১১ জুলাই ফরিদপুরের সদর উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার রাস্তা সংলগ্ন আখ ক্ষেতের পাশে জিয়াসমিন আক্তার(৩৫) খুন হওয়ার ঘটনার রহস্য মিলেছে।
সে পাশের মধুখালী উপজেলার কারণ্যপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। লাশ উদ্ধারের পরের দিন ১২ জুলাই,মৃতের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করার পর শুরু হয় পুলিশি কার্যক্রম। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অবশেষে পুলিশ নিশ্চিত হয় খুন হওয়া মহিলার স্বামী ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার তাম্বুলখানা গ্রামের আনোয়ার হোসেনই খুনের সাথে জড়িত । ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে খুনের পাঁচ দিনের মাথায় হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করে প্রধান খুনিকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে,ফরিদপুর পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেলের তদারকি ও সহযোগীতায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী অফিসার সহ এসআই হারুনুর রশিদ এর সমন্বয়ে গড়া একটি টিম গত ১৫ জুলাই রাতে ঢাকা ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার সহায়তায় পশ্চিম নাখালপাড়া এলাকা হতে আসামী আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। সে একজন মাইক্রোবাস গাড়ি চালক। জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ার হোসেন স্বীকার করে যে ,সে গত ১০ জুলাই বিকাল তিনটার সময় তার দ্বিতীয় স্ত্রী জিয়াসমিনকে ফোন করে ফরিদপুর আসতে বলে। আসার আগে জিয়াসমিন তার ছোট বোনকে জানায় যে,আনোয়ার সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে আম ও টাকা পাঠিয়েছে। আম ও টাকা আনার কথা বলে জিয়াসমিন বাড়ি হতে বের হয়।
ইতিমধ্যে আসামি আনোয়ার তার পরিকল্পনা মোতাবেক অন্য একজন সহযোগীসহ মাইক্রোবাসে ১০ জুলাই সন্ধ্যা অনুমান ৬.৫০ ঘটিকার সময় ফরিদপুর আলিপুর কবরস্থানের নিকট পৌঁছায়। জিয়াসমিনকে মাইক্রো বাসে উঠিয়ে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে। রাত অনুমান ১০টার দিকে মাইক্রো বাসের মধ্যে আনোয়ার জিয়াসমিনের গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে । হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ঘটনাস্থল আখ ক্ষেতের পাশে মৃতদেহ ফেলে রেখে আবার ঢাকা চলে যায়। ডিবির ওসি শহিদুল ইসলাম, মৃতের স্বামী আনোয়ার হোসেনকে মোবাইল ফোনে আম পাঠানোর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় তার বন্ধু এর মাধ্যমে ৯ জুলাই সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে ১০ কেজি আম পাঠায়।
কিন্তু ফরিদপুর সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস এর রেকর্ড পত্র ও সিসি ফুটেজ পর্যালোচনা করে এর সত্যতা পায় না পুলিশ। পরবর্তীতে ফরিদপুরে এস এ পরিবহনের রেকর্ড পত্র পর্যালোচনা করে সেখানেও পুলিশ কোন তথ্য পায়নি। বিষয়টা নিয়ে পুলিশ আনোয়ার হোসেনকে ফোন করার কারনে আনোয়ার পরিকল্পনা করে ১৩ জুলাই মৃত স্ত্রী জিয়াসমিনের নামে মহাখালী এস এ পরিবহন অফিস হতে ১০ কেজি আম পার্সেল করে পাঠায়। ফরিদপুরের এস এ পরিবহন অফিস হতে পুলিশে জানানো হয় যে জিয়াসমিনের নামের পার্সেল খুজছিলেন সেটা এসেছে। পুলিশ এস এ পরিবহন অফিসে উপস্থিত হয়ে দেখেন আম বুকিং করা হয়েছে ১৩ জুলাই। ফলে পুলিশ নিশ্চিত হয় ইয়াসমিন হত্যাকান্ডে তার স্বামী আনোয়ার জড়িত। আনোয়ার এর প্রথম স্ত্রীর গর্ভে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান আছে। অপরদিকে মৃত জিয়াসমিনের প্রথম স্বামীর ঘরে ১১ বছর বয়সের একটি কন্যা সন্তান আছে । দেড় বছর পূর্বে আনোয়ার গোপনে জিয়াসমিনকে বিয়ে করে ।এরপর তারা ফরিদপুর দক্ষিণ আলিপুর এক রুমের বাসা ভাড়া নেয়। আনোয়ার ছুটিতে আসলে জিয়াসমিন ভাড়া বাসায় থাকতো । অন্য সময় জিয়াসমিন তার বাবার বাড়িতে থাকতো।
জিয়াসমিন গত দুই মাস যাবত আনোয়ারকে তার বাড়িতে উঠানোর জন্য চাপ দিতে থাকে এবং প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিতে বলে।এর কারণে আনোয়ার জিয়াসমিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। উল্লেখ্য: গত ১১ জুলাই ফরিদপুরের সদর উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার রাস্তার পাশ থেকে জেয়াসমিন আক্তার(৩৫) নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।সে পাশের মধুখালী উপজেলার কারণ্যপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ১০ জুলাই,শুক্রবার সকালে ফরিদপুর শহরে তার আলিপুরের ভাড়ার বাসায় আসে কুরিয়ার সার্ভিসে স্বামীর পাঠানো আম নিতে।এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পায় পরিবারের লোকজন। রাতে বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন খুঁজতে থাকে তাকে। পরে স্থানীয়রা শনিবার(১১ জুলাই)সকালে মল্লিকপুর এলাকার রাস্তা সংলগ্ন আখ খেতের পাশে জিয়াসমিন এর লাশ দেখতে পেয়ে নিহতের পরিবারকে খবর দিলে তারা এসে লাশ শনাক্ত করে।
আরও পড়ুনঃ মল্লিকপুরে হাইওয়ে ব্রীজের আখ ক্ষেতের পাশ থেকে নারীর লাশ উদ্ধার