নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে
নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন শপথ নিচ্ছেন আজ। ক্যাপিটল হিলে বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ঘিরে সম্ভাব্য অভ্যন্তরীণ হামলা এড়াতে ওয়াশিংটনে মোতায়েন করা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ডের অতিরিক্ত কয়েক হাজার সদস্য। যদিও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, গার্ড সদস্যদের মধ্য থেকে কোনো হুমকির প্রমাণ এখনো দেখা যায়নি। তারপরও নিছিদ্রি নিরাপত্তায় ঢেকে দেওয়া হয়েছে ক্যাপিটল ভবন ও গোটা রাজধানী ওয়াশিংটনকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এত কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আগে কখনো কোনো প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়নি।
এদিকে শপথ নেওয়ার পরপরই প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাষণ দেবেন বাইডেন। সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, খুব গুরুত্ব সহকারে চলছে এ ভাষণ প্রস্তুতের কাজ। বাইডেনের দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা মাইক ডোনিলন এ বক্তব্য লেখার প্রক্রিয়া তদারকি করছেন। ইতিহাসবিদ ও প্রেসিডেন্টদের আত্মজীবনী লেখক জন মিচামও অভিষেক ভাষণ তৈরিতে সহযোগিতা করছেন। বিভক্ত হয়ে পড়া এক জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই এই ভাষণ দেবেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, রাজধানী ওয়াশিংটনের বেশিরভাগ রাস্তা এবং মেট্রো স্টেশনগুলোর পাশাপাশি কর্র্তৃপক্ষ জাতীয় উদ্যান হিসেবে পরিচিত ন্যাশনাল মলও বন্ধ করে দিয়েছে। ভার্জিনিয়া রাজ্য থেকে শহরে প্রবেশের সেতুগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তীব্র নিরাপত্তা উদ্বেগ সত্ত্বেও বাইডেন অনুষ্ঠানটি ঐতিহ্যবাহী স্থানেই করার পরিকল্পনা করছেন।
আসন্ন বাইডেন প্রশাসনের সম্ভাব্য যোগাযোগ পরিচালক কেইট বেডিংফিল্ড এবিসির ‘দিস উইক শো’-তে বলেছেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম পাশে বাইরের দিকে পরিবারের সঙ্গে বাইবেলে হাত রেখে শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। ’ তিনি বলেন, ‘বাইডেন এবং তার দলের যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে। তারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অভিষেক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিরাপদ কি না তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছেন। ’
বুধবার একটি ‘নতুন প্রশাসন’ আসবে ট্রাম্প তা মেনে নেওয়া সত্ত্বেও নিজের পরাজয় মেনে নিতে বা বাইডেনকে অভিনন্দন জানাতে অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ১৬০ বছরের মার্কিন ঐতিহ্য উপেক্ষা করে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্প বুধবার সকালে একটি বিদায়ী লাল গালিচা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন। এরপর প্রেসিডেন্টের বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে চড়ে তিনি ফ্লোরিডার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
এদিকে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ভাষণ দেওয়াটা জো বাইডেনের জন্য নতুন কিছু না হলেও অন্য যেকোনো ভাষণের চেয়ে তার বুধবারের ভাষণটির অনেক বেশি গাম্ভীর্য থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। তার উপদেষ্টারা সিএনএন-কে বলেন, ২০ জানুয়ারিতে বাইডেন কী বক্তব্য দিতে পারেন তা গোপন রাখা হচ্ছে। তার কারণ, বক্তব্যকে একেবারে তাজাভাবে উপস্থাপন করতে চান নতুন প্রেসিডেন্ট। তাছাড়া, প্রয়োজনবোধে শেষ মিনিট পর্যন্ত এতে পরিবর্তন আনার সুযোগ রাখা হচ্ছে। তবে বাইডেনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সূত্রে সিএনএন জানিয়েছে, গত ৭ নভেম্বর বাইডেন যে ভাষণ দিয়েছিলেন তার আদল থাকবে এবারের ভাষণে। সেখানে একে অপরকে সুযোগ দেওয়ার জন্য আমেরিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন নতুন প্রেসিডেন্ট। সে রাতে বাইডেন বলেছিলেন, ‘কঠোর রেটরিক ভুলে গিয়ে, উত্তেজনা কমিয়ে আবারও একে অপরের দিকে তাকানোর সময় এখনই। একে অপরের কথা শোনার সময় এখনই। অগ্রগতির জন্য আমাদের বিরোধীদের শত্রু হিসেবে দেখার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। তারা আমাদের শত্রু নয়। তারা আমেরিকান। ’
বাইডেনের এক উপদেষ্টা সিএনএন-কে বলেন, ‘যা কিছু ঘটেছে, আমাদের দেশ যা কিছু সহ্য করেছে, তা সত্ত্বেও জাতিকে আত্মিকভাবে এক করার বার্তা থেকে কখনো বিচ্যুত হবেন না তিনি। এটি তার সব সময়ের মূল লক্ষ্য। ’