চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি ঃ-
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার সেই নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম তার ব্যাংক হিসাবে গচ্ছিত প্রায় ২৪ লাখ ঘুষের টাকা বৈধ অর্থ বলে
চালিয়ে দিতে টালমাতাল অজুহাত দাড় করিয়ে চলেছেন। এ বছর ইউপি নির্বাচন চলাকালীন সময়ে উক্ত অফিসার প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ
টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগটি তদন্তধীন রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা হলেন-বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব (সংস্থাপন-১) মোঃ
জিলহাজ উদ্দিন ও জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান। তদন্ত কর্মকর্তারাউপজেলা নির্বাচন অফিসারের ব্যাংক হিসাব তলব করে সোনালী ব্যাংক, উপজেলা শাখায় উক্ত অফিসারের হিসাবে প্রায় চব্বিশ লাখ টাকা গচ্ছিত পেয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তারা ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার উৎস্য জানতে চেয়ে চিঠি দিলে উক্ত
নির্বাচন অফিসার চব্বিশ লাখ টাকাই তার পারিবারিক লেনদেনের অর্থ বলে চালিয়ে দেওয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমনকি, ঘুষের টাকা জব্দ হওয়ার ভয়ে
নির্বাচন অফিসার গত ৬ ফেব্রুয়ারী ব্যাংকে গচ্ছিত চব্বিশ লাখ টাকার মধ্যে থেকে তার স্ত্রী ফেরদৌসী বেগমের ব্যাংক হিসাবে বিশ লাখ টাকা ট্রান্সফার
করেছেন বলেও জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, গত ২৮ নভেম্বর অত্র উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলে পর থেকে কারনে অকারনে বিভিন্ন প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহন করতে
থাকেন উপজেলা নির্বাচন অফিসার। ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের ভুক্তভোগী নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী
আহসানুল হক মামুন ও একই ইউপি’র ০১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রাথর্ী আব্দুর রউফ উপজেলা নির্বাচন অফিসারের বিরুদ্ধে উর্দ্ধতন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ
করেন। পরে নির্বাচন অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগটি তদন্তধীন থাকলেও উপজেল সোনালী ব্যাংক শাখায় জমাকৃত ঘুষের কালো টাকা সাদা করতে তিনি মরিয়া
হয়ে ওঠেছেন বলে জানা গেছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সোনালী ব্যাংক শাখায় একটি হিসাব রয়েছে। এ ব্যাংক হিসাবে ২০২১
সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিক থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দফায় প্রায় চব্বিশ লাখ টাকা জমা করা হয়েছে। উপজেলার ইউপি নির্বাচন চলাকালীন সময়ে
দেড় লাখ, দুই লাখ বা এক লাখ টাকা করে উক্ত হিসাবে অর্থ জমা রাখা হয়েছে।
নির্বাচনকালীন সময়ে এক লাখ বা আশি হাজারের মত ছো্ট্ট ঘুষের টাকাগুলো নির্বাচন অফিসের কর্মচারী দিয়ে ব্যাংক হিসাবে জমা করেছেন এবং দুই লাখ
বা আড়াই লাখের মত বড় অংকগুলো তিনি নিজেই জমা দিয়েছেন বলেও জানা যায়।
এ ব্যপারে সোমবার উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “ আমার শ্বশুর আমার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিল। সেই পাওনা টাকা আমাকে ফেরত দিলে উক্ত টাকা আমি ব্যাংকে জমা কারার পর আবার আমার স্ত্রীর হিসাবে ট্রান্সফরক রেছি। তিনি আরও বলেন, আমার ব্যাংক হিসাবের খবর সাংবাদিকরা জানলো কিভাবে ? আমি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ইলিগেশন দিবো”।
আর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্র জানায়, “ আজকাল ব্যাংক হিসাবগুলো অনলাইন হওয়াতে গোপন রাখার সুযোগ নেই, বাংলাদেশের যেকোনো সোনালী ব্যাংক শাখায় গিয়ে অনলাইন হিসাব নাম্বার সার্স দিলেই সব তথ্য পাওয়া যায়”।
অভিযোগ রয়েছে, অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তারা নির্বাচন অফিসারের ব্যাংক হিসাব তলব করার পর গত ৬ ফেব্রুয়ারী উক্ত নির্বাচন অফিসার ব্যাংকে গচ্ছিত ঘুষের চব্বিশ লাখ টাকা জব্দ হওয়ার ভয়ে তার স্ত্রীর একাউন্টে বিশ লাখ টাকা ট্রান্সফর করেছেন। উপজেলা নির্বাচন অফিসারের স্ত্রী হলেন মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ফেরদৌসী বেগম। সোমবার তার স্ত্রী ফেরদৌসী বেগমের কাছে তথ্য জানতে চেয়ে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিপ করে সাংবাদিকের পরিচয় পেয়েই ফোন কেটে দেন। পরে বার বার ফোন দেওয়ার পরও তিনি আর ফোন রিসিপ করেন নাই”।