নিরঞ্জন মিত্র ( নিরু) (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর অধীনে ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (সগবি) এর আয়োজনে ১৮ ফেব্রয়ারি বৃস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের ভেলাবাজ গ্রামে বারি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ও পরিবর্তনশীল আবহাওয়া উপযোগী আলুর বিভিন্ন জাতের গবেষণা ও উৎপাদন কার্যক্রমের উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।
মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, (বারি) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রফি উদ্দিন এর সভাপতিত্বে দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দেবীগঞ্জ পঞ্চগড় প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মহি উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. হজরত আলী।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ,(বারি) অঞ্চল প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম আহম্মেদ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর বিএডিসি উপপরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান, ফরিদপুর মসলা গবেষণা উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলাউদ্দিন খান।
এসময় মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট গ্রাম ও পার্শবর্তী গ্রাম থেকে আগত অর্ধশতাধিক চাষী, এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তি, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (বারি) মাঠ পর্যায়ের কর্মরত বৈজ্ঞানিক সহকারীবৃন্দ ও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক সাংবাদিক কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (বারি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ.এফ.এম. রুহুল কুদ্দুস।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক মূল্য ও উৎপাদন বিবেচনায় বাংলাদেশের ২০টি প্রধান ফসলের মধ্যে ধানের পরই আলুর স্থান। আলু উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে ৩য় ও পৃথিবীর মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সেখানে আলু উৎপাদিত হতো ০৯ (নয়) লক্ষ মেট্রিক টন সেখানে ২০১৯-২০ মৌসুমে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৯ লক্ষ মেট্রিক টন। দিন দিন আলু চাষের জমির পরিমাণ (৪.৬৪ লাখ হে.), মোট উৎপাদন ও গড় ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা গবেষণা ও সম্প্রসারণের কাজের ফলাফল।
অধিকন্তু একক সময়ে একক পরিমাণ জমিতে এত বেশী ফলন (গড় ফলন ২৩ টন/হেক্টর) অন্য কোন চাষযোগ্য ফসলে পাওয়া যায় না এবং আলু উৎপাদন মৌসুমে তেমন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকে না বলে কৃষকরা আরও বেশী উৎসাহিত হচ্ছে। আলু গাছে বাংলাদেশে সাধারণত ফুল হয় না, তাই প্রথম দিকে বিদেশী জাত অবমুক্তির মাধ্যমে আলু চাষ শুরু হয়। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আলু গাছে ফুল, ফল হওয়াতে সক্ষম হয়। নিজস্ব সংকরায়নের মাধ্যমে প্রথম ২০০০ খ্রি. এ সংকরায়িত বীজ/হাইব্রিড বীজ পেতে সক্ষম হয়। সংকরায়িত বীজ থেকে ক্লোনাল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১২ সালে প্রথম ৩টি জাত বারি আলু-৩৫, বারি আলু-৩৬ ও বারি আলু-৩৭ অবমুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে আলুর জাত উদ্ভাবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ৯১ টি জাত উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু জাতগুলো কৃষক বা আলু উৎপাদনকারীদের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয় নাই। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আর্থিক সহযোগীতায় এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলায় জাতের উপযোগিতা যাচাই পরীক্ষা ও উৎপাদন স্থাপন করা হয়। এখানে মোট ১৩ টি আলুর জাত রয়েছে ও জমির পরিমাণ প্রায় ১৩ বিঘা। জাত গুলো হলো বারি আলু-২৮ (আলুর চামড়ার রঙ লাল ও প্রক্রিয়াজাতকরণ উপযোগী), ২৯ (আলুর চামড়ার রঙ লাল ও প্রক্রিয়াজাতকরণ), ৩৬ (বাংলাদেশে উদ্ভাবিত লাল খাবার আলু), ৪০ (বাংলাদেশে উদ্ভাবিত হালকা হলুদ খাবার আলু ও প্রক্রিয়াজাতকরণ উপযোগী), ৪১ (বাংলাদেশে উদ্ভাবিত গাঢ় লাল খাবার আলু ও প্রক্রিয়াজাতকরণ উপযোগী), ৪৭, ৪৮ ও ৪৯ (বাংলাদেশে উদ্ভাবিত হলুদ খাবার আলু), ৫৩ (আলুর রঙ লাল ও নাবী ধ্বসা প্রতিরোধী), ৫৬ (বাংলাদেশে উদ্ভাবিত লাল খাবার আলু), ৬২ (বাংলাদেশে উদ্ভাবিত আলুর চামড়ার রঙ হলুদ ও সাধারণ তাপমাত্রায় ৫-৬ মাস সংরক্ষণযোগ্য), ৬৩ (বাংলাদেশে উদ্ভাবিত লাল আপেলের মতো খাবার আলু) এবং বারি আলু-৭৩ (আলুর চামড়ার রঙ ক্রিম, তাপ সহনশীল।
অনুষ্ঠানের পূর্বে কৃষক কিষাণীরা বিভিন্ন জাতের আলুর উৎপাদন প্লট পরিদর্শণ করেন এবং জাতগুলোর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারা আধুনিক জাতের উচ্চ ফলনশীল বীজ আলু প্রাপ্তিতে সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণকর্মীদের অনুরোধ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে পরিবর্তনশীল জলবায়ু মোকাবেলায় উপযোগী আলু জাত ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন ও আধুনিক উচ্চ ফলনশীল আলুর জাত আবাদের জন্য কৃষকের প্রতি আহবান করেন।