ছয়টি ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম কালের জৈষ্ঠ মাসকে বলা হয় মধুমাস।মধুর মত ফল এই মাসে পাওয়া যায়।
আজ মধুমাস জৈষ্ঠ্যের আগমন। আজ শুক্রবার মধুমাসের প্রথমদিন। এরইমধ্যে হরেক ফলের সমারোহ দেখা দিয়েছে বাজারে। রাজশাহীতে এবার পাকা আম সঙ্গে নিয়ে এলো মধুমাস। কারণ আজ থেকেই বাজারে মিলবে পাকা আম। তবে করোনাকালে এবার হাজারো ফলের জৌলুস যেন ম্লান হতে চলেছে। বাজারে এরইমধ্যে হরেক ফলের সমারোহ থাকলেও প্রাণঘাতি করোনার কারনে এবার ক্রেতা নেই তেমন।
এ মাসে হরেক ফলের সমারোহ ঘটে। যথারীতি গাছে গাছে পাক ধরতে শুরু করেছে আম, জাম লিচুসহ হাজারো ফল-ফলাদি। মধুমাসের শুরুতেই ইতিমধ্যে রাজশাহী অঞ্চলের বাজারে এসেছে অনন্য রসালো ফল লিচু। আজ থেকেই মাঠে আসবে আম।
করোনা সংকটের মধ্যেই নতুন ধান কেটে শুকিয়ে গোলায় তুলছেন কৃষক। এরইমধ্যে বাগানে বাগানে গাঢ় সবুজ আমে সিঁদুরের রঙ ধরতে শুরু করেছে। সবকিছু যেন মনে করিয়ে দেয়, এটি মধুমাস। বাহারি আর পুষ্টিকর সব ফলের প্রাচুর্য এই সময়টিকে দিয়েছে মধুমাসের মহিমা। তবে এবার সে মহিমার অনেকটাই মুষড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
আম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুল, তরমুজ, পেয়ারাসহ আরও নানা বাহারি ফলের স্বাদ আর রঙের ছোঁয়ায় বাঙালির রসনা তৃপ্ত হয় এ মাসে। ফল উৎসবের প্রস্তুতি চলে এই সময়ে। শুধু ব্যতিক্রম এবার। কোথাও নেই এমন প্রস্তুতি। তবে ঘরে ঘরে পারিবারিকভাবে প্রস্তুতি চলছে।
সাধারণত এ অঞ্চলের মধুমাস মানেই ঘরে ঘরে ফল উৎসব। ঘরে আমন্ত্রন জানানো হয় জামাই-মেয়েকে। নতুন জামাইয়ের বাড়িতেও পাঠানো হয় আম, কাঠাল, লিচুর উপহার। তবে এবার এসব কিছুর বালাই নেই। করোনার কারণে তাই এবার ভুলে থাকতে হবে ফল উৎসব।
গ্রাম বাংলায় ঋতু বদলের মধ্য দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ গন্ধ অনুভব ও পরিতৃপ্ত করে আমাদের। এই ষড়ঋতুর মধ্যে একটি গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মকাল নিয়ে আসে সুমিষ্ট ফল-ফলাদি। বিশেষ করে আম প্রধান রাজশাহী অঞ্চলের ঘরে ঘরে আমের সুমিষ্ট গন্ধে ভরে থাকে এইমাসে। সে গন্ধের মধ্যে মধুমাসের মধুরসে মুখরিত থাকে পাড়া মহল্লা। এখন পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে আম উৎপাদন হলেও পুরনো রীতিনীতি এখনো থেকে গেছে। জ্যৈষ্ঠ মাস আসলেই গ্রামের ঘরে ঘরে অতিথি বরণের রেওয়াজ দেখা যায়। যুগযুগ ধরে এমন নিয়ম চলে আসলেই এবারই হয়তো করোনা পরিস্থিতির কারণে আগের রেওয়াজ সব স্মৃতি হয়ে যাবে। তবুও বাঙ্গালী বলে কথা। করোনা যেমন পারেনি ফল উৎপাদন আটকাতে তেমনীভাবে বাঙ্গালীর রসনাতৃপ্তিতেও হয়তো বাধা হতে পারবে না। হয়তো সংকুচিত করবে উৎসব।
নিকট আত্মীয়দের ফল দিয়ে মুখ রসালো করার পালা শুরু হয় এ মাসেই। এবার কী তার ব্যাতিক্রম হবে?। হয়ত হবে না, কারণ গাছে গাছে পাক ধরেছে আমের। আর লিচু তো বাজারে গন্ধ ছড়াতে শুরুই করেছে। তবে পুরো মাস জুড়েই হয়ত থাকবে না এবার নিকটাত্মীয় ও মেয়ে-জামাইদের আনাগোনা।
বছরের এ সময় মধুরসের সঙ্গে আলাদা আনন্দের ঢেউ বয়ে যায় রাজশাহী অঞ্চলে। নতুন ধান কাটা-মাড়াই করার ফাঁকে ফল উৎসবে যেন মেতে ওঠেন এলাকার মানুষ। আত্মীয়ের বাড়ি যেতে কিংবা অতিথি আপ্যায়নে তাই এ সময় অন্যান্য খাবারের সঙ্গে যুক্ত হয় নানা স্বাদের ফল। বিশেষ করে আম-লিচু ও কাঁঠালসহ সব রকমের ফলের নমুনা দিয়ে আপ্যায়ন করার রীতি হাজার বছর আগের। তবে সে রীতিতে এবার ছেদ ফেলতে যাচ্ছে করোনা।
হয়তো উৎসব হবে না তবে কেনাকাটা চলবে নিজ নিজ ঘরে। তাই বাহারি রঙের ফলে ছেয়ে গেছে বাজার। গ্রামের চেয়ে এখন শহরের বিভিন্ন জায়গায় দোকানিরা ফলের দোকান সাজিয়ে বসেছেন স্বল্প পরিসরে। তবে কেনাকাটা তেমন শুরু হয়নি। আজ শুক্রবার (১৫/০৫/২০)রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার, লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় হরেক ফলের সমাহার।
রাজশাহী জেলার সর্ববৃহৎ আম আড়ৎ বানেশ্বর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আম ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ছোট বড় আড়ৎগুলোতে শেষ মুহুর্তে ধোয়ামোছার কাজ চলছে। আবার কয়েকটি স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী ভাবে আড়ৎঘর।
একজন স্থানীয় আড়ৎদার বলেন, প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ শুক্রবার সকাল থেকে রাজশাহী জেলায় আম কেনা-বেচা শুরু হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় বিগত বছরের তুলনায় এ বছর বেশীর ভাগ বাগানে ব্যাপক আম ধরেছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমের তেমন চাহিদা পাওয়া যাচ্ছে না।