• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কিস্তির যন্ত্রনায় যুবকের আত্মহত্যা, অসহায় স্ত্রী-সন্তানদের দুশ্চিন্তা! 

মনির মোল্যা, সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:

দরিদ্র পরিবারের জন্ম নেওয়া মো. জুয়েল রানা (২৫) ঢাকায় চালাত রিক্সা। এতে তাঁর সংসার চালিয়ে বাড়তি কোনো সঞ্চয় জমা থাকত না। এমন সময় মাথায় আসে নতুন বুদ্ধি। চিন্তা করেন গ্রামের বাড়িতে গিয়ে নতুন কিছু করার। সে অনুযায়ী বাড়িতে এসে মাস তিনেক আগে ৮০ হাজার টাকা লোন তুলে কিনেন একটি নসিমন। কিন্তু নসিমন কেনার পর এলাকায় তেমন ভাড়া পেত না। এদিকে মাস গড়িয়ে যাওয়ার আগেই মাথায় এসে ভর করত কিস্তির প্যারা।

পরিস্থিতি এমন হওয়ায় সংসার চালাতেও হিমশিম খেতে শরু হয়। সপ্তাহ খানেক আগে স্ত্রী-সন্তানদের পাঠিয়ে দেন শশুর বাড়িতে। এরপর থেকে স্ত্রী-সন্তান ছাড়াই একা থাকতো ঘরে। সব মিলিয়ে অশান্তি আর দুশ্চিন্তার বারুদ তুঙ্গে উঠার পর শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্ব) সন্ধ্যায় নিজ ঘরের বাঁশের আড়ার সঙ্গে স্ত্রীর ওড়না পেয়িয়ে আত্মহত্যা করে জুয়েল তার জীবনের সমাপ্তি টানে। জুয়েল আত্মহত্যা করার পর শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে এসব তথ্য জানান তাঁর স্ত্রী শিলুফা বেগম।

নিহত জুয়েল রানা ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কাগদী গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান মোল্যার ছেলে। তাঁর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। জুয়েল-শিলুফা দম্পতির ৮ বছর বয়সী ইসমাইল ও দেড় বছর বয়সী ইস্রাফিল নামে দুই ছেলে সন্তান রয়েছে।

শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই অবুজ সন্তান কোলে নিয়ে বাড়ির ওঠানে স্বামীর শোকে পাথক হয়ে বসে রয়েছে নিহত জুয়েলের স্ত্রীর শিলুফা বেগম। মাঝে মাঝে কেঁদে উঠছে আর বলছে, কি হবে আমার, কি হবে আমার সন্তানদের। এ সময় কান্না জড়িত কণ্ঠে শিলুফা বেগম বলেন, আমার স্বামী ঢাকায় রিক্সা চালাত। তখন মোটামুটি ভাল ছিলাম। কিন্তু বাড়িতে এসে এনজিও আশা থেকে ৪০, ব্রাক থেকে ৩০ ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে ১০ হাজার টাকা লোন উঠিয়ে একটি নসিমন কিনে। এসব এনজিওকে প্রতিমাসে ৫ হাজার ২০০ টাকা কিস্তি দেওয়া লাগত। নসিমন কিনার পর থেকে রোডে তেমন ভাড়া পেত না, যা পেত তা দিয়ে কিস্তি দেওয়া থাক দুরের কথা সংসারই চলতো না। প্রতিমাসেই ধার-দেনা হয়ে কিস্তি দিতে হতো।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মাঠে এক শতক জমিও নেই। আমার শশুরও দিন কামাই করে দিন খায়। আগে দুই ছেলেকে নিয়ে কোনো রকম ডাল-ভাত খেয়ে সংসার চলত। কিস্তিু তোলার পর তাও খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ভাতের অভাবে কিছুদিন আগে সন্তানদের নিয়ে আমি বাবার বাড়িতে চলে যাই। শনিবার রাতে খবর পাই আমার অসহায় স্বামী ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অভাব আর কিস্তি তাকে দুনিয়ায় থাকতে দেয়নি। এখন কে নিবে আমার অবুঝ সন্তানদের দায়িত্ব। কিভাবে চলবে আমাদের সংসার।

নিহত জুয়েলের বাবা আব্দুল হান্নান বলেন, জুয়েলের কারো সাথে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। কিস্তির টাকা ঠিকমত প্ররিশোধ করতে না পারা আর বউ-সন্তানদের ঠিকমত খাবার না দিতে পারার চিন্তা ওকে কিছুদিন ধরে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। অবশেষে সহ্য করতে না পেরে ছেলে আমার আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিয়ে বলে আমাদের ধারনা।

মাঝারদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আফছার উদ্দীন বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান জুয়েল এমনই অনেক ভাল ছেলে ছিল। কিন্তু সংসার চালাতে গিয়ে তিনি দায়েক-দেনা হয়ে পড়েছিল। অনেকগুলো কিস্তি ছিল ওর ঘাড়ে। শুনেছি কিস্তির চাপে সে আত্মহত্যা করেছে। আমি পরিষদের পক্ষ থেকে জুয়েলের অসহায় স্ত্রী-সন্তানদের পাশে থাকবো।

সালথা থানার এসআই আওলাদ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জুয়েলের মরহেদটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

তবে উপজেলার সচেতন মহল বলছে- অতিরিক্ত কিস্তির যন্ত্রনা বিশেষ করে অসহায়-গরিব মানুষের স্বাভাবিক মাসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তখন তাদের মাথায় আর কাজ করে না। যেকারণে কিস্তির চাপ মাথায় নিয়ে মাঝে মাঝেই আমাদের এলাকার অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মার্চ ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ফেব্রুয়ারি    
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।