ডেস্ক রিপোর্ট :-দীর্ঘ ১২ বছর পর বন্দিদশা থেকে মুক্ত হলো এক তরুণী। সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে ফরিদপুরের ১ নং আমলী আদালতে হাজির হয়ে ওই তরুণী নিজ জিম্মায় জামিন চাইলে আদালতের বিচারক বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম ওই তরুণীর জামিন মঞ্জুর করেন।
জানা যায়, ২০১০ সালের পহেলা এপ্রিল একটি জিডি মূলে (জিডি নং-৬২ ক্রমিক ১৩/১০) ওই তরুণীকে ফরিদপুরের মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রে (সেফ হোম) রাখা হয়। তখন ওই তরুণীর বয়স ছিল ১০ বছর। এরপর দীর্ঘদিন যাবৎ সেখানেই অবস্থান করছিল ওই তরুণী। ৩ মাস পূর্বে সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ব্লাস্টের আইনজীবী অর্চনা দাস বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর থেকেই ব্লাস্টের মাধ্যমে ওই তরুণীকে মুক্ত করার আইনী প্রক্রিয়া শুরু করেন।
ব্লাস্ট ফরিদপুরের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, অসহায় নারীদের বিনামূল্যে আইনী সহায়তা দিয়ে থাকে ব্লাস্ট। এরই ধারাবাহিকতায় সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ওই তরুণীর বিষয়টি জানতে পারি। পরে সেফ হোমে গিয়ে তই তরুণীর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আমরা তাকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে আইনী প্রক্রিয়া শুরু করি।
তিনি আরো বলেন, ২০১০ সালের পহেলা এপ্রিল কে বা কাহারা একটি জিডি মূলে ওই তরুণীকে সেফ হোমে রেখে যায়। তখন ওই তরুণীর বয়স ছিল ১০ বছর। ওই তরুণী কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তখন তার পরিচয় দিতে পারেনি। এভাবে দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়। সেফ হোমে থাকাকালীন সময়ে কিছুটা সুস্থ্য হয় ওই তরুণী। তিন মাস আগে ব্লাস্টের আইনজীবি অর্চনা দাস বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর সমাজসেবা অফিসে কথা বলে আমরা তাকে মুক্ত করতে আইনী প্রক্রিয়া শুরু করি। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ওই তরুণী আদালতে হাজির হয়ে নিজ জিম্মায় জামিন চাইলে ফরিদপুরের ১ নং আমলী আদালতের বিচারক বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম ওই তরুণীর জামিন মঞ্জুর করেন।
শিপ্রা গোস্বামী বলেন, ওই তরুণীর বয়স এখন ২২ বছর। ঠিকানা, পিতা মাতা কারো কথাই বলতে পারেন না। মুক্ত হওয়ার পর তাকে নিরাপদ স্থানে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের সমাজে সকল তরুণী প্রজাপতির মতো রঙিন ডানা মেলে ঘুরে বেড়াক সেই প্রত্যাশা করি।
ফরিদপুরের মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রের (সেফ হোম) উপ-তত্ত্বাবধায়ক তাহসিনা জামান বলেন, ২০১০ সালের পহেলা এপ্রিল একটি জিডি মূলে (জিডি নং-৬২ ক্রমিক ১৩/১০) ওই তরুণীকে ফরিদপুরের মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রে (সেফ হোম) রাখা হয়। তখন ওই তরুণীর বয়স ছিল ১০ বছর। ওই সময় সে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল।
তিনি আরো বলেন, পরে ওই তরুণীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আদালতের মাধ্যমে গাজীপুর সেফ হোমে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর কিছুটা সুস্থ হলে ২০১৬ সালে পুনরায় ফরিদপুর সেফ হোমে আনা হয়। সে এখন সুস্থ্য, তবে তার পরিচয় বা বাড়ির ঠিকানা বলতে পারে না।
ফরিদপুরের মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রের (সেফ হোম) সহকারি পরিচালক মো: নুরুল হুদা বলেন, ওই তরুণী অসুস্থ্য ছিল, তাকে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ্য করে তোলা হয়েছে। সাধারণত ১৮ বছর বয়স না হলে কেউ নিজ জিম্মায় জামিন চাইতে পারে না। ওই তরুণীর বয়স এখন ২২ বছর। ব্লাস্টের মাধ্যমে ওই তরুণীকে আইনী সহায়তা দিয়ে মুক্ত করা হয়েছে। ওই তরুণীর নিরাপদ আবাসন ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ওই তরুণীর কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হবে। সংবাদ সুত্রঃ- নয়া শতাব্দী