আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল ও অহঙ্কারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর এক অনন্য দিন। মানব ইতিহাসের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় প্রথমবার মানুষ মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষায় বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রাজপথে। এর পথপরিক্রমায় বাঙালির চেতনা জাগ্রতের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের আবির্ভাব।
বিশ্ব মানচিত্রে সেই মানুষের পরিচয় হয় বাঙালি। ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সব পথ এসে মিলে যায় এক অভিন্ন গন্তব্যে, শহীদ মিনারে। কণ্ঠে সেই চিরচেনা গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি।’
আজ থেকে ৬৯ বছর আগে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির এদিনটিতে ঢাকার রাজপথ হয়ে উঠেছিল উত্তাল।
পাকিস্তানি শাসকদের হুমকি-ধমকি, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভেঙে মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পথে নেমে আসে ছাত্র, শিক্ষক, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সি মানুষ। বসন্তের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তারা বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে আওয়াজ তোলে, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। পলাশে-শিমুলে রক্তিম হয়ে ছিল বাংলার দিগন্ত। গুলি চলে মিছিলে। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ বাংলা মায়ের অকুতোভয় সন্তানদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয় দেশের মাটি। এক অভূতপূর্ব অধ্যায় সংযোজিত হয় মানব ইতিহাসে। অমর একুশের পথ ধরেই উন্মেষ ঘটে বাঙালির স্বাধিকার চেতনার। সেই আন্দোলনের সফল পরিণতি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন। ভাষার জন্য বাঙালির এই আত্মদানের দিনটিকে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। তাই বাঙালির সঙ্গে দিনটি পালন করছে বিশ্ববাসী।
বরাবরের মতোই রোববার মধ্যরাত থেকেই রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের বাঙালি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। বিকাল থেকেই দোয়েল চত্বর, চানখাঁরপুল, টিএসসি, পলাশী মোড় থেকে শহীদ মিনারগামী পথগুলোয় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পথে পথে আঁকা হয় ঐতিহ্যবাহী আলপনা।
অমর একুশে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকালে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সংগঠনের সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরিসহ আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন।