• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ডাকবাক্স, কদর নেই ডাকপিয়নের

সনতচক্রবর্ত্তী :তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়নে এক সময়ের যোগাযোগের বিশ্ব সমাদৃত অন্যতম মাধ্যম ডাক ও ডাকপিয়ন আজ বিলুপ্তির পথে। কয়েক বছর আগেও প্রিয়জনের একটি চিঠির জন্য ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডাকপিয়নের অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকতেন স্বজনরা।ওই বুঝি তোমার চিঠি এলো। একসময় মানুষ অপেক্ষায় থাকতো ডাকপিয়নের গলার আওয়াজের। এই বুঝি এলো প্রিয়জনের চিঠি। এখন আর সে অবস্থা নেই।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাপকের কাছে তার কাঙ্খিত চিঠিপত্র, টাকা-পয়সা ও নথিপত্র যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছে দিতেন ডাকপিয়ন । পাশাপাশি যারা আত্মীয়-প্রিয়জনের কাছে চিঠিপত্র বা কোনো সাধারণ ডকুমেন্ট পাঠাতে তারা ছুটে যেতেন লাল রঙের কাঙ্খিত ডাকবাক্সের (চিঠির বাক্সের) কাছে। ডাকপিয়ন এসব বাক্স থেকে জমা হওয়া ডাকগুলোর বিকেলে নিয়ে ডাকঘরে ফিরে যেতেন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে আপনজনের কাছে লেখা চিঠি পোস্ট করতে পারলেই যেন স্বস্তি। তখন ডাকবাক্সগুলোও লাল রঙে রাঙিয়ে বেশ যত্নে রাখা হতো। সে সময় ডাকবাক্সে চিঠিপত্র যাতে রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট না হয় সেজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থাও করা হতো।
এখন আর মানুষের মধ্যে নাড়া দেয় না ডাকপিয়নের বাইসাইকেলের বেলের আওয়াজ। তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন হাতের মুঠোয়। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে মুঠোফোন ও ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে মুহূর্তের মধ্যেই যোগাযোগ সম্ভব এখন। এখন ডাকঘর চালু আছে আর ডাক বিভাগে চিঠি আসছে। ডাকপিয়ন আসা চিঠি মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিলেও তার হার নেই বললেই চলে। আত্মীয়-স্বজন, প্রিয়জনের চিঠির জন্য এখন আর ডাকপিয়নের অপেক্ষায় থাকতে হয় না। আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রসরতায় গুরুত্ব হারাতে বসেছে ডাকঘর। তাই অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ডাকবাক্স, কদর নেই ডাকপিয়নের। একসময় মানুষ অপেক্ষায় থাকতো ডাকপিয়নের গলার আওয়াজের। এই বুঝি এলো প্রিয়জনের চিঠি। এখন আর সে অবস্থা নেই।

এক সময় প্রাপকের হাতে বিদেশি বা কোনো চিঠি তুলে দিতে পারলেই পিয়নকে সম্মানী দিয়ে খুশি করা হতো। শুধু চিঠি নয়, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে কাগজপত্রের জন্যও ডাক পিয়নকে খুঁজতে হতো মানুষকে। কালের বিবর্তনে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন, আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহারে এখন প্রিয়জনের কোনো খবরের জন্য ডাকপিয়নের পথ চেয়ে থাকতে হয় না। বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে প্রান্তে প্রিয়জন থাকুক না কেন মুহূর্তের মধ্যে তার সংবাদ নেওয়া যায়। আর সে কারণে মানুষের কাছে এখন আর ডাকপিয়নের তেমন কদর নেই।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারীর ডাকঘরের পোস্টমাস্টার বলেন, ডাকঘরগুলো যদি ই-তথ্য কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয় তাহলে মানুষকে অধিক সেবা দেওয়া যেতো। ডাক ঘরে মানুষের চলাচল থাকতো।
ডাকঘরে এখন আত্মীয়-স্বজনের চিঠি বেশি না এলেও সরকারি নথিপত্র, নোটিশ ও চিঠিপত্র আসে বলে জানান তিনি।
জেলার মধুখালি বাজার থেকে কথা হয় নাছির মোল্লার সাথে, তিনি বলেন, কোথাও কোথাও ২/১টি ডাক বাক্স চোখে পড়লেও সেটিতে আর কেউ চিঠিপত্র পাঠান না। ফলে ডাক বাক্স গুলো অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এখন আর কেউ ডাক বাক্সের মাধ্যমে তেমন চিঠিপত্র লেনদেন করেন না। কিন্তু তারপরও নিয়মানুযায়ী ডাক পিয়নরা গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ডাক বাক্স গুলো খুলে থাকেন।
এতকিছুর পরেও সেই ডাক পিয়নের অপেক্ষায় থাকা সময়গুলো অনুভূতিতে নাড়া দেয় প্রায় সকল মধ্যবয়সিদের কাছে। বর্তমান প্রজন্মের মানুষ এই ডাক পিয়নের বা চিঠির কথা ভুলে গেছেন। আর ভুলে গেলেও বা কি হবে? সেই স্বর্নালী দিন তো আর ফিরে আসবে না, আসবেনা আর হাতে লেখার চিঠির যুগ, যেতে হবে না চিঠির বাক্সের কাছে । এমন আফসোসের সুর অনেক মানুষের মুখেই।
এরূপ করুণ অবস্থার কারণে ডাক বিভাগের প্রতি আস্তা ও বিশ্বাসও হারিয়ে ফেলেছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় ডাক বিভাগের পুরাতন ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আধুনিকরণের দাবি জানিয়েছেন অনেকে ।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মার্চ ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ফেব্রুয়ারি    
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।