রাজশাহীতে মৌসুম শুরু হলেও এখনোও ভালোভাবে পাকতে শুরু করেনি আম। এতে নির্ধারিত সময়ে পুরোদমে আম পাড়া শুরু হয়নি। এদিকে, গতকাল শুক্রবার মৌসুমের শুরুতে রাজশাহীর সবচেয়ে বৃহত্তম আমের হাট বানেশ্বরে কয়েকজন চাষী অল্প পরিমাণে আম নিয়ে আসে বিক্রি করতে।
রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য মতে, জেলায় এবার আম বাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। আর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। গতকাল ১৫ মে গুটি আম ও আগামী ২০ মে থেকে গোপালভোগ নামাতে পারবেন চাষিরা। এছাড়া রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা ২৫ মে, হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ১৫ জুন এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামবে আশ্বিনা এবং বারী আম-৪ জাতের আাম। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এই সময় নির্ধারণ করা হয়।
তবে গতকাল শক্রবার মৌসুমের প্রথম দিনেও বেশিরভাগ গাছের গুটি আম পাকেনি। এ জন্য বেশিরভাগ চাষিরাও গাছের অপরিপকক্ক আম নামান নি। সকল গুটি জাতের আমগুলো আরো এক সপ্তাহে মাধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করবে। আর আবহাওয়া ভালো থাকলে বা বেশি গরম পড়লে সকল আম একটু আগে পাকার সম্ভবনা রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে বারোটায় জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বরে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র দুই ভ্যান গাড়িতে গুটি জাতের আম নিয়ে আসে চাষীরা। সাইফুল ইসলাম নামের ঐ চাষী জানান, এগুলো গুটি জাতের আম এখন পরিপক্ক হয়েছে, ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করবো।
আল-আমিন নামের আরেক চাষী জানান, বাজারে এখনো ব্যাপারি আসেনি! এই আম গুলো সামনের আড়তে দিয়ে আসবো। হাজার টাকাও প্রতি মণ আম বিক্রি হবে।
রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, প্রশাসনের নির্ধারিত সময়ে এখন কিছু গুটি আম পাকতে শুরু করেছে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে সকল আম পাকতে শুরু করবে। জেলার সকল চাষীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে প্রশাসন আলোচনার মাধ্যমে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।
এদিকে, রাজশাহীতে গতকাল শুক্রবার আম সংগ্রহের কথা থাকলেও হাট বাজারগুলোতে আম চোখে পড়েনি। পূর্বঘোষিত দিনক্ষণে আম নিয়ে আসা হয়নি বাজারে। তাই দেখা মিলেনি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। এছাড়া বাগানে চাষি-ব্যবসায়ীরাও নেই। চাষি-ব্যবসায়ীরা উভয়ে দাম নিয়ে সঙ্কায় রয়েছেন। আম ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, আম এখনো পাকেনি। এছাড়া করোনভাইরাসের এই পরিস্থিতেতে পরিবহন পাওয়া যাচ্ছে। এনিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছেন তারা।
আম চাষি রফিকুল ইসলাম জানায়, গত বছর এই সময়ে আমের ব্যাপারীরা (ব্যবসায়ী) বাগানে বাগানে আম কেনার জন্য হন্ন হয়ে ঘুরেছে। এবছর আম কেনার মতো কোন ব্যপারী নেই। ফলে আম বিক্রি নিয়ে অনেকটাই সঙ্কায় রয়েছেন তারা। যারা আমের বাগান কিনেছেন তারা বেশি বিপাকে রয়েছেন।
শুক্রবার ১৫ মে থেকে আম সংগ্রহের কথা থাকলেও চাষি বা ব্যবসায়ীদের আড়তে দেখা যায়নি। চাষিদের দাবি গুটি জাতের আম এখনো পাকেনি। তাই তারা সংগ্রহণ করতে বিলম্ব করছেন। আম পাকা শুরু হলে সংগ্রহ বড়বে। তখন বাজারে পর্যাপ্ত আম পাওয়া যাবে।
এছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়োবৃষ্টিতে আম পড়েছে। এই আম বাঘার বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা মণ। এ ধরনের আমগুলো বিভিন্ন কোম্পানি প্রতিনিধিদের কিনতে দেখা গেছে। এছাড়া গুটি পাকা আম বিক্রি করতে ব্যবসায়ী ও চাষিদের দেখা যায়।
এ বিষয়ে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাটের (বানেশ্বর হাট) ইজারাদার ওসমান আলী জানান, বাজারে গুটি জাতের পাকা আম বিক্রি হয়নি। তবে সকালের দিকে বৃহস্পতিবার রাতের ঝড়ে পড়া আম বিক্রি হচ্ছে।