• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং

প্রথম আলোর খবর

বাংলাদেশে করোনায় সক্রিয় প্রোটিন ‘ডি৬১৪জি’ মহামারি ঘটানোর মতো বিপজ্জনক নয়

করোনা ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্য বের করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন দেশের বিজ্ঞানীরা। গত ১৬ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিজ্ঞানীরা ২২২টি করোনা ভাইরাসের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছেন তাঁরা। এর মধ্যে ১৭১টি করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ সেন্টারের একদল বিজ্ঞানী।

বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ইতিমধ্যে তার জিনোমিক পর্যায়ে ৫৯০টি ও প্রোটিন পর্যায় ২৭৩টি পরিবর্তন ঘটিয়েছে। একটা করোনা ভাইরাসে ১ হাজার ২৭৪টি প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে ‘ডি৬১৪জি’ নম্বর প্রোটিনটি বাংলাদেশে সক্রিয়। জিনোমিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সেলিম খান বলেছেন, যেসব দেশে করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়েছে সেসব দেশে ভাইরাসটির জিনে ৩৪৬ নম্বর থেকে ৫১২ নম্বর প্রোটিন মারাত্মকভাবে সক্রিয় ছিল, বাংলাদেশে এখনো এটি দেখা যায়নি।

এই ২২২টি করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিন রহস্য করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের উন্মুক্ত তথ্য-ভান্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা (জিসএআইডি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনলিক্যাল ইনফরমেশনে (এনসিবিআই) প্রকাশিত হয়েছে। বিসিএসআইআর ছাড়া আরও নয়টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান করোনা ভাইরাসের জিন রহস্য উন্মোচনের গবেষণায় কাজ করছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার জিন রহস্য বা জিন সিকোয়েন্স উন্মোচন হচ্ছে ভাইরাসটির পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য বের করা। এতে করে করোনা ভাইরাসের গতি, প্রকৃতি, আচরণগত বৈশিষ্ট্য জানা যাচ্ছে। জিনের ভেতরেই সব তথ্য লুকানো থাকে। জিন রহস্য বের করার মাধ্যমে কোনো প্রাণী বা করোনা ভাইরাসের রূপান্তরের (মিউটেশন) ধারা বোঝা যায়। এতে করে ভাইরাসটির গতি-প্রকৃতি বুঝে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ সুগম হয়।

দেশে করোনা ভাইরাসটির ধরন ‘ব্যতিক্রম’:

বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ইতিমধ্যে তার জিনোমিক পর্যায়ে ৫৯০টি ও প্রোটিন পর্যায় ২৭৩টি পরিবর্তন ঘটিয়েছে। একটা করোনা ভাইরাসে ১ হাজার ২৭৪টি প্রোটিন থাকে। দেশে সংক্রমিত হওয়া করোনা ভাইরাসের ধরন দেখে বোঝা গেছে, এই ১ হাজার ২৭৪টির মধ্যে ‘ডি৬১৪জি’ নম্বর প্রোটিনটি এখানে সক্রিয়। এই প্রোটিনটিই বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটানোর প্রধান কারণ। জিন রহস্য উন্মোচন হওয়া করোনা ভাইরাসের ৯৫ শতাংশের মধ্যে এই প্রোটিনটি সক্রিয় ছিল বলে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন।

বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসটির ধরন আলাদা বলে জানিয়েছেন জিনোমিক রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা। করোনা ভাইরাসের জিন রহস্য উন্মোচন করে তাঁরা বলছেন, করোনা ভাইরাসটি বিভিন্ন পরিবেশে গিয়ে দ্রুত পরিবর্তন করে। ফলে ভ্যাকসিন তৈরির কাজটি দেরি হচ্ছে। যদি করোনা ভাইরাসের শরীরের প্রোটিন ও নিওক্লিড লেভেলে এত রূপান্তর না হতো তবে আরও দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করা যেত। তবে আশার কথা করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার জন্য যে বিপজ্জনক প্রোটিনগুলো দায়ী, সেই প্রোটিনগুলো বাংলাদেশে এখনো সক্রিয় হতে পারেনি।

জিনোমিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সেলিম খান প্রথম আলোকে বলেন, যেসব দেশে করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়েছে সেসব দেশে করোনা ভাইরাসের জিনে ৩৪৬ নম্বর থেকে ৫১২ নম্বর প্রোটিন মারাত্মকভাবে সক্রিয় ছিল, যা বাংলাদেশে এখনো দেখা যায়নি। এটা একটা স্বস্তির কথা। তবে করোনা ভাইরাস যেহেতু দ্রুত রূপান্তর হয় তাই বড় পরিসরে এর জিন রহস্য উন্মোচনের কাজটি অব্যাহত রাখা জরুরি। বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীরা সেটাই করছেন বলে প্রথম আলোকে জানান মো. সেলিম খান।

জিনোমিক রিসার্চ সেন্টারের গবেষক দলটি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের সহযোগিতায় সারা দেশ থেকে নমুনা ও রোগীদের মেডিকেল হিস্ট্রি সংগ্রহ করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

গত ২৩ মে থেকে করোনা ভাইরাসের জিন রহস্য বের করার কাজ শুরু করে গবেষক দলটি। এতে ৯ জন বিজ্ঞানী, ৫ জন ভাইরোলজিস্টসহ ২০ জন কাজ করছেন। গবেষক দলটি গত ২৬ মার্চ প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করে, যা আন্তর্জাতিক তথ্য-ভান্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটাতে (জিসএআইডি) প্রকাশিত হয়।

করোনা ভাইরাসের জিন রহস্য উন্মোচন করতে বিজ্ঞানীরা শটগান মেটাজেনোমিক কিট ব্যবহার করে গবেষণা করছেন। এর মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও রোগীর অন্য রোগ বা ভিন্ন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। জিনোমিক রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠার প্রকল্পের বেঁচে যাওয়া অর্থ দিয়ে এসব কিট কেনা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মাঝে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া রোগের পরিচিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
জিনোমিক রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সারা বিশ্বে ৬৬ হাজার ৮৫৫ করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিন রহস্য বের করে আন্তর্জাতিক তথ্য-ভান্ডারে প্রকাশিত হয়েছে। ভারতে ১ হাজার ৫৭৯ টি করোনা ভাইরাসের জিন রহস্য বের করা হয়েছে।

জিনোমিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সেলিম খান বলেন, যে দেশ যত বেশি করোনা ভাইরাসের জিন সিকোয়েন্স করেছে, সে দেশ তত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও ভ্যাকসিন গবেষণাকে ত্বরান্বিত করেছে। যেমন নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া তাদের দেশে মোট সংক্রমণের যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ৭৫ শতাংশ করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স বের করেছে। ফলে এই দুই দেশে করোনা ভাইরাস তুলনামূলক নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আছে।

জৈবিক বিকাশ বের করতে গত ২৩ মে থেকে জিন রহস্য বের করার গবেষণা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের জিন রহস্য উন্মোচনের গবেষণার দ্রুততা ও কার্যকারিতা দেখে ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব নটিংহাম বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা কার্যক্রমের আর্থিক সহায়তা দিতে সম্মতি জানিয়েছে। দুই কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে আরও ১ হাজার করোনা ভাইরাসের জিন রহস্য উন্মোচন করার পরিকল্পনা নিয়ে কথা চলছে বলে জানিয়েছেন মো. সেলিম খান।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

অক্টোবর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« সেপ্টেম্বর    
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।