জেলাবাসীকে করোনা ভাইরোসের ছোবল থেকে রক্ষা করতে জীবনেরর ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। হোম কোয়ারেন্টাইনের না থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য করা করা হচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে ইতিমধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
ইতিমধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে না থাকা, সামাজিক অনুষ্ঠানের নামে জনসমাবেশ করা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অফিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জেলায় মোট ৬৫ টি মামলা করা হয়েছে; জরিমানা করা হয়েছে ৪ লক্ষ ৭০ হাজার ২ দুইশ টাকা জরিমানা। এছাড়া জনসাধারণকে সচেতন করতে পুরো জেলা ব্যাপী চলছে মাইকিং। এর বাইরে ধর্মীয় সংগঠনের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সচেতনতায় কাজ করছে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। জেলার বিশেষ পেশাজীবীদের করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য তাদের পেশাগত স্থান লকডাউন করা হয়েছে; একই সাথে তাদের আবাসন ও খাদ্যসহ গৃহস্থালী চাহিদাপূরণের ব্যবস্থাও করেছে প্রশাসন।
দেশে ফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান নিশ্চিত করতে জেলার একেবারে ওয়ার্ড পর্যন্ত কমিটি করে কাজ শুরু করে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। কিন্তু প্রথম দিকে প্রবাসীরা হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান না করে অনেকেই বাইরে ঘুরাফিরা করছিল।
এদিকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে। প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান না করা, সামাজিক অনুষ্ঠানের ছদ্মাবরণে জনসমাবেশ করা, পণ্যের দাম বৃদ্ধি করাসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে গিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কাজ শুরু করে। জেলায় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অতুল সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ সুপার মো: আলিমুজ্জামান, সিভিল সার্জন ডা: মো: সিদ্দিকুর রহমানসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ কাজ শুরু করেন। একই সাথে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দের মাধ্যমে শুরু হয় ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত শূরু হয়।
এছাড়া জেলা প্রশাসক জনাব অতুল সরকারের নির্দশনায় গত বৃহস্পতিবার থেকে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত জেলা সদরে হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান না করা, সামাজিক অনুষ্ঠানের ছদ্মাবরণে জনসমাবেশ করা, পণ্যের দাম বৃদ্ধি করার কারনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মো: মাসুম রেজা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জনাব শাহ মো: সজীব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ জাকির হাসান এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতে ১১ টি মামলা করা হয়।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব ঝোটন চন্দ্রের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতে ০৫ টি, নগরকান্দায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব জেতী প্রু ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) জনাব মো: আহসান মাহমুদ রাসেলের নেতৃত্বে ১৫ টি মামলা, ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব রকিবুর রহমান খান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আল আমিন এর নেতৃত্বে ১১ টি মামলা, সদরপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব পূরবী গোলদার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) জনাব সজল চন্দ্র শীলের নেতৃত্বে ০৯ টি মামলা, চরভদ্রাসন উপজলা নির্বাহী অফিসার জনাব জেসমিন সুলতানার নেতৃত্বে ১৪ টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ৪ লক্ষ ৭০ হাজার ২ দুইশ টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া আলফাডাঙ্গা উপজেলা, মধুখালী উপজেলা ও সালথা উপজেলায় নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)বৃন্দ করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা সৃষ্টি এবং হোম কোয়ারেন্টাইন বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করছেন। প্রতিবেদন লেখাবস্থায় প্রতিটি উপজেলায় ভ্রাম্যমান আদালত মাঠে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান নিশ্চিত করতে ফিল্ডে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভ্রাম্যমান আদালতে যুক্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে। শুধু মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লোভস ব্যবহার করছেন তারা। এর সাথে জীবানু মুক্তকরণের কিছু মেডিসিনও ব্যবহার করছেন।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, বাসিন্দাদের ঝুকির কথা বিবেচনা করে তাৎক্ষনিক কাজ করছি। এছাড়া আপাতত বিকল্প নাই। এতে করে জীবনের ঝুঁকি থাকলেও কাজ করে যেতে হবে। তবে সুরক্ষার জন্য ভাইরাস প্রতিরোধক বিশেষ পোশাক আবশ্যিক ভাবে প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
করোনা ভাইরাস, হোম কোয়ারেন্টাইনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পুরো জেলা জুড়ে চলছে মাইকিং। জেলা জাতীয় উলামা পরিষদ এর সভাপতি ও বাকীগঞ্জ ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নির্দেশনায় আমরা জেলার সকল মসজিদে জুমার নামাজসহ ওয়াক্তিয়া নামাজের পরে করোনা ভাইরাস ও হোম কোয়রেন্টাইন সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করছি।’এছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ফরিদপুর শহরের দুইটি যৌনপল্লিকে অনিদিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষনা করেছে জেলা প্রশাসন। আজ শনিবার দুপুরের শহরের রথখোল ও সিএন্ডবি ঘাট (নৌবন্দর) অবস্থিত যৌনপল্লিকে এই ঘোষনা দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম রেজা।
ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম রেজা জানা, শহরের এ যৌনপল্লীতে জায়গা কম, ঘিঞ্জি পরিবেশ এবং বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াতে করে থাকে। এতে সংক্রমণ ঝুঁকি থাকায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পরামর্শে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, মানবিক কারণে এ সময়ে যৌনকর্মীদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে এক-দুইদিনের মধ্যে প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া বাড়ীওয়ালাদেরকে বন্ধকালীন সময়ে যৌনকর্মীদের কাছ থেকে ঘরভাড়া না নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানিয়েছেন, জেলায় ব্যাপক সংখ্যক লোক প্রবাস থেকে এসেছে। প্রতিনিয়ত হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থানকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ইতিমধ্যে সদর হাসপাতালটিকে করোনা ট্রিটমেন্টের জন্য নির্ধারণ করেছি। পাশপাশি আইসিইউ রেডি হয়েছে।
এছাড়া সালথা উপজেলায় নবনির্মিত হেলথ কমপ্লেক্স রয়েছে, সেটিকে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সার্বিকভাবে করোনা প্রতিরোধের বিষয়ে যা যা সম্ভব তার প্রায় সবগুলোই নেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কাজ চলমান রয়েছে। সবাই মিলে সকল কিছু স্বাভাবিক রাখতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।