বিশ্ব মেনোপজ দিবস রোববার (১৮ অক্টোবর)। এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রাইমারি ওভারিয়ান ইনসাফিশিয়েন্সি’। দিনটি উপলক্ষ্যে মেনোপজ নিয়ে লিখেছেন রাজধানীর বি আর বি হাসপাতালের ইনফার্টিলিটি স্পেশালিস্ট ও গাইনি এনডোসকপিক সার্জন প্রফেসর ডাঃ গুলশান আরা।
এটা বলতে কি বুঝায়?
ডিম্বাশয়ের প্রধান কাজ হরমোন নিঃসৃত করা যেমন; ইস্ট্রোজেন (estrogen) প্রোজেস্টেরন (progesterone) ও এন্ডরোজেন(androgen) এবং ডিম (ওভাম) তৈরি করা। ডিম্বাশয়ের এই কাজগুলো বন্ধ হয়ে গেলে মাসিক চক্র বন্ধ হয়ে যায় এবং ডিম তৈরি হয়না।
৪০ বছর বয়সের আগে ডিম্বাশয়ের কাজ কমে গেলে তাহাকে প্রিমাচিউর ওভারিয়ান ইনসাফিশিয়েন্সি বলে। এ সময়ে নিয়মিত ডিম তৈরি হয়না এবং ইস্ট্রোজেনের পরিমাণও কমতে থাকে। একসময় মাসিক চক্র বন্ধ হয়ে যায় এবং ডিমও তৈরি হয় না। এসময়ে মেনোপজের উপসর্গ গুলি নাও থাকতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ১ জনের ৪০ বছর বয়সের আগে এটা হতে পারে। আবার ৪০-৪৫ বছর বয়সের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে ৫ জন নারীর মেনোপজ প্রাকৃতিকভাবেই হতে পারে। পরিসংখ্যান একেক দেশে একেক রকম হয়। সারা বিশ্বে এ হার ৩.৭%। ৭০-৯০% ক্ষেত্রে কারণ যানা যায় না।
নারীর শারীরিক অবস্থা হরমোন কম থাকায় গর্ভ ধারণে সমস্যা, মানসিক সমস্যা, অল্প বয়সে হাড়ক্ষয় হওয়া, হার্ট ডিজিজ এবং আচরণগত/বুদ্ধিগম্য সমস্যা হতে পারে।
কীভাবে বুঝতে পারবেন?
উপসর্গগুলি:
অনিয়মিত মাসিক
গর্ভধারণে সমস্যা
হটফ্ল্যাশ, অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া
চোখে শুসক অনুভব করা
সাময়িক মানসিক সমস্যা ও
সেক্সে অনীহা ।
যদি এ সময়ে তিন মাসের অধিক মাসিক চক্র বন্ধ থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কি কারণে হতে পারে?
১.ক্রমোজোমাল ত্রুটির কারণে -৩০%
২.কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি।
৩. অটোইমিউন রোগ-৪-৩০%
৪.কারণ জানা যায় না
৫.মেটাবলিক ডিসঅর্ডার
৬.ডিম্বাশয়ে কম ফলিকল থাকলে
৭.ধূমপান, কেমিক্যাল
ঝুঁকিতে থাকেন কারা?
১.৩৫-৪০ বছর বয়সের আগে সাধারণত হয় না।
২.পারিবারে আগে কারো যদি হয়ে থাকে
৩.ডিম্বাশয়ে অপারেশন
৪.কেমোথেরাপি /রেডিওথেরাপি
৫.জেনেটিক ত্রুটি
৬.কম ওজন
৭.সময়ের আগেই প্রথম মাসিক হয়ে গেলে
৮.গর্ভ ধারণ করেন নাই /কম গর্ভ ধারণের কাহিনী
স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব:
১.বন্ধ্যাত্ব
২.হাড়ক্ষয়ে যাওয়া
৩. বিষণ্ণতা
৪. হার্ট ডিজিজ
৫.থাইরয়েডের হরমোন কমে যায়।
রোগ নির্ণয় করা যায় কীভাবে?
উপরে উল্লেখিত ইতিহাস ও উপসর্গগুলি শারীরিক পরীক্ষা আলট্রাসনোগ্রাফ করে হরমোন পরীক্ষা এবং জেনেটিক পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা যায়।
১.হরমোন দিয়ে চিকিৎসা: ইস্ট্রোজেন হরমোন কম থাকার জন্য ইস্ট্রোজেন দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয় যাতে হাড়ের গঠন ঠিক থাকে ও হার্ট ডিজিজ কম হয়। ইস্ট্রোজেনের সাথে প্রোজেস্টেরন দেওয়া হয় জরায়ু সুস্থ থাকার জন্য।
২.ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি খেতে হবে। মাঝে মাঝে হাড় ক্ষয় হচ্ছে কি না তার জন্য পরীক্ষা করতে হবে।
৩।বন্ধ্যাত্বর বিষয়ে সুচিন্তিত পরিকল্পনা করতে হবে আই ভি এফ করা যায়।
৪. নিয়মিত ব্যায়াম করে, সুষম খাবার খেতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৫.অন্য সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা নিতে হবে যেমন ডায়াবেটিস।
৬.মানসিক সুস্থতার জন্য চিকিৎসা ও সহায়তা জরুরি।
জীবনযাপনের উপায় যথার্থ করে নেয়া:
কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই গর্ভধারণ হয়। আবার চিকিৎসা নিয়ে সন্তান নেয়া কিছু ক্ষেত্রে সম্ভব হয়। বাচ্চা নিতে না চাইলে জন্মনিরোধক বড়ি খেয়ে সুস্থ থাকা যায়।
হাড় সুস্থ থাকার জন্য ব্যায়াম,ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি অপরিহার্য।
মাসিকের অবস্থা নিজেই খেয়াল রাখুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ভালো থাকার জন্য পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
নিজের জন্য সময় দিতে হবে
হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে হবে
সন্তান নেয়া, না নেওয়ার ব্যাপারে সুচিন্তিত পরিকল্পনা করতে হবে।
পরিবারের সদস্যদের সকলের সহায়তায় চিকিৎসা নিয়ে আপনি সুস্থ, আনন্দময় জীবন উপভোগ করতে পারেন।