• ঢাকা
  • বুধবার, ২৭শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং
নগরে সুপারস্প্রেডিং হটস্পট চিহ্নিতকরণে…

ছবি প্রতিকী

দুই মাস আগে সিঙ্গাপুরের রিশান-আং মো কিও পার্কের পথচারী, জগার ও সাইক্লিস্টরা বিস্মিত হওয়ার মতো একটি ঘটনার সাক্ষী হয়। একটি রোবোটিক কুকুর তাদের পা কামড়ে ধরল। এটি গর্জন করে তাদের একজন আরেকজনের চেয়ে দূরে থাকতে বলে। কভিড-১৯-এর মহামারী রুখতে কোনো কৌশলই এখন আর অদ্ভুত বলে মনে হচ্ছে না, যখন বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষ নিজেদের ঘরে বন্দি।

বর্তমানে বিশ্বনেতারা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়েছেন। সব সুযোগ-সুবিধা অনেক ধীরে খুলতে শুরু করেছে এবং মানুষের দুর্ভোগও বেশ দীর্ঘায়িত হয়েছে। এদিকে বিধিনিষেধ আবার খুব দ্রুত শিথিল হতে শুরু করলে সংক্রমণের নতুন একটি ঝড়ও ফের শুরু হবে। এটা বেশ অনিশ্চিত ভারসাম্য নীতি। সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিস্তৃতি বেশ দ্রুততার সঙ্গে ও গোপনে ঘটতে পারে। সুপারস্প্রেডিং সাইটগুলো থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর হার অনেক বেশি, সেখানে কয়েকদিনে শত শত কেসের সূত্রপাত হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ গত মাসে বেইজিংয়ে ১০০টির বেশি সংক্রমণ সম্পর্কিত ছিল সেন্ট্রাল ফুড মার্কেটের সঙ্গে। মেলবোর্নের অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকগুলোয়ও কেসের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, অস্ট্রেলিয়া নতুন করে সবকিছু আবার লকডাউন করেছে। মে মাসে সিউলের আইটিওন নাইট ক্লাব থেকে সংক্রমিত হয় ২০০ জন।

এখন শহরের মাঝে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোকে চিহ্নিত করতে সরকারের বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রয়োজন। মানুষের চলাফেরার বৃহৎ ডাটাকে এপিডেমিওলজিক্যাল ডাটার মডেলের সঙ্গে একত্র করা প্রয়োজন। সে সঙ্গে যেকোনো নির্দিষ্ট স্থানে যোগাযোগ করা লোকদের ডেমোগ্রাফিক প্রোফাইলও যুক্ত করা দরকার।

গভীর যোগাযোগ

গবেষকরা এটা বুঝতে পেরেছেন যে রোগ ছড়ায় সেসব জায়গায় যেখানে মানুষ দীর্ঘ সময় মুখোমুখি বসে পার করে। যেমন কেয়ারহোম, হসপিটাল ও রেস্টুরেন্ট। যোগাযোগের সময়কাল, শারীরিক নৈকট্য ও পরিবেশগত অবস্থা হচ্ছে মূল ফ্যাক্টর। বিশেষত একজনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার চেয়ে কারো সঙ্গে কোথাও ২০ মিনিট সময় পার করা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। বায়ু চলাচলের দুর্বল জায়গাগুলোতে মূলত ঝুঁকিটা সবচেয়ে বেশি।

অবশ্য কিছু ফ্যাক্টর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা খুব অল্প পরিমাণেই বোঝা যায়। কিছু লোক বিভিন্ন কারণে সুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে চলে না। যেমন মদ্যপ অবস্থায় ডিনার করা কিংবা উত্তেজনাপূর্ণ থিম-পার্ক ভ্রমণের সময় কয়েক মিটারের দূরত্ব সাধারণত অসম্ভব। অবশ্য কোন মাত্রায় মেলামেশা হচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যেমন একই বয়সের স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাসে একসঙ্গে জড়ো হয়। তবে মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রি-স্কুলের শিশুদের তুলনায় অধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে মেশে। আর স্কুল শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষ হওয়ার পরও সাধারণত যাতায়াত, খেলার সময় কিংবা টিউটোরিয়ালে বাইরে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করে।

কভিড-১৯-এর অভিজ্ঞতা বলছে, প্রতিদিন যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য বেশ দুর্বলভাবেই নথিভুক্ত করা হয়। রিসোর্ট, কনফারেন্স, ধর্মীয় সমাবেশ এবং কাজের জায়গাগুলো সব জায়গায়ই উল্লেখযোগ্য প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে। যেমন কেয়ার হোমগুলোতে বয়স্ক ও দুর্বল ইমিউনের লোকজন বাস করে, যেখানে অনেক ক্ষেত্রে অবস্থা খারাপ হতে দেখা গেছে। আবার এক জায়গায় অনেক লোক গাদাগাদি করে থাকলে সেখানেও বেশ ঝুঁকি তৈরি হয়। যেমন সিঙ্গাপুরে প্রথম ৪৮ দিনে ৯৩ শতাংশ সংক্রমণ দেখা গেছে অভিবাসীদের ডরমিটরিগুলোতে।

অবশ্য একই ধরনের অনেকগুলো কারণ দায়ী বর্তমানে কভিড-১৯-এর সুপারস্প্রেডিংয়ের জন্য্য। জনসংখ্যার ঘনত্ব, দরিদ্র আবাসন ব্যবস্থা এবং সরু রাস্তাগুলো এজন্য দায়ী।

আমাদের অবশ্য অনেক কিছু শিখতে হবে। যেমন ২০০৩ সালে সার্সের পর হংকং ‘স্বাস্থ্যকর বিল্ডিং’ নীতি গ্রহণ করে। হাসপাতালগুলোতে বিশুদ্ধ বায়ুর ব্যবস্থা নেয়া হয়।

মানুষের অবাধ চলাচল

মানুষ এক জায়গায় আবদ্ধ থাকে না। শহরগুলো হচ্ছে হইচই করার জায়গা। সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক মানুষ আসা-যাওয়া করে। হাজারো শহুরে মানুষকে প্রতিদিন ট্রেন ও বাসের ভিড়ে চলাচল করতে হয়। এমনকি কার চালককেও প্রতিদিন অনেক মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে হয়। এমন যেকোনো মেলামেশা তাদের কভিড-১৯-এ সংক্রমিত করতে পারে। অবশ্য কীভাবে এ রোগ বিভিন্ন জায়গায় ছড়ায় তা নিয়ে এখন পর্যন্ত এর রোগ দিয়ে বেশ অল্প ধারণা পাওয়া গেছে। যেমন এয়ারপোর্ট, স্টেশন, বার, রেস্টুরেন্ট, সিনেমা ও অ্যারোপ্লেনে।

এটা নিশ্চিত যে দূর-দূরান্তে যাত্রা প্রাদুর্ভাবের বিস্তার ঘটায়। বিমান ভ্রমণ দ্রুতই বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কভিড-১৯ ছড়িয়ে দেয়। উহান থেকে সিঙ্গাপুর, হংকং, লন্ডন ও মিলানে ছড়িয়েছে কিংবা ইউরোপ থেকে নিউইয়র্ক ও বোস্টনে ছড়িয়েছে।

আমরা জানি না ভাইরাস কীভাবে বহন করা হয় এবং কোন উপায়ে এটির বিস্তারকে রোধ করা যায় কিংবা শ্লথ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মানা কিংবা এয়ারপোর্ট পরিষ্কার রাখা কি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারে? কিংবা যাত্রীরা নামার পর রাস্তায় ও রেস্টুরেন্টে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়েছিল? আমাদের আরো অনেক কিছু জানতে হবে। যেমন মানুষ কীভাবে শহরে চলেফেরা করে তার সম্পর্কেও আমরা অল্প জানতে পারি। প্যারিস, সিঙ্গাপুর, তাইপেসহ কিছু মিউনিসিপ্যালটি স্থল পরিবহনে রিয়েল টাইম ডাটা প্রকাশ করে। এই ডাটাগুলো কোম্পানি, থার্ড-পার্টি ডেভেলপার ও গবেষকদের জন্য উপলব্ধ করা হয়েছে রুট প্ল্যানিং অ্যাপ ডেভেলপ করার জন্য। কিন্তু বেশির ভাগ শহর এগুলো সরবরাহ করে না, এমনকি অনেকেই এ রকম ডাটা সংগ্রহ করে না। কেউ একজন কোথায় এবং কখন ভ্রমণ করেছে এমন সংবেদনশীল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাগ করে নিতে প্রয়োজনীয় টেকনোলজি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর অভাব রয়েছে। সে সঙ্গে প্রাইভেসি নিশ্চিত করার ব্যাপারও আছে। তবে ট্রিপ ডাটা আপনাকে একজন কত সময় কাটিয়েছে, কার সঙ্গে কাটিয়েছে সে সব তথ্য বলে না। পর্যটকসহ অন্য কেউ কখন শহর ঢুকছে এবং কখন বেরুচ্ছে তার সম্পর্কে অল্পই জানা যায়। সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় অবশ্য মোবাইল ফোনের জিপিএস ডাটা ব্যবহার করা হয়েছে কন্টাক্ট ট্র্যাকিংয়ের জন্য। তবে এ স্কেলে আমেরিকায় হচ্ছে না। এটি কার্যকর হলেও পর্যবেক্ষণের ভয় রয়েছে। যে কারণে অনেকেই এটি গ্রহণ করছে না।

মডেলিং ফ্লোস

রোগের বিস্তৃতির একটি মডেল তৈরি এবং পরিমার্জন করা যায় মানুষের চলাচল সম্পর্কিত জ্ঞান ও ডাটার উন্নতির তিনটি ধাপ অনুসরণ করে।

শহরজুড়ে একটি বেস মানচিত্র প্রয়োজন যা কিনা মানুষের প্রধান প্রবাহকে উপস্থাপন করবে। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে স্কুল, শপিং সেন্টার, ট্রেন স্টেশন কিংবা কেয়ার হোমে ভ্রমণ করা মানুষের সংখ্যা ও সময়। এ ডাটা বেনামে মোবাইল ফোন রেকর্ড কিংবা গণপরিবহনে ভ্রমণের তথ্য থেকে পাওয়া যাবে। এই তথ্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করবে গবেষকদের। এভাবে আরো কিছু উপায়ে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। তবে সহজে ডাটা পাওয়া, তার মান ও প্রাইভেসি নিয়ে উদ্বিগ্নতাই মূল সীমাবদ্ধতা। যেমন কারে চলাফেরা করা ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে রাখা বেশ সমস্যার।

পরিবহন কেন্দ্র, বিমানবন্দর, বড় শপিং সেন্টার কিংবা লাইব্রেরিকে বেস ম্যাচে যুক্ত করতে হবে। যেমন স্মার্ট ডিভাইস থেকে ওয়াইফাই সিগন্যাল ব্যবহার করে এটা করা যাবে। এছাড়া সাধারণ প্রবাহের ধারণা আগের গবেষণা থেকে পাওয়া যাবে। যেমন শপিং সেন্টার এবং পার্ক ব্যস্ত থাকে ছুটির দিনে। ট্রেনে ভিড় থাকে কাজের দিন। এভাবেই ধরনটা বুঝতে হবে। এখানে সবকিছু সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত।

ডেমোগ্রাফিক ও মানবিক মিথষ্ক্রিয়াগুলোর ক্ষেত্রে রোগের সংক্রমণকে প্রভাবিত করে এমন সব পরিচিত কারণগুলোকে মানবিক কার্যকলাপের প্রতিনিধিত্বমূলক সীমানায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

সবকিছু মিলিয়েই সরকার সুপারস্প্রেডিংয়ের স্থানগুলো চিহ্নিত করতে পারবে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।

নেচার ম্যাগাজিন

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

সেপ্টেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« আগষ্ট    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।