• ঢাকা
  • শনিবার, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
আজ কবি সমর চক্রবর্ত্তীর জন্ম দিন

কাজী হাসান ফিরোজ :
সমর চক্রবর্তী দুই বাংলার সাহিত্যাঙ্গনের একটি পরিচিত মুখ। তিনি তাঁর দৃষ্টিনন্দন চেহারা বা সুন্দর আচরণের জন্যে পরিচিতি লাভ করেননি, তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন মৌলিক সাহিত্য কর্ম দিয়ে।
নব্বই দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি সমর চক্রবর্তীর ব্রত সাহিত্য চর্চা। সাহিত্যই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। সহিত্যের নেশায় তিনি কর্ম জীবনে থিতু হতে পারেননি। সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসায় তিনি অবলীলায় পায়ে দলেছেন সোনার হরিণ সরকারি চাকরির অফার। বারবার ছেড়েছেন, প্রথম শ্রেণির বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার লোভনীয় উচ্চ পদ। বিভিন্ন সময়ে দৈনিক ইত্তেফাক গ্রুপে, দৈনিক আজকের কাগজ, সর্বশেষ দৈনিক আমাদের নতুন সময় সহ গ্রুপের চারটি নিয়মিত প্রকাশিত পত্রিকার ভাষা ও বার্তা সম্পাদকের পদটি ছেড়ে দিলেন শুধু কবিতার জন্যেই। তাঁর বক্তব্য ” চাকরির ফাঁকে অন্য কাজ করা যায়, সেটা সাহিত্য কর্ম নয়। সাহিত্য কোনো সাধারণ কর্ম নয়, এটা একটা সাধনা। চাকুরি, সাহিত্য কর্মের সাথে সাংঘর্ষিক।”
সমর চক্রবর্তী সার্বক্ষণিক কবি। তাঁর পরিবার বারোমাস অভাবের সাথে সহবস্থান করেও কবির কাছে প্রতিদিন কবিতা প্রার্থনা করে। পরিবার ও নতুন প্রজন্মের কবিদের জন্যে সমর চক্রবর্তী সময়ের সাথে, সাহিত্যের অগ্রগামী পাঠকের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে কবিতার বাক বদল করান দক্ষ নাবিকের মতো। কখোনো কখোনো তিনি নিজের পছন্দের বাকে ভ্রমণ করান পাঠকদের।
সমর চক্রবর্তী একজন সব্যসাচী লেখক। সাহিত্যের সব শাখারই বোদ্ধা পরিব্রাজক তিনি। লেখকরা লেখেন শুধু পাঠকদের জন্যে। আর তিনি সমসাময়িক লেখকদের জন্যেও লেখেন। তিনি পাঠককে দক্ষ সারথি’র মতো সাহিত্যের দুর্গম পথে টেনে নেন। তারপর তাদেরকে সাহিত্যের সৌন্দর্য উপভোগ করানোর মাধ্যমে সে পথে আটকে রাখেন। সমর চক্রবর্তী নিজের ভালো লাগাকে পাঠকদের মধ্যে বিতরণ করেন। তাঁর কাছে যেটা সাহিত্য মান হিসাবে অখাদ্য মনে হয়, তিনি তা পাঠককে কুইনানের মতো জোর করে গিলাতে চাননা। কবি জীবনানন্দের ভাষায় সবাই কবি নয়, কেউ কেউ কবি। সেই কেউ কেউ এর একজন সমর চক্রবর্তী।
কবিরা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু বেশি মানবিক। কবিরাও মাঝে মাঝে অন্যের অমানবিক কর্মে আবেগ তাড়িত হয়ে প্রতিবাদের নান্দনিক পথ খোঁজেন। ‘৯০ সালে একদল ধর্মীয় উগ্রবাদী মানুষের নারকীয় তান্ডল ঠেকাতে কবি সমর চক্রবর্তী তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকর্ম প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রক্ষেপণের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন নিজে আত্মাহুতি দিতে। তাঁকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম, এই অজ্ঞ, এই অকৃতজ্ঞ জাতি এ প্রতিবাদের মর্মার্থ বুঝবে না। তারা এর প্রতিদান দেবার পরিবর্তে আরো প্রাণ সংহারে মত্ত হয়ে উঠবে। সমর চক্রবর্তী জাতির জন্যে নিজের সৃষ্টিকর্ম বিসর্জন না দিলেও জাতির কল্যানে নিজেকে সমর্পণ করেছেন।
সমর চক্রবর্তী এ পর্যন্ত ১২ টি মৌলিক গ্রন্থ উপহার দিয়েছেন। তাঁর অধিক পঠিত বইগুলো দিগন্তের স্বপ্নারোহী, আদিম অশ্বের পিঠে, নক্ষত্র মরে মরে গ্রহ হয়ে যায়, কংকালে কুরচি ফুল, অন্ধকার ডানার মানুষ, সমর চক্রবর্তীর কবিতা, রঙিন স্বপ্নের বাসিন্দারা(গল্প গ্রন্থ) । তাঁর লেখা ভূষণা রাজ্যের ইতিহাস গ্রন্থটি আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থের তালিকায় একটা মাইল ফলক। তাঁর এ গবেষণা কর্মটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপকগণের প্রসংশা লাভে সক্ষম হয়েছে।
আজ ১৫ মার্চ বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী লেখক সমর চক্রবর্তীর জন্মদিন। তাঁর জন্মদিনে শুভ কামনা ও ফুলেল শুভেচ্ছা।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

অক্টোবর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« সেপ্টেম্বর    
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।