বাঘা ( রাজশাহী ) প্রতিনিধি।
চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম কুরবানির ঈদ। এ সময় মোট চামড়ার শতকরা ৮০ ভাগ সংগৃহীত হয়ে থাকে। তারপরেও রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় কুরবানির পশুর চামড়া কেনার লোক নেই। অনেকেই চামড়া বিক্রি করতে না পেরে ফাঁকা স্থানে গর্ত খুঁড়ে মাটিতে পুতে ফেলছে, আবার কেউ কেউ মসজিদ, মাদ্রাসায় দিয়ে দিচ্ছেন।
কিন্তু কয়েক বছর আগেও চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চামড়া সংগ্রহের জন্য দোড়-ঝাপ ও কারা কারী চিত্র লক্ষ্য করা যেত। এ বছরের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভাবেই ভিন্ন। সকাল গড়িয়ে বিকেল , নেই কোন কুরবানির পশুর চামড়ার ক্রেতা।
এলাকাবাসীরা বলছেন, গত দুইবছর চামড়ার দাম নেই বললেই চলে। যে সকল পরিবারে কুরবানি থাকে, তারা কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকাটা মসজিদ, মাদ্রাসা বা অসহায় মানুষদের মাঝে বিতরণ করে থাকেন। কিন্তু চামড়া বিক্রি না হওয়াতে দুবছর ধরে তা হচ্ছেনা। সেই সাথে চামড়ার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করতে সরকারের প্রতি আহব্বান জানান তারা।
বাঘা উপজেলা সদর সহ বাউসা, আড়ানী, মনিগ্রাম, পাকুড়িয়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে পশু কুরবানি দিলেও অনেকেই বেলা তিনটা পর্যন্ত চামড়া বিক্রি করতে পারেনি। বাসার সামনে চামড়া ফেলে রেখেছেন। পাশাপাশি এলাকাগুলোতে মৌসুমি ব্যবসায়ী দের দেখায় নেই। এর বিপরীতে বিনামূল্যে চামড়া সংগ্রহ করতে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকজনকে বেশি দেখা গেছে। অনেকেই চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মসজিদ, মাদ্রাসা বা এতিমখানায় চামড়া দান করে দিচ্ছেন। বুধবার ( ২১ শে জুলাই) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাঘা উপজেলা সদরের জামশেদ আলীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে তার কোরবানির গরু কাটাকুটি শেষ। কিন্তু এখন বিকেল চামড়া ব্যবসায়ী দের দেখা পাননি তিনি। তিনি বলেন, গত দুই বছর আগেও এমন ছিলো না অবস্থা।
বাউসা ইউনিয়ন এর আবু সাইদ জানান, আগে বেলা ১০টা সাড়ে ১০টার মধ্যে চামড়া কেনার লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যেত। আর এখন দুপুর একটা বাজে। এখন পর্যন্ত দুজন ছাড়া চামড়া কিনতে কেউ আসেনি।
তিনি জানান, এক লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম সকালে করলো মাত্র ২৫০ টাকা। এরপরতো আর কেউ কিনতে আসেনি। বিক্রি করতে না পারলে কোনো এতিমখানা কিংবা মাদ্রাসায় দান করে দিবেন বলে তিনি জানান।
গত কয়েক বছর যাবত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কোরবানির সময় চামড়া কিনতেন মো.হাপিজুর রহমান। এ বছর তিনি এই ব্যবসা করছেন না। কেন করছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবার চামড়ার দাম ভালো যাবে না, এটি আগে থেকেই জানছি। কারণ ট্যানারি মালিকরা এবার কম দামে চামড়া কিনবে। এইসব কারণে এবার ব্যবসা করছি না।
তিনি জানান, এবার উপজেলার এলাকার অন্তত এক শত জন মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কিনছে না।
বাঘা বাজারের মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী ছামির উদ্দিন বলেন, খাসি ছাগলের চামড়া ৪০ টাকা, গরুর চামড়া ১৮০-২০০ টাকায় কিনছেন। তবে বকরি ছাগলের চামড়া কিনছেন না তিনি।
এলাকার সুধীমহল জানান, গত বছর কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ‘পানির দরে’। চামড়ার দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় দেশের অন্যতম এ রপ্তানি পণ্যটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বিশেষ করে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা। উপযুক্ত দাম না পেয়ে অনেকে সেগুলো মাটিতে পুঁতে কিংবা রাস্তায় ফেলে দেন। চামড়ার দাম নিয়ে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়। মনে রাখতে হবে, কুরবানির পশুর চামড়ার টাকা গরিবের হক। কাজেই চামড়া ন্যায্যমূল্যে বিক্রি না হলে গরিব-দুঃখী, অসহায় ও দুস্থরা তাদের প্রাপ্য হক থেকে বঞ্চিত হবেন, যা দুঃখজনক। সেই সাথে এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশের চামড়া শিল্পের বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পবিত্র ঈদুল আজহার জন্য কুরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে। গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকার জন্য প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরের জন্য ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ দাম গত বছরের নির্ধারিত দামের চেয়ে কিছুটা বেশি।