• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
গর্ভাবস্থায় বমিভাব কমানোর উপায়

নীলা ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ইদানীং প্রায় রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই তার বেশ বমি

হয়। বমি হয়ে যাবার ভয়ে সে ঠিকমত কিছু খেতেও পারছে না। অথচ বাড়ির সবাই বলছে
গর্ভের শিশুর বৃদ্ধির জন্য তার প্রচুর খাবার খাওয়া দরকার। এ নিয়ে তাই সে এখন খুব
চিন্তিত।
উপরের ঘটনাটির সাথে সবাই কম-বেশি পরিচিত। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে বমি হওয়া কিংবা বমির ভাব
এ ধরনের অসুস্থতা বেশ সাধারন ঘটনা। গর্ভবতী হলে বমি হবেই, এটা আমরা ধরেই নেই। কিন্তু
মায়ের জন্য এই অবস্থা হয়ে পরে বেশ অস্বস্তিকর। আবার গর্ভের শিশুর সুস্থতার কথা ভেবে এই

ঘটনায় চিন্তিত হয়ে পড়েন বেশিরভাগ মায়েরাই, বিশেষ করে যারা প্রথমবার মা হচ্ছেন।

গর্ভকালীন ‘বিবমিষা’, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘Morning sickness’, প্রধানত দেখা দেয়
গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে, বিশেষ করে প্রথম ৪ থেকে ১৪ সপ্তাহে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যা
সকালে দেখা দিলেও,ব্যক্তি বিশেষে দিনের যেকোনো সময়েই বমি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বমি হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোন কারণ জানা না গেলেও কয়েকটি বিষয় রয়েছে যেগুলো বমি
হওয়ার কারণ বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে-
 হরমোনের পরিবর্তন বা প্রভাব
 রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়া
 ভ্রূণের বৃদ্ধির ফলে পাকস্থলির উপর চাপ সৃষ্টি
এছাড়াও রয়েছে,
 গর্ভের শিশু জমজ হওয়া
 অতিরিক্ত ক্লান্তি ও মানসিক দুশ্চিন্তা
 ঘন ঘন ভ্রমণ
 দুর্বল হজমশক্তি ইত্যাদি
যেহেতু গর্ভাবস্থায় বমি হওয়াটা বেশ স্বাভাবিক ঘটনা, তাই খুব বেশি বমি না হলে তেমন চিন্তার
কোন কারণ নেই। বরং চিকিৎসকের মতে এর থেকে বোঝা যায় বাচ্চার বৃদ্ধি সঠিকভাবেই হচ্ছে।

স্বাভাবিক অবস্থায় এতে চিন্তার কোন কারণ না থাকলেও অতিরিক্ত বমির ফলে দেখা যেতে পারে
কিছু জটিলতা।
প্রথমত বমির ভাবের কারণে দেখা দেয় অরুচি। এর ফলে দেখা দিতে পারে অপুষ্টি এবং ওজন হ্রাস।
এছাড়াও অনবরত বমির কারণে দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতা।

গর্ভকালীন জটিলতাসমূহঃ
 খাবার একেবারেই হজম না হওয়া
 হঠাৎ করে শারীরিক ওজন এক কেজির বেশি হ্রাস পাওয়া
 জ্বর হওয়া
 মাথা হালকা অনুভূত হওয়া কিংবা মাথা ঘুরানো এবং মাথা ব্যথা
 সবসমসয় দ্রুত হৃদস্পন্দন হওয়া
 ২য় ত্রৈমাসিকেও অনবরত বমি হওয়া
 রক্তবমি
উপরের যেকোনো এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
অস্বস্তি বা বমিভাব কমাতে যা করণীয়ঃ
১। গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধির কথা চিন্তা করে অনেক সময় মা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভোজন করে
থাকেন। এতে তার গ্রহণ ক্ষমতার অধিক খাবার হজমে বিঘ্ন ঘটে। পাশাপাশি অতিভোজনের ফলে

ওজনও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। কারণ গর্ভকালের শুরুতেই এত ছোট ভ্রূণের জন্য খুব বেশি
অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন নেই।
তাই একবারেই তিন বেলায় অনেক খাবার এক সাথে না খেয়ে সারাদিনের খাবারকে অন্তত ছয় বেলায়
ভাগ করুন। একসাথে প্রতিবেলায় অনেক খাবার না খেয়ে প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর অল্প করে
কিছু খাবার খান। এতে করে অনেকটা হালকা অনুভূত হবে এবং বমি করার প্রবণতাও কমবে।
২। ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে পানি খাবেন না। হাতের কাছে কিছু শুকনো খাবার যেমন, নোনতা বিস্কুট
বা ক্র্যাকার, মুড়ি, চিড়া ইত্যাদি রাখুন। ঘুম থেকে জেগেই হুট করে বিছানা ছাড়তে যাবেন না। খালি
পেটে বমি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বিছানা ছাড়ার আগে খানিকটা শুকনো খাবার খেয়ে নিন।

এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সেটাকে কিছুটা হজম হবার সুযোগ দিন। এবার ধীরে সুস্থে বিছানা
ছাড়ুন।

৩। সারাদিনে প্রচুর পানি পান করুন। এতে আপনার পাকস্থলির এসিডীয় অবস্থা প্রশমিত হবে, যা
বমির ভাব কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও ফলের রস, ডাবের পানি ইত্যাদি খেলে বমির ফলে সৃষ্ট
পানিশূন্যতা দূর হবে এবং এর থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মা ও শিশুর রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।

৪। খাওয়ার মাঝে পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। খাওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে ও পরে পানি
পান করুন।

৫। অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত ভারী খাবার পরিহার করুন। যথাসম্ভব হালকা ও সাদাসিধে ধরনের
খাবার গ্রহণ করুন।

৬। যেসব খাবার বা গন্ধ বমির উদ্রেক ঘটায় সেগুলো এড়িয়ে চলুন। ঘর খোলামেলা রাখুন যেন পর্যাপ্ত
আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করুন।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।