• ঢাকা
  • বুধবার, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
করোনার কারণে পেশা বদলাচ্ছেন সুনামগঞ্জে বাউলরা

দীর্ঘ ৯ মাস যাবত বাউল গান বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সুনামগঞ্জের হাজারও বাউল শিল্পী। গানের আসর না থাকায় হাওরে মাছ ধরে মুদি দোকান দিয়ে সবজি বিক্রি করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।

বাউলদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা কারণে চলতি বছরের মার্চ মাসের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কোথাও কোন বাউল গানের আসর বসেনি। আসর না বসায় আয়-রোজগার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে তাদের। অথচ স্বাভাবিক সময়ে বছরের নভেম্বর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিভিন্ন মাজারে মন্দিরে গ্রামবাসীর আয়োজনে  সৃষ্টিতত্ত্ব বিচ্ছেদ, দেহতত্ত্ব, নবীতত্ত্ব, সংসার তত্ত্ব, নিগুড়তত্ত্ব, কৃষ্ণলীলা, ভাণ্ডারী, রাধা বিচ্ছেদ, কামতত্ত্ব পালাগান, সারি গান জারি গান বাউল গানের আসর গান গেয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা।
সুনামগঞ্জ জেলা বাউল কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাউল শাহজহান বলেন, তার সমিতিতে সাতশো পঞ্চাশের অধিক তালিকাবদ্ধ বাউল শিল্পী রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত বাউল। দীর্ঘ ৯ মাস যাবত জেলার প্রায় এক হাজার বাউল আসরেও গান পরিবেশন করতে পারছেন না। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়ে তারা বিভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ হাওরে মাছ ধরে, মুদি দোকান দিয়ে, সবজি বিক্রি করে সামান্য আয়-রোজগার দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। সরকারে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় অনেক বাউল শিল্পী আসেননি। এভাবে চলতে থাকলে ভাটি এলাকার ঐতিহ্যবাহী বাউল গান এক সময় হারিয়ে যাবে।

সংগঠনের তালিকাভুক্ত বাউল শিল্পীদের মধ্যে গোলাপ শাহ, রিয়াজ মিয়া, আলমাছ আলী, আব্দুল করিম, জিয়াউর রহমান, আব্দুস সোবাহানসহ ৭ জন অন্ধ  ও দুই জন পঙ্গু বাউল শিল্পী রয়েছেন। বেঁচে থাকার তাগিদে সাময়িক পেশা বদল করেছেন, বাউল হীরামোহন মুদি দোকানদার, জামাল উদ্দিন হকার, শুক্কুর আলী ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালক, কৃষ্ণপদ দাস মুদি দোকানদার, মঙ্গল মিয়া, আবু হানিফ, আব্দুর রহিম হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সংগঠনের সহ সভাপতি বাউল হীরা মোহন বলেন, এসময় হাওর এলাকার গ্রামগুলোতে বাউল গানের আসরে গান পরিবেশন করে সময় কাটতো বাউলদের কিন্তু করোনা ভাইরাস আসার পর থেকে বাউল শিল্পীরা বেকার দিনযাপন করছেন।
একটি বাউল গানের আসরে ঢোল, হারমনিয়াম, বেহালা, বাঁশি দোতারাসহ ৫ থেকে ৬ জন বাদ্যযন্ত্রী সঙ্গত করতেন। গানের আসর বন্ধ থাকায় তারাও বেকার হয়ে পড়েছেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে শিল্প ও লোকজ সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ সুনামগঞ্জ জেলার লোক সংস্কৃতির ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও ধারাবাহিকতা রক্ষায় বাউল শিল্পীসহ তাদের গান নিয়ে গবেষণা, প্রতিযোগিতা ও গানের রেকর্ডিং প্রকাশসহ বাউল শিল্পী গনের ডাটাবেইজ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সদর উপজেলার সাদকপুর উচারগাও কলিম শাহ বাউল সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লন্ডন প্রবাসী বাউল আবুল আজাদ বলেন, তাদের সংঘটনের পক্ষ থেকে বাউল শিল্পীদের মধ্যে নগদ অর্থ চাল সহ বিভিন্ন সাহায্য করা হয়েছে। তবে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সকল বাউলকে সহযোগিতা করা সম্ভব নয়। এ কাজে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে।
সংগঠনের উপদেষ্টা মো. আব্দুল হান্নান বলেন, গেল ৯ মাসে এলাকার বাউল শিল্পীদের কলিম শাহ বাউল সংঘের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী, চালসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে বাউল গানের আসর বন্ধ থাকলে জেলার বাউল শিল্পীরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
জেলা সংস্কৃতি বিষয়ক কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী বলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৯০ জন শিল্পীকে নগদ ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়া বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য একটি চাহিদা পত্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। গেল বন্যা ঈদ ও নববর্ষেও সময় শিল্পীদের সহযোগিতা করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় অনেক বাউল শিল্পীকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জিআর চালসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েব এর কারণে স্বাস্থ্য বিধি মেনে বাউল গানের আসর বসানোর অনুমতি এখনই দেয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।