মাস্ক ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম
(“বাসায় ফেলে এসেছি”—এইটাই প্রধান কারন!!)
আমরা ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি করোনা প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর অনেক দেশ মাস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে করোনা মোকাবেলায় সাফল্য পেয়েছে।যেহেতু এই ভাইরাসটি খুব সহজে ছড়ায়; তাই সতর্কতা ছাড়া তো কোন বিকল্পও নেই। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকক্ষেত্রেই মাস্ক ব্যবহারে অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এটি খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমার বিশ্বাস।
গত ১ থেকে ৩ জুন পর্যন্ত যারা মাস্ক ব্যবহার করছেন না তাদের উপর একটি সাধারণ জরিপ চালিয়েছিলাম আমরা। আমার পক্ষে একদল তরুণ ঢাকার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে এই জরিপটি চালায়। অনেকটা র্যান্ডম স্যামপ্লিংয়ের মাধ্যমে উত্তরদাতাদের নেয়া হয়েছে; যারা ঐসময়ে মাস্ক পরা অবস্থায় ছিলেন না।
জরিপে সবার জন্যেই একটি প্রশ্ন ছিল, “কেন তারা মাস্ক ব্যবহার করছেন না”? কিছু সম্ভাব্য উত্তর সেখানে দেয়াই ছিল। এর বাইরেও অংশগ্রহণকারীরা “অন্য কারণ লেখা ঘরে নিজেদের মতো করে উত্তর দিতে পেরেছেন। সবার উত্তরের মধ্য দিয়ে মাস্ক ব্যবহার না করার বিচিত্র কারণ বের হয়ে এসেছে। তার মধ্যে প্রধান কারণটি হচ্ছে অবহেলাজনিত। ঘরে ফেলে এসেছেন বেশিরভাগ মানুষ। নিচে বিস্তারিত দেয়া হলো:
জরিপে অংশগ্রহণকারী
রাজধানী ঢাকার বাসাবো, মিরপুর, বাড্ডা, বনানী, গুলশান ও অন্য কয়েকটি এলাকায় চালানো এই জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৬ জন পুরুষ এবং ২৪ জন নারী। অংশ নেয়াদের বয়সের সীমা ১৫ থেকে ৬৫ উর্দ্ধ। জরিপে অংশ নেয়া কয়েকজনের বয়স ৬৫’র বেশি। তবে ২৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সি মানুষের সংখ্যা সর্বাধিক, ৪৩ জন। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ভীন্ন। পেশায় তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৩ জন চাকুরিজীবী। ১৯ জন ব্যবসায়ী। এ ছাড়া গৃহিনী, শিক্ষার্থী, বেকার, রিক্সাচালক, শ্রমিক এবং অটোরিক্সাচালকও রয়েছেন।
জরিপের ফলাফল:
জরিপে অংশ নেয়া ৫৫ শতাংশ উত্তর দিয়েছেন তাদের মাস্ক ছিল, কিন্তু বাড়িতে ফেলে এসেছেন। ২৩ শতাংশ উত্তর দিয়েছেন মাস্ক ব্যবহার করলে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। ১৮ শতাংশ মনে করেন প্রতিদিন মাস্ক ব্যবহার ব্যয়বহুল। ২ শতাংশ উত্তর দিয়েছেন মাস্ক হারিয়ে ফেলেছেন এবং একই সংখ্যক মানুষ মনে করেন মাস্ক ব্যবহার করার কোন প্রয়োজন নেই।
বিশেষ পর্যবেক্ষণ-এক : মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আর্থসামিজক অবস্থাটা বড় ধরণের প্রভাব রেখেছে। নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার করার প্রবণতা কম। সেই সাথে শিক্ষাগত বিষয়টিও এক্ষেত্রে প্রভাবক। মাস্ক ব্যবহার করেননি জরিপে অংশ নেয়া ১০০ জনের মধ্যে ৩৭ জন দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ২৫ জন এসএসসি পাশ। ১৫ জনের শিক্ষাগত যেমন যোগ্যতা নেই। তাদের মধ্যে অনার্স পাশ ৮জন এবং বিবিএ করেছেন ৬ জন, এমবিএ করেছেন ২ জন। অংশ নেয়া ৪৩ জন চাকুরিজীবী হলেও, এরমধ্যে সরকারি-বেসরকারি ও অল্প বেতনের চাকুরিজীবী রয়েছেন।
বিশেষ পর্যবেক্ষণ-দুই: যেহেতু উত্তরদাতাদের র্যান্ডম বাছাই করা হয়েছে; ফলে ১০০ জনের মধ্যে নারী ও পুরুষের সংখ্যা সমান হয়নি। অংশ নেয়া ৭৬ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারী। তবে ঐসব এলাকায় জরিপ চালানোর সময় নারীদের তুলনায় সংখ্যায় বেশি পুরুষ মাস্ক ছাড়া ছিলেন বলে জরিপকারীরা জানিয়েছেন। এ থেকে একটি সাধারণ পর্যবেক্ষণ দেয়া যায়, পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি সচেতন থাকছেন।
আমার কিছু কথা:
বিভিন্ন দেশে মাস্ক ব্যবহার সংক্রান্ত আইন করা হয়েছে। কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগও করা হচ্ছে। সেই সাথে যারা মাস্ক ব্যবহার করছেন না; তাদেরকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটি জরুরী হয়ে গেছে। কিছু করার নেই। দেশকে এবং দেশের মানুষকে করোনার হাত থেকে নিরাপদ করতে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। সবাই মাস্ক ব্যবহার করুন। কেউ মাস্ক ব্যবহার না করলে, তাকে সামাজিকভাবে বয়কট করুন। আইনশৃঙখলা বাহিনীর হাতে তুলে দিন।
## ডাঃ ফেরদৌস এর ফেইসবুক থেকে সংগৃহিত