মিষ্টি কুমড়ো বীজ আকারে ছোট কিন্তু পুষ্টি গুনে ভরপুর একটা খাদ্য উপাদান। কুমড়োর বীজকে প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানের “পাওয়ার হাউস” বলা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ো বীজে রয়েছে ৫৮০ ক্যালরি,৪৭.৩ গ্রাম ফ্যাট, ২৫.১ গ্রাম প্রোটিন, ৬ গ্রাম খাদ্য আঁশ,৮১৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ৪৩১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম ৭.২১ মিলিগ্রাম জিংক, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, থায়ামিন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।
প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায়
পুষ্টি উপাদান
খাদ্য আঁশ ৬ গ্রাম
প্রোটিন ২৫.১ গ্রাম
ফ্যাট ৪৭.৩ গ্রাম
ক্যালরি ৫৮০ কিলোক্যালরি
ভিটামিন
ভিটামিন এ ১ মাইক্রো গ্রাম
ভিটামিন সি ১.৫ মিলিগ্রাম
থায়ামিন ০.২৭ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাবিন ০.২১ মিলিগ্রাম
খনিজ লবন
পটাসিয়াম ৮১৫ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৪৩১ মিলিগ্রাম
আয়রন ৮.১ মিলিগ্রাম
জিংক ৭.২১ মিলিগ্রাম
মিষ্টি কুমড়ো বীজের উপকারিতা :
মিষ্টি কুমড়ো বীজের নানা গুন ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতা জেনে নেয়া যাক।
হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখে: মিষ্টি কুমড়ো বীজে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, খাদ্য আঁশ, ওমেগা- ৬ ফ্যাটি এসিড, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম। এ সকল নিউট্রিয়েন্ট হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। পটাসিয়াম হৃদপেশির স্বাভাবিক স্পন্দনে সহায়তা করে। ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও কুমড়ো বীজে উপস্থিত ফাইটোস্টেরল রক্তের HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় আর LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: কুমড়োর বীজে প্রচুর পরিমাণে থাকা ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, জিংক ও ফাইটোকেমিক্যাল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ভালো ঘুমের সহায়ক: মিষ্টি কুমড়োর বীজে রয়েছে ট্রিপ্টোফেন যা এক ধরনের অ্যামিনো এসিড ও জিংক। জিংকের উপস্থিতিতে ট্রিপ্টোফেন শরীরে গিয়ে সেরোটোনিনে রুপান্তরিত হয় যা পরবর্তীতে মেলাটোনিনে পরিনত হয় যা আমাদের দেহের sleep cycle নিয়ন্ত্রণ করে ও আরামদায়ক ঘুম নিশ্চিত করে।
ত্বক ও চুলের যত্নে: কুমড়োর বীজে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ওমেগা ৩। এই উপাদানগুলো ত্বক ভালো রাখে এবং চুল মজবুত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলে। এছাড়াও এতে রয়েছে কিউকুরবিটিন (অ্যামিনো এসিড ) যা চুলের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
ভালো রাখে প্রোস্টেট: কুমড়োর বীজে রয়েছে জিংক, যা পুরুষের উর্বরতা বাড়ায় ও প্রোস্টেটের সমস্যা প্রতিরোধ করে। এ বীজে রয়েছে ডাই-হাইড্রো এপি- অ্যান্ড্রোস্টেনেডিয়ন, যা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: কুমড়ো বীজের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ১০। অর্থাৎ বীজে উপস্থিত খাদ্য আঁশ ও অন্যান্য জটিল শর্করা ধীর গতিতে শোষিত হয় ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় না। এছাড়াও কুমড়োর বীজে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে: কুমড়োর বীজ অ্যান্টি- অক্সিডেন্টের অনেক ভালো উৎস। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোষের জারন রোধ করে ও ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিক্যাল হতে কোষকে রক্ষা করে। গবেষনায় দেখা গেছে যে, কুমড়োর বীজ গ্রহনে post-menopausal মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: ওজন কমাতে কুমড়োর বীজ দারুণ কাজ করে। এটি আঁশ জাতীয় খাবার বলে হজমে সময় লাগে যার ফলে পেট পূর্ণ থাকে অনেক ক্ষণ ও সহজে ক্ষুধা পায় না।
পরিশেষে বলা যায় যে, মিষ্টি কুমড়োর বীজ সহজলভ্য, মজাদার ও পুষ্টিকর খাবার। কুমড়োর বীজ রোদে শুকিয়ে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া যায়। এছাড়াও শুকনো করে ভেজে খাওয়া যায়। এতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদন যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।