• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং
অসাধ্যকে সাধ্য করেন প্রতারক হাচান শেখ

প্রতারক হাচান শেখ

ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুরের ছোনপঁচা গ্রামের মৃত শুকুর শেখের ছেলে আঃ মোঃ হাচান শেখ হুজুর প্রতারণার মাধ্যমে করছেন সকল অসাধ্যকে সাধ্য।

প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় জটিল সব রোগের জন্য চলছে কবিরাজি চিকিৎসা। সাধারণ মানুষের সরলতা ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে এই হাচান কবিরাজ চিকিৎসার নামে ভন্ডামি আর প্রতারণা করে আসছেন দীর্ঘদিনযাবৎ। আর রোগীরা হচ্ছেন নিঃস্ব। এসব অপচিকিৎসায় রোগীরা আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হলেও, কবিরাজের দাবি এমন চিকিৎসায় অনেক রোগীকে সুস্থ করে তুলেছেন তিনি।

প্রতিদিনই অনেক মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এখানে। কিন্তু এসব প্রতারক কবিরাজ-ফকিরের বিষয়ে উদাসীন প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। এসকল বিষয়ে তেমন একটা নজরদারি নেই। তিনি একাই (১২) প্রকার রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাদেরকে আমার বাড়িতে মফিজুল পাঠিয়েছে? সে আমাদের অনেক বড় শত্রু। আমাদেরকে নানা ভাবা ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর আমি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়েছি। তবে তিনি তার কোন প্রমান দেখাতে পারেননি। এক পর্যায়ে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হন এবং বলেন আপনারা কোথাকার সাংবাদিক, কি নাম বলে তার ব্যবহারকৃত মোবাইল ফোনটি দিয়ে শুরু করেন বিভিন্ন মহলে ফোন দেওয়া।

তিনি আরও বলেন, আমি অনেক জটিল ও কঠিন রোগীকে সুস্থ করেছি, এমনকি ঢাকার বড় বড় হাসপাতাল থেকে ফেরত দেওয়া রোগীকেউ আমি সুস্থ করে দিয়েছি, যাদের বাচাঁর কোন আশাই ছিলনা। আমার বাড়ির পাশেই একজনের হার্টের সমস্যা হয় আমি চিকিৎসা করেছি সে এখন সম্পুর্ন সুস্থ। কে সেই রোগী সাংবাদিক’রা জানতে চাইলে এক মহিলাকে ডেকে আনেন হাচান কবিরাজ নিজেই, তিনি বলেন রোগী আমি নই, রোগী আমার মেয়ে, তার হাতের হাড়ের জয়েন্টে সমস্যা ছিলো হাচান কবিরাজ ভাল করেছেন। এদিকে হাচান কবিরাজ দাবি করেন ঐ রোগীর হার্টে ব্লক হয়েছিলো। ঘি ও মধু পড়ে দিয়েছিলেন, তাতেই সুস্থ সেই রোগী। তিনি জানান, তার সকল রোগীই ঘি ও মধু পড়া খেয়েই সুস্থ হন।

তার ব্যক্তিগত ভিজিটিং কার্ডে লেখা আছে কি কি চিকিৎসা করেন তিনি, বিবাহ বিচ্ছেদ, স্বামী স্ত্রী মধ্যে অমিল, জ্বিন ভুত কালি দূর, শত্রুকে দমন, যে কোন অসাধ্য কাজকে সাধন করা, প্রেম ভালবাসা ব্যথায় ভোগ, জায়গা জমির ঝালেমা, মানসিক নষ্ট, ব্যবসা বাণিজ্যে বাধা, নিঃসন্তানীকে সন্তান দেওয়া, হার্টের ব্লককে দুর করা, বোবা মানুষ কে কথা বলানো। অথচ তিনি জানেনই না হার্টের ব্লক কি বা কি কারণে হয়! তার নিজের জমির ঝামেলা সে দুর করতে পারেন না কিন্তু সে অন্যের জমির ঝামেলা দুর করেন।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, এই কবিরাজের ভয়ে কেও কিছু বলতে সাহস পায়না, তার এখানে প্রতিদিন অনেক মানুষ প্রতারিত হচ্ছে, এতে আমাদের গ্রামটির শুনাম খুন্য হচ্ছে, রোগীর হাত-পায়ে তেল মালিশ ও ঝাড়-ফুঁ দিয়েই নাকি রোগ ভালো করছেন কবিরাজ। এসব চিকিৎসা করতে কবিরাজ রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আগেই চুক্তি করেন মোটা অঙ্কের। আর টাকা হাতে পেলেই কাজ শুরু করেন।

তিনি প্রতি সপ্তাহে ২ দিন আসর দেন তার নিজ কক্ষে, সেখানেই তিনি বিভিন্ন জ্বীন হাজির করে কথা বলেন ও চিকিৎসা কাযর্ক্রম শুরু করেন। রোগীর চিকিৎসা গ্যারান্টি দিয়ে বিভিন্ন রোগ ভালো করছেন, এমন চিকিৎসায় রোগী ও তার স্বজনরা পড়ছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী জানান মানুষের মধ্যে এখনো সেই পুরনো আমলের ধ্যান-ধারণা রয়েছে। এসব ধ্যান-ধারণার কারণেই তারা তেল মালিশ ও ঝাড়-ফুঁকে বিশ্বাসী। এমন চিকিৎসা একটি ভন্ডামী ও প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সিদ্দিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যে সকল বিষয়ে তিনি চিকিৎসা দিচ্ছেন তা আদৌ তার দ্বারা সম্ভব নয়। যিনি জানেনই না হার্ট ব্লক কি, তিনি চিকিৎসা দিবেন কিভাবে? বরং এ ধরণের রোগী তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থই হবে। আর জন্মগত ভাবে যারা বোবা, মেডিকেল সাইন্সেই সে বিষয়ে কোন চিকিৎসা নেই। তার এ চিকিৎসা প্রতারনা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ধরণের কবিরাজ বা ফকির থেকে জনগনকে আপনারা লেখার মাধ্যমে সচেতন করেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করি।

পুলিশ সুপার মোঃ আলীমুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, কোন ভুক্তভোগী যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করে তাহলে আমাদের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সহজ হয়। যে বিষয়গুলো এই লোক তার ভিজিটিং কার্ডে লিখেছেন তা প্রতারনা ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

সেপ্টেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« আগষ্ট    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।