নিজস্ব প্রতিবেদক:-ফরিদপুরের সদরপুরে চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস ইজিবাইক চালক শাহজাহান হত্যা মামলার পলাতক এক আসামীকে সদরপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।গ্রেফতারকৃত আসামী হলেন, সদরপুর থানার গিয়াসউদ্দিন বেপারীকান্দী গ্রামের মোঃ আঃ সালাম মোল্লার ছেলে মোঃ জসিম মোল্লা (১৯)।
এর আগে এ মামলার আরো দুই আসামী মো: আজিজুল মুন্সী (৩২) ও মো: হৃদয় মাতুব্বর (২৫) কে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আজ রবিবার দুপুরে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, র্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের একটি বিশেষ আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানাধীন শিমুলতলী বাজার এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে ফরিদপুর জেলার সদরপুর এলাকার চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস ইজিবাইক চালক শাহজাহান বেপারী হত্যাকান্ডের সরাসরি জড়িত পলাতক আসামি মোঃ জসিম মোল্লাকে গ্রেফতার করে।
র্যাব আরো জানায়, মাদারীপুর জেলার শিবচর থানাধীন বন্দরখোলা এলাকায় বসবাসকারী আমিন বেপারীর ছেলে শাহজাহান বেপারী (৪০), একজন ইজিবাইক চালক সে ইজিবাইক চালিয়ে তার জীবিকা নির্বাহ করে। গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ সকালে প্রতিদিনের ন্যায় সে ইজিবাইক নিয়ে যাত্রী পরিবহন করার জন্য বাসা থেকে বের হয়। ঐদিন দুপুরে সে বাসায় এসে দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টায় পুনরায় তার ইজিবাইক নিয়ে যাত্রী পরিবহন করার উদ্দেশ্যে বের হয়। পরবর্তীতে প্রতিদিনের মত শাহজাহান আনুমানিক রাত দশটা টা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে বাসায় ফেরার কথা থাকলেও ঐদিন রাতে সে বাসায় না ফিরলে তার পরিবারের লোকজন তাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়েও কোন সাড়া না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায় পরদিন ২৫ জানুয়ারি সকাল ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানাধীন রহমতুল্লাহ মাতুব্বর কান্দি এলাকার একটি সরিষা ক্ষেতে গলায় গামছা পেচানো অবস্থায় তার মৃতদেহ দেখতে পায়। পরবর্তীতে তারা সদরপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘনটাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
উক্ত ঘটনার পর মৃতের ভাই আক্কাস আলী (৫৫) তার পরিবারের সাথে পরামর্শ করে ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। হত্যাকান্ডটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশের কারণে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
ঘটনাটি জানতে পেরে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল উক্ত চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। যার ধারাবাহিকতায় গত ২২ আগস্ট সন্ধ্যায় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১০ এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে মাদারিপুর জেলার শিবচর থানার রাজারচর গ্রামের নুরু মুন্সির ছেলে আসামি মোঃ আজিজুল মুন্সি (২৭) কে গ্রেফতার করে, উক্ত হত্যার সাথে সে সরাসরি সম্পৃক্ত, আজিজুল’কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যথাসময়ে যথানিয়মে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে আজিজুল বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলোক জবানবন্দিতে উক্ত হত্যাকান্ডে মোঃ জসিম মোল্লার সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
র্যাব-১০, ফরিদপুর সিপিসি-৩ কোম্পানী অধিনায়ক লেঃ কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামি একজন ইজিবাইক ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। সে ও আজিজুল মিলে গত ২৪ জানুয়ারি রাতে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে শাহজাহান’কে গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে উল্লেখিত সরিষা ক্ষেতে ফেলে রেখে ভিকটিমের ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামি জসিম মোল্লাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানায় র্যাব।