• ঢাকা
  • শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
ভ্যাকসিন কেন বেশি সম্ভাবনাময় ঔষধের চেয়ে ?

ছবি প্রতিকী

কভিড-১৯-এর গতি রোধ করার জন্য একটি ভ্যাকসিন পেতে গোটা বিশ্ব মুখিয়ে আছে এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি হয়তো ২০২১ সাল নাগাদ উপলব্ধ হবে। অবশ্য একটি ভ্যাকসিন উপলব্ধ হওয়ার পরও করোনাভাইরাস হয়তো কয়েক বছর ধরে আমাদের সঙ্গে থাকবে। পাশাপাশি যারা এখনো অসুস্থ হচ্ছে তাদের সুস্থতার জন্য দীর্ঘ প্রচেষ্টার দাবিও রয়েছে।

মানবসভ্যতার সহস্রাব্দ কাল ধরে ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের ইতিহাস বলছে, ভ্যাকসিন দ্বারা প্রতিরোধ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসার চেয়ে অনেক বেশি সফল। এমনকি আধুনিক মেডিকেল বিজ্ঞান একটি ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে নিরাময় নিয়ে আসতে পেরেছে। অনেক মারাত্মক সংক্রমণের ক্ষেত্রে সেরা কৌশল হলো ড্রাগগুলোর একটি ককটেল, যা সংক্রমণের গতিতে বাধা প্রদান করে।

বিশেষজ্ঞ প্রফেসর পাওলা ক্যানন বলেন, তারা নিজে নিজে বাঁচতে পারে না, তারা স্বাধীন নয়। তারা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে না, অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না এবং মাস্টার সহায়তা সিস্টেম ছাড়া তারা জীবন্ত কোষের অভ্যন্তরে পরজীবী হওয়ার কারণে তারা নিজেদের পুনরুৎপাদন করতে পারে না।

কিন্তু ভাইরাস কেন মানুষকে অনেক বেশি সমস্যায় ফেলে? শরীরের বাইরে উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় হাত ধোয়া অনেক ভাইরাসকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু ভেতরে ইমিউন সিস্টেমের দীর্ঘ স্মৃতি দ্রুত এ কাজটি করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যখন নতুন একটি ভাইরাস সামনে আসে তখন সমস্যা শুরু হয়।

করোনাভাইরাস, যার সাম্প্রতিক রূপ হচ্ছে সার্স-কোভ-২ যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংক্রামক রোগ হিসেবে গোটা বিশ্বকে চমকিত করেছে।

এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় আশা হচ্ছে ভ্যাকসিন। যা কিনা ছড়িয়ে পড়ার আগেই সংক্রমণকে রোধ করতে পারে। ভ্যাকসিন হচ্ছে মূলত ইমিউনিটির জন্য শর্টকাট উপায়। কিন্তু আমাদের যদি ইমিউনিটি না থাকে এবং অসুস্থ হয়ে পড়ি বিষয়গুলো আরো জটিল হয়ে যাবে। কারণ ভাইরাস নিজে নিজে টিকে থাকতে পারে না।  তারা নিজের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের কোষকে হাইজ্যাক করে। এ পরজীবীমূলক নির্ভরতার কারণে প্রচলিত ওষুধ দিয়ে তাদের নিরাময় করা কঠিন। একটি ভাইরাস তার হোস্টের সঙ্গে এতটাই অন্তর্নির্মিত থাকে যে একজনকে আঘাত না করে অন্যজনকে আঘাত করা কঠিন। সার্স-কোভ-২ শ্বাসনালি ও ফুসফুসকে সংক্রমিত করে। যা কিনা আমাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খুবই জরুরি। ক্যানন বলেন, আমি ভাইরাসকে মারতে পারি, কিন্তু সেটি করার জন্য আমার আপনাকেও মারতে হবে।

কিছু ভ্যাকসিন যেমন হামের কথা বলা যায়, যা যথেষ্ট পরিমাণে হার্ড ইমিউনিটি সৃষ্টি করতে পারে, ফলে ভাইরাস আর টিকে থাকতে পারে না এবং জনগণের মাঝে ছড়াতে পারে না। তবে এক্ষেত্রে সেরা দৃষ্টান্তটি হলো গুটিবসন্ত। ভ্যাকসিনের কারণে এ রোগ মানুষের বাইরে বিলুপ্তির দিকে চলে গেছে।

সক্রিয় সংক্রমণের চিকিৎসা আবার ভিন্ন একটি বিষয়। কেবল একটি ভাইরাসের ফার্মাসিউটিক্যাল নিরাময় আছে: হেপাটাইটিস সি। এর কারণ হচ্ছে, ‘ভাইরাসকে মারা, হোস্টকে মারা’র সমস্যা। এখানে সবচেয়ে সেরা বাজিটি হচ্ছে ভাইরাসকে যথেষ্ট পরিমাণে শ্লথ করে দেয়া, যাতে শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যূহ নিজেদের কাজ করতে পারে।

এ বিষয়ে অভিজ্ঞ রিড ডিউইক বলেন, যখন আমরা ভাইরাসকে মারতে পারি না, তখন সেরা উপায় হচ্ছে তাদের প্রতিলিপি করার জায়গা থেকে রুখে দেয়া। আমরা যা করতে পারি তা হলো নিরাময় নয়, সংক্রমণ কালকে সংক্ষিপ্ত করে দিতে পারি। সংক্রমণ শেষ হয়ে গেলে রোগী নিরাময়ের চেয়েও ভালোভাবে সেরে ওঠে।

সার্স-কোভ-২ কে উদ্দেশ করে বিস্তৃতভাবে যে ওষুধটি ব্যবহূত হয় তা হলো রেমডেসিভির। যা কাজ করে ভাইরাসের প্রতিলিপি করার ক্ষমতাকে এলোমেলো করে দিয়ে। যখনই ভাইরাস কপি করার চেষ্টা করে তখন এটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এটির কার্যকারিতা অবশ্য ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল, এটি তৈরি করা হয়েছিল মূলত ইবোলার চিকিৎসার জন্য। তবে এটির কার্যকারিতা যথার্থ ছিল না।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেখিয়েছে রেমডেসিভির হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কভিড-১৯ রোগীদের দ্রুত সেরে ওঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। কিন্তু এটি নিরাময় নয় এবং দ্রুত কোনো একটি আসবে কিনা তাও মনে হয় না।

ক্যানন বলেন, শক্তিশালী ও নির্দিষ্ট ওষুধ পেতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে, যা কিনা করোনাভাইরাসকে থামাতে পারে। ওষুধ আবিষ্কারের প্রচেষ্টায় থাকা অধিকাংশই এক্ষেত্রে ব্যর্থ হবে।

ভবিষ্যতে রোগীরা সম্ভবত একটি ককটেল থেরাপি লাভ করবে, যা ভাইরাস ও অন্যদের আক্রমণ করবে, এটি তাদের স্থির থাকতে সাহায্য করবে।

এটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয় যে অনেক সংক্রমণ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বজায় থাকে। ইমিউন সিস্টেম তার কাজ করার জন্য এতটুকু সময় নিয়ে থাকে। ক্যানন বলেন, আমাদের ইমিউন সিস্টেম হচ্ছে বিশ্বের সেরা ওষুধ প্রস্তুতকারক। আপনার পাঁচ বছর বয়সে হাম হোক কিংবা ৫০ বছর বয়সে কভিড, আমাদের ইমিউন সিস্টেমের বিশাল সংগ্রহশালায় সম্ভাব্য অ্যান্টিভাইরাল পদ্ধতি রয়েছে, যা কিনা সুরক্ষা প্রদান করে।

তিনি আরো বলেন, অ্যান্টিবডি হচ্ছে সংক্রমণের সঙ্গে লড়াইকারী প্রোটিন, যা বাইরের শত্রুদের বাধা দেয়ার জন্য উত্পন্ন হয়। এটি জৈবিক ওষুধ যা আমরা নিজেরা তৈরি করি। শরীরের ক্ষমতা আছে লাখ লাখ তৈরি করার। যখন এটি কোনো ভাইরাসের সঙ্গে আবদ্ধ হয় তখন এটি সক্রিয় হয়। এরপর ১৪ দিন ধরে এর গণ-উৎপাদন চলে। ইমিউন সিস্টেম আরো শক্তিশালী হলে এটি হয়। রক্তে প্রচুর অ্যান্টিবডি রয়েছে, যা ভাইরাসকে আবরণ দেয়ার জন্য। ভাইরাসকে নিউট্রালাইজিং করার জন্য তারা দারুণভাবে কাজ করে। অবশেষে অ্যান্টিবডির জয় হয়। এ অ্যান্টিবডি কখনই পুরোপুরি তাদের প্রাথমিক স্তরের নিচে নেমে যায় না। বিপরীতে তারা বছরের পর বছর ধরে জমা থাকে এবং কাজ করতে থাকে, যদি হুমকি পুনরায় ফিরে আসে সেজন্য। যদি তা ঘটে, প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য ১৪ দিন সময় লাগে না।

ক্যানন বলেন, যদি আপনি একই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন তবে সংক্রমণ বাড়ে না, কারণ অ্যান্টিবডি তাকে বের করে দেয়। এমনকি আপনি অসুস্থও হন না। এজন্য বেশির ভাগ ভাইরাসের ক্ষেত্রে আপনি একবার আক্রান্ত হওয়ার পর ভবিষ্যতের জন্য ইমিউনিটি লাভ করতে পারেন। আর এটাই হচ্ছে সে প্রসেস যাকে ভ্যাকসিন নকল করে এবং মানবদেহকে সম্ভাব্য হুমকি থেকে রক্ষা করে।

অন্যদিকে ভাইরাসের কারণে শ্বাসতন্ত্রের যে সংক্রমণ, যাকে একসঙ্গে ‘কমন কোল্ড’ বলে ডাকা হয়। যাদের অনেকগুলো হচ্ছে করোনাভাইরাস। যে কারণে আমাদের সেসবের কোনো চিকিৎসা নেই তা হলো এগুলো খুবই স্বতন্ত্র এবং ওষুধের বিকাশ খুবই ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়।

দ্য প্রিন্ট থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।