• ঢাকা
  • শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
ব্যবসায়ী অপহরণ, জসিমের চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
ব্যবসায়ী-অপহরণ-জসিমের-চাঞ্চল্যকর-স্বীকারোক্তি ব্যবসায়ী শিবু লাল দাস অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার জসিম। চালক হওয়ায় অপহরণ মিশনে মূলত গাড়ি চালানোর দায়িত্ব ছিল জসিমের। শিবু ও তার চালক মিরাজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দুটি ঘটনার পরপর ঢাকায় ফেরার পথে পটুয়াখালীর লাউকাঠি বা শিয়ালি নদীতে ফেলে দেয়া হয় বলেও জানান তিনি।
পটুয়াখালীর গলাচিপার আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণের দাবিতে ব্যবসায়ী শিবু লাল দাসকে অপহরণ ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। দীর্ঘদিন ধরেই তাকে অনুসরণ করছিল অপরহণকারীরা।
পটুয়াখালী শহরে শিবুর বাসা থেকে শুরু করে প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক, গলাচিপার হরিদেবপুর খেয়াঘাট এবং এর পাশেই শিবুর আবাসিক হোটেল, গাড়ি রাখার গুদাম, গ্যারেজসহ সম্ভাব্য সব স্থান দফায় দফায় নজরদারি করেছে অপহরণকারীরা। এমনকি শিবুকে অপহরণ করার পর সম্ভাব্য তিনটি নিরাপদ স্থানও তারা আগে থেকে চিহ্নিত করে রেখেছিল। ঘটনার সপ্তাহখানেক আগেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য পাঁচটি নতুন মোবাইল ফোন কেনা ছাড়াও ঘটনার প্রায় ২৫ দিন আগে ঢাকা থেকে অন্তত পাঁচজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে পটুয়াখালী আনা হয়েছিল। আর এই পুরো কাজটি পরিচালনা করেছেন ঢাকার এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানের সহযোগী মামুন ওরফে ল্যাংড়া মামুন নিজে
ব্যবসায়ী শিবু অপহরণ ও উদ্ধারের পাঁচদিনের মাথায় ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া জসিম মৃধা ওরফে বিআরটিসি জসিমের স্বীকারোক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে জসিমকে গ্রেপ্তার করে সোমবার দুপুরে পটুয়াখালী নিয়ে আসা হয়। পরে বিকালে পটুয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ক-অঞ্চলের বিচারক আশিকুর রহমান ১৬৪ ধরায় তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে আদালতের নির্দেশে জসিমকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠানো হয়।
জসিমের স্বীকারোক্তির বরাতে সোমবার সন্ধ্যায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলাটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র। তথ্য দিয়েছেন অপহৃত ব্যবসায়ী শিবু লাল দাসও। একই আদালতে শিবুর গাড়িচালক মিরাজ হোসেন হাওলাদারের বক্তব্য রেকর্ড করার কথা থাকলেও ইফতারের সময় হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। তবে আগামীকাল একই আদালতে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হবে বলে জানান ব্যবসায়ী শিবু। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার জসিমকে পটুয়াখালী সদর থানায় নিয়ে আসলে সেখানে থাকা ব্যবসায়ী শিবুকে দেখেই অপহরণের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিতে শুরু করেন তিনি। শিবুর সামনেই পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন জসিম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নুরুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার জসিম পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড গলাচিপা এলাকার মৃত সেকান্দার মৃধার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার আবদুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন রুটে সরকারি বিআরটিসি পরিবহনের চালক হিসাবে কাজ করছিলেন। আর গাড়ি চালকের আড়ালে তিনি পেশাদার সন্ত্রাসী এবং ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে অপরাধমূলক কাজ করতেন।
জসিমের বরাতে ব্যবসায়ী শিবু জানান, ১১ এপ্রিল তাকে অপরহরণ করা হলেও ৪ এপ্রিল নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য পাঁচটি মোবাইল কিনেন অপহরণকারীরা। ফোনগুলো কেনার দায়িত্ব ছিল জসিমের। এ ছাড়া জসিমসহ ঢাকা থেকে আরও পাঁচজনকে আনুমানিক ২০/২৫ দিন আগেই পটুয়াখালী নিয়ে এসেছিলেন ল্যাংড়া মামুন।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার নামই অকপটে বলে দিয়েছেন গ্রেপ্তার জসিম। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, পটুয়াখালী শহরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর ভাই (‘র’ আদ্যক্ষরের) এই ঘটনায় সক্রিয়ভাবে জড়িত এবং তিনি পুরো ঘটনার মাস্টার মাইন্ড ল্যাংড়া মামুনের খুব কাছের লোক। ঘটনার পর দুইদিন জসিম আর ওই শীর্ষ সন্ত্রাসীর ভাই একসঙ্গে ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তার অবস্থান কোথায় তা জসিমসহ তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও জানেন না। চালক হওয়ায় অপহরণ মিশনে মূলত গাড়ি চালানোর দায়িত্ব ছিল জসিমের। শিবু ও তার চালক মিরাজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দুটি ঘটনার পরপর ঢাকায় ফেরার পথে পটুয়াখালীর লাউকাঠি বা শিয়ালি নদীতে ফেলে দেয়া হয় বলেও জানান তিনি। ব্যবসায়ী শিবু বলেন, ‘অপরহণকারীরা যখন টাকার জন্য আমাকে মারধর করছে তখন আমি বারবার বলেছি- এতগুলো টাকা পাব কই? আমার কাছে এত টাকা নাই। ‘কিন্তু একথা শোনার পর তারা আমার ও আমার পরিবারের স্থাবর অস্থাবর সবকিছুর কথা উল্লেখ করতে থাকলে আমি ভিমড়ি খাই। প্রথমে কয়েকজনের কথায় ঢাকা বা খুলনার আঞ্চলিকতার সুর পেলেও যখন আমার সম্পদের কথা বলছিল তখন আমাদের বরিশালের ভাষা শুনতে পাই।’শিবু জানান, এরপর ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘঁষেছে অপহরণকারীরা। যেভাবে দা-বটি ধার দেয়া হয়, অনেকটা সেভাবে। ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়ে শিবু বলেন, ‘আমি ভয় পেয়ে তখন তাদের বলেছি, লাখ বিশেক টাকা দেয়ার ব্যবস্থা করতেছি আমাকে ছেড়ে দাও।
‘এ কথা বলার পর আমার ওপর টর্চার আরও বেড়ে যায়। তখন তারা বলেছে- টাকা দিবি ২০ কোটি। এক টাকাও কম নয়।’
শিবুর গাড়িচালক মিরাজ বলেন, ‘হাত পা মুখ যখন বাঁধছে তখন চালাকি করে মুখমণ্ডল শক্ত করে রাখি যাতে মোটামোটি শ্বাস নেয়া যায় এবং বাঁধনটি যেন ঢিলা থাকে। যখন হাত বেঁধেছে তখনও হাতটাকে বাঁকা করে রেখেছি যেন রশি ঢিল থাকে। কারণ আমাদের বস্তায় ভরা হবে সেটি বারবার তারা বলছিল। মনে করছিলাম, বস্তায় ভরলে তো মারা যেতে পারি। যদি পারি শেষ চেষ্টা করে নড়াচড়া করার চেষ্টা করবো। সেজন্য এই চালাকি করেছি।’
মিরাজ বলেন, ‘অটোবাইক থেকে নামানোর পর কোনো এক জায়গায় ফেলে রেখে বস্তার মুখ খুলে মাথাটা বের করে রেখেছিল। কিছুক্ষণ পর লোকজনের সাড়া-শব্দ না পেয়ে আমি আমার হাত দুটি বস্তা থেকে বের করি। তাতেও অনেক সময় লেগেছে। এরপর ধীরে ধীরে হাতের আঙ্গুল দিয়ে নাকের উপর থেকে স্কচটেপ ছুটানোর চেষ্টা করেছি। অনেক শক্ত ছিল এবং কপালের সাথে লেগে ছিল এটি। আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা মারতে গিয়ে আমার নাকের চামড়াও অনেকখানি উঠে গেছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।