হাসিনা খানম রুমা
তাঁর জন্ম নাম ছিলো সুফিয়া ইবরাহিম। ফরিদপুরের সদরপুরের শৈলডুবি গ্রামে ১৯৩২ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুহম্মদ ইবরাহিম ছিলেন একজন বিচারপতি ও এবং মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ ম উপাচার্য লুৎফুন্নেসা ইবরাহিম। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হয়ে প্রথম সারিতে থেকে অংশগ্রহণ করে তিনি অমর হয়ে রয়েছেন ইতিহাসে।
১৯৪৭-১৯৫১ মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ভাষা আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সংখ্যা ৮০-৮৫ জন। ভাষার জন্য ছেলে – মেয়ে সব একাট্টা হয়েই আন্দোলনে নামেন। এই ছাত্রীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ভাষা আন্দোলনে গৌরবময় ভূমিকা রেখেছেন। নারীরা কখনো আন্দোলনের সামনে থেকে প্রতিবাদী হয়েছেন। কখনো নীরবে আন্দোলনের সপক্ষে নিজেদের কাজ করে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ছিলেন জাতীয় অধ্যাপিকা সুফিয়া আহম্মদ। ভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রথম সারির নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও লাঠির আঘাতে তিনি আহত হন। ১৯৫২ সালে তিনি তুরস্কে পাকিস্তান সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে পাকিস্তানের পূর্ব প্রতিনিধিত্ব করেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রেসকোর্স ঢাকার ময়দানের এক জনসভায়। পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলন কঠিন রূপ ধারণ করে। একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাঙার ক্ষেত্রে বিতর্ক উঠলে ছাত্রীরা পক্ষে মত দিয়েছে। সেদিন সকাল থেকেই মেয়েরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আমতলার সভায় যোগ দিতে আসেন। কিন্তু পুলিশি হামলার আশঙ্কায় ছাত্রীদের মিছিল না করার পরামর্শ
দেওয়া হয়েছিল।
‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবির আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছিল ছাত্রীরা। মাতৃভাষা রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত, শফিকসহ আরও অনেকেই।
পাকিস্তান আর্মি ও পুলিশের তাক করা বন্দুকের নলকে উপেক্ষা করে ভাষার দাবিতে মিছিলের সামনের কাতারে ছিলেন নারীরা। ২২ ফেব্রুয়ারি গায়েবানা জানাজা, শোক মিছিল এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতালসহ প্রতিটি কর্মসূচিতে নারীরা অংশগ্রহণ করে একাত্ম ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা রাতে লুকিয়ে ভাষার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান লিখে পোস্টার এঁকেছেন। ১৯৫২ সালে নারীরাই ধাক্কাধাক্কি করে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙে। আহতদের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা রাখে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রীরা। আহতদের চিকিৎসায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তুলে আনে ছাত্রীরা। পুলিশের তাড়া খাওয়া ছাত্রদের নিজেদের কাছে তারা লুকিয়ে রাখে। আন্দোলনের খরচ চালাতে অনেক গৃহিণী নিজেদের অলংকার খুলে দেন। ভাষা আন্দোলনে জড়িত হওয়ায় অনেক নারীকে সংসার হারাতে হয়েছে, অনেক নারীকে জেল খাটতে হয়েছে। কোনো কোনো নারীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগীয় এবং জেলা শহরে নারীদের অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পাশাপাশি স্কুলের ছাত্রীরা মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শামিল ছিলেন।
১৯৪৭-১৯৫১ মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ভাষা আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সংখ্যা ৮০-৮৫ জন। ভাষার জন্য ছেলে-মেয়ে সব একাট্টা হয়েই আন্দোলনে নামেন। এই ছাত্রীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ভাষা আন্দোলনে গৌরবময় ভূমিকা রেখেছেন। নারীরা কখনো আন্দোলনের সামনে থেকে প্রতিবাদী হয়েছেন। কখনো নীরবে আন্দোলনের সপক্ষে নিজেদের কাজ করে গেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ছিলেন জাতীয় অধ্যাপিকা সুফিয়া আহম্মদ। ভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রথম সারির নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও লাঠির আঘাতে তিনি আহত হন। ১৯৫২ সালে তিনি তুরস্কে পাকিস্তান সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন।
সুফিয়া আহমেদ ১৯৩২ সালের ২০ নভেম্বর ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুহম্মদ ইবরাহিম ছিলেন একজন বিচারপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং মা লুৎফুন্নেসা ইবরাহিম। ১৯৪৮ সালে প্রাইভেটে মেট্রিকুলেশন পাস করেন এবং পরে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৫০ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৪৩-৪৪ সালে তার বাবা মুহম্মদ ইবরাহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পাঠদান করতেন। তখন থেকে তার মাঝে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন লালিত ছিল। ১৯৬১ সালে লন্ডন থেকে পিএইচডি করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে তার নিজের বিভাগ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে অধ্যাপক হন। সুফিয়া আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরের সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সুফিয়া আহমেদ ১৯৫৫ সালের জুনে সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ইশতিয়াক আহমেদ ছিলেন একজন বিচারক ও আইনজীবী। তাদের দুই সন্তান। ছেলে সৈয়দ রিফাত আহমেদ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক এবং মেয়ে রাইনা আহমেদ একজন চিকিৎসক। ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।