সুন্দরবনের রেঞ্জাররা এখন বিপন্ন প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা পাচ্ছেন। এক মাস আগেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনের প্রতিনিধিত্বকারী এই প্রাণীটির দেখা মিললে যে কেউ একে জীবনের অন্যতম অর্জন বলে ভাবত।
সুন্দরবনের ভেতরে এখন পর্যটকদের নৌভ্রমণ নিষিদ্ধ, এমনকি জেলে কিংবা মৌয়ালদেরও জঙ্গলে ঢোকা নিষেধ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে লকডাউনের সরকারি ঘোষণার পর, জঙ্গলে ইঞ্জিন চালিত নৌকা প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জঙ্গল ও তার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা জলাশয়গুলোর নীরব প্রশান্তি ভাঙার কেউ নেই।
ফলে এতদিন যেসব বন্যপ্রাণীদের গভীর ঝোপের ফাঁক দিয়ে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে উঁকি দিতে দেখা যেত, তারা এখন তাদের গোপন বাসস্থান থেকে বেরিয়ে এসে জলাশয়ের তীরে আসছে প্রায়ই, স্বচ্ছ পানিতে তৃষ্ণা নিবারণ করছে।
সবচেয়ে মজার ঘটনা হলো, সুন্দরবনের রেঞ্জারররা এখন প্রায়ই বাঘের দেখা পাচ্ছেন। সুন্দরবনের ইস্ট ডিভিশনের বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেইন বলেন, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে বেশি বেশি। বেশ কয়েকজন বনরক্ষী জলাশয়ের তীরে বাঘেদের খেলতে দেখেছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে কোন নির্দিষ্ট স্থানের নাম বলেননি তিনি।
সম্প্রতি, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বাঘের অভয়ারণ্যের পরিচালক গণমাধ্যমকে জানান, লকডাউনের পর বাঘের দেখা পাওয়ার ঘটনা বেড়েছে সেখানেও।
বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই সুন্দরবনে মোট বাঘের সংখ্যা প্রায় ২১০টি।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের দুই জেলা, পূর্বে খুলনা এবং পশ্চিমে সাতক্ষীরায় পড়েছে সুন্দরবনের প্রায় ৬০ ভাগ অংশ।
দুটি অংশের মধ্যে পূর্বাঞ্চলই পর্যটকদের কাছে বেশি জনপ্রিয়।
বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুন্দরবনে বেড়াতে আসা প্রায় ২ লক্ষ ৫১ হাজার ৯৬৯ পর্যটকের কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে সরকার। গত বছরের চেয়ে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৩.৫ শতাংশ।
তবে করোনাভাইরাসের কারণে এবছর পর্যটকের সংখ্যা এবার রেকর্ড স্পর্শ করতে পারবে না।
২০১৬ এর ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত বাংলাদেশ অংশে ১১৪টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বনবিভাগ।
সাম্প্রতিক জরিপে ৭২ টি বাঘের ছবি নথিভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৩ টি পূর্ণবয়স্ক, ১৪টি তরুণ ও ৫টি শাবক। পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে মাত্র ৯টি পুরুষ, ৪৪টি নারী, আর বাকি ১০ টির লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
সুন্দরবনের পশ্চিমাঞ্চলের বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন বলেন, এই অবস্থায় রাখা গেলে বণ্যপ্রাণীরা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ খুঁজে পাবে।
তবে তিনি বলেন, বাঘের সংখ্যা বাড়ছে কি না, তা বলার সময় এখনও আসেনি। আরেকটি শুমারি হওয়ার আগে তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না।