মোঃ আলাউদ্দিন মন্ডল, রাজশাহী : রাজশাহী অঞ্চলে বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। তবে জমি থেকে ধান কাটা-মাড়াই করে ঘরে তোলার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের কারণে এবার তিব্র শ্রমিক সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, সবার সহযোগিতায় ধান জমি থেকে ঘরে আনাতে তেমন সমস্যায় পড়তে হবে না কৃষকদের। আগামী মে মাসের ২৫-২৫ তারিখের মধ্যে জমি থেকে ধান উঠে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার চার জেলায় ব্যাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা যায়, এবার চার জেলায় ( রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর) বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি বোরো আবাদ হয়েছে; ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে। আর এই হিসাব অনুযায়ী ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২১৬ মে.টন চাল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অতিরিক্ত পরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবার রাজশাহী অঞ্চলে নওগাঁ জেলায় বেশি বোরো আবাদ হয়েছে। এই জেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে, রাজশাহী জেলায় ৬৬ হাজার ২৬৫ হেক্টর, নাটোর জেলায় ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৪৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
জানা গেছে, ১ বিঘা জমিতে ধান কাটা থেকে শুরু করে মাড়াই করে ঘরে তোলার জন্য ৫ থেকে ৬ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। আর কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে ১ বিঘা জমিতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় থেকে এবার প্রথম ধাপে চার জেলায় বোরো ধান কাটার জন্য ৭০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ১০টি রিপার মেশিন ( ধান কাটার যন্ত্র) বিতরণ করা হয়েছে। এর আগের মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে ৮৭টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ১৫৮টি রিপার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে।
রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সুধেন্দ্রনাথ রায় গণমাধ্যমকে বলেন, এই দুর্যোগ মুহূর্তে আমাদের কৃষিপণ্য উৎপাদন ঠিক রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী একখণ্ড জমিও ফেলে রাখা যাবে না। যাতে করে করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের দেশ খাদ্য সংকটে না পড়ে। এজন্য আমাদের কৃষক থেকে শুরু করে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া গ্রামের কৃষক মোল্লা বলেন, ধানকাটা মৌসুমে আমাদের এলাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক এসে ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়ে যায়। কিন্তু এবার কী হবে? এরমধ্যে অনেক জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এই অবস্থায় অন্য জেলা থেকে কীভাবে শ্রমিকরা আসবে। যদি শ্রমিকরা লকডাউনের মধ্যে সময় মতো আসতে না পারে তাহলে কীভাবে ধান ঘরে উঠবে? বেশ দুশ্চিন্তায় আছি।