ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় হত্যা কান্ডের জেরে প্রতিপক্ষের বাড়ীতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চাপুলিয়া গ্রামে গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে সংঘর্ষে জাকারিয়া নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়। এর পর থেকে দফায় দফায় ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে।
এতে আতঙ্কিত হয়ে নারী ও শিশুরা গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে চলে যাচ্ছে। পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামের মোরাদ মোল্যা,সাঈদ মোল্যা,লুৎফার মাষ্টার,কওছার মোল্যা,ইয়াকুব মাষ্টারসহ প্রায় ৩০টি পরিবার। ফলে এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য ,কৃষিকার্যক্রমসহ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যহত হচ্ছে।
জানা গেছে, গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে চাপুলিয়া গ্রামের মোল্যা গ্রুপের অবঃপ্রাপ্ত সৈনিক আফজাল মোল্যা ওরফে শফিক ও মোরাদ মোল্যা গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে গত ২৮ মার্চ গ্রামে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের ঘটনায় জাকারিয়া ফকির চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত হয়। মৃত্যুর পরের দিনেই আফজাল মোল্যা বাদী হয়ে ৩২ জনকে আসামী করে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং০৬ ,তাং ২৯.৩.২০২০।
এর পর থেকে নিহত জাকারিয়া ফকিরের লোকজন প্রতিনিয়তই প্রতিপক্ষের লোকজনদের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট অব্যাহত রেখেছে। মামলা হওয়ার পর গ্রেফতার আতঙ্কে আসামীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
গত বৃহস্প্রতিবার রাতে শফিকুল গ্রুপের ৮/১০ জনের একটি চক্র প্রতিপক্ষের কওছার মোল্যার বাড়িতে লুটপাট করার সময়ে হাবিবুর রহমানের ছেলে সোহেল(২৫) ও হিরু শেখের ছেলে নাজিম(২৭)কে থানার টহল পুলিশ লুটপাটের মালামালসহ আটক করে। বাকীরা পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান।
এ বিষয়ে সুমি বেগম বাদী হয়ে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি চোরাই মামলা করেন। মামলা নং ৮ তাং ১৯.৬.২০২০।
গত শুক্রবার সকাল ১০টায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরোগ্রাম জুড়ে শ্মশানে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ ভাঙচুরকৃত বাড়ি ঘর তালাবদ্ধ। যারাও বাড়িতে আছেন দরজা-জানালা বন্ধ করে ভেতরে আতঙ্কিত আবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বাইরের কোন লোকজন দেখলেই ভীত হয়ে আত্মগোপন করার চেষ্টা করছেন ।
বাদি পক্ষের এহেন কর্মকান্ডে গ্রামের প্রতিপক্ষরা পুরুষ শূণ্য অবস্থায় রয়েছে। অস্ত্র ও লাঠিসোটা দিয়ে কুপিয়ে ঘরের আসবাবপত্র, তৈজসপত্র ভাংচুর করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের দেখে এগিয়ে আসেন মোরাদ মোল্যার স্ত্রী জেসমিন বেগম। তিনি জানান, লুটপাটের সময় গরু, ছাগল ,হাস-মুরগি, আসবাবপত্র,ধান-পাটসহ নানা রকমের ফসল,নগদ টাকা নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষের লুটেরা। নিরাপত্তাহীনভাবে জীবন- যাপনে রাতে আমরা নারীরা নির্ঘুম রাত কাটান বলে কান্নাজড়িত কন্ঠে বিচার দাবী করেন। অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এলাকা ছেড়েছেন বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও আমাদের ছেলে-মেয়েদের লুটপাটের সময় তার পাঠ্য বইও নিয়ে গেছে। এখন তারা ভয়ে স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে।
থানার ওসি রেজাউল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসামীদের ফরিদপুর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বিবাদীদের নিরাপত্তা ও ঝুঁকির বিষয়টি নজরদারি রাখছেন বলে তিনি দাবী করেন।