্য এটাও ইঙ্গিত দিচ্ছে, এশিয়ার অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির ওপর মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে মহমারী। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় তা সিঙ্গাপুরের রফতানি-নির্ভর ম্যানুফ্যাকচারিং, নির্মাণ শিল্প ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
তথ্য বলছে, আগের তিন মাসের তুলনায় দ্বিতীয় কোয়ার্টারে এসে জাপানের জিডিপি সংকুচিত হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। যদিও এ সপ্তাহের চিত্র বলছে, চীনের অর্থনীতি নতুন করে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে রয়েছে।
সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক মন্দার এই চিত্র আরো বেশি চাপে ফেলতে চলেছে ক্ষমতাসীন পিপলস অ্যাকশন পার্টিকে। গত সপ্তাহের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করলেও তাদের ৫৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে দেখা গেছে।
অবশ্য সরকার জনগণকে তুষ্ট রাখতে এরই মধ্যে ব্যবসায়ী ও অধিবাসীদের সাহায্যার্থে ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা দেশটির মোট জিডিপির ২০ শতাংশ।
সিঙ্গাপুর অবশ্য ‘সার্কিট ব্রেকার’ নাম দিয়ে ১ জুন থেকে লকডাউন শিথিল শুরু করেছে। নগররাষ্ট্রটি অর্থনীতি খুলে দেয়ার দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করেছে ১৯ জুন, যা অধিকাংশ দোকানপাট ও রেস্টুরেন্টকে ব্যবসা চালু করার সুযোগ করে দিয়েছে। যদিও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম বহাল রয়েছে।
সূত্র: বিবিসি