• ঢাকা
  • বুধবার, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
রমজানে ডায়াবেটিক রোগীর ব্যবস্থাপনা

রমজানে ডায়াবেটিক রোগীর ব্যবস্থাপনা

ডা. ফারহানা আক্তার, বিভাগীয় প্রধান, ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

রমযান মাস অতি সন্নিকটে। ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে রোজা। একজন মুসলমানের জন্য এই রমযান মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখা ফরয। কিন্ত অন্যান্য ব্যক্তির চাইতে একজন ডায়াবেটিক রোগীর জন্য এই মাসে রোজা রাখা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ, যদি রোজা রাখাকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকে। অন্যান্য বারের রোজার চাইতে এবছরের রোজা কিছুটা আতংকের মধ্যেই শুরু হচ্ছে কেননা আমরা জানি, বর্তমানে আমরা করোনার বৈশ্বিক মহামারীর ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। তাই সতর্কতামূলক ভাবে সবাই বাড়িতে অবস্থান করবেন এবং রোজা ও অন্যান্য ধর্মীয় আচারগুলো নিজ গৃহেই পালন করবেন। প্রায় ১৪-১৫ ঘণ্টা রোজা পালন করতে হবে এবছর এবং সময়টাও গ্রীষ্মকাল। তাই বাড়তি কিছু সতর্কতা অবলম্বনও জরুরি।
রমজানে ধর্মীয় সুফল ছাড়াও, রোজা রাখার, ইফতার ও সেহরিতে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও আছে। যেমন, রোজা রক্তের গ্লুকোজ কমায়, ওজন ও রক্তের খারাপ চর্বি কমায়, দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা, রক্তচাপ, প্রদাহ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার ভাল রাখে, মস্তিষ্ক ও নার্ভের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
একজন ডায়াবেটিক রোগী রোজা রাখতে গিয়ে যে বিশেষ ঝুঁকিগুলোর সম্মুখীন হন তা হল হাইপোগ্লাইসেমিয়া ( রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া), হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়া), ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস (গ্লুকোজ অতি মাত্রায় বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিসের জরুরী অবস্থা), পানিশূন্যতা ও রক্তে জমাট বাঁধার প্রবণতা বৃদ্ধির পাওয়া। এই পরিস্থিতিগুলোর সম্মুখীন না হয়ে কিভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে রমযানের সবগুলো রোজাই রাখা যায় তা নিয়ে রোগীদের মনে কিছু প্রশ্ন আসে । প্রশ্ন গুলো হচ্ছে : ১। আমি কি রোজা রাখতে পারবো? ২। রমজানে খাদ্যাভ্যাস কেমন হবে? ৩। রমজানের চিকিৎসা ব্যাবস্থা কেমন থাকবে? ৪। হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে কি করব? ৫। রোজা রেখে রক্ত পরীক্ষা করা যাবে কি না? ৬। কোন কোন সময় রক্ত পরীক্ষা করা যাবে? ৭। রোজা রেখে ইনসুলিন দেয়া যাবে কিনা?
একজন চিকিৎসকের দায়িত্ব এক্ষেত্রে বহুগুণ বেশি, কারণ রোগীর একটি ফরয কাজ একজন চিকিৎসকের বিচক্ষণতা ও সহযোগিতার উপর নির্ভরশীল। তাই চিকিৎসকের মনে রোগীর চাইতেও অনেক বেশি প্রশ্নের উদয় হয়। যেমন : প্রথমত, ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রোজা রাখা নিরাপদ কিনা। দ্বিতীয়ত, একজন টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিক রোগী কিভাবে রোজা রাখবেন। গর্ভকালীন ডায়াবেটিকের রোগীর জন্য রোজা রাখা নিরাপদ কিনা। তৃতীয়ত, কাদের জন্য রোজা খুব ঝুঁকিপূর্ণ , কোন ধরনের ওষুধ নিরাপদ, ইনসুলিন নেওয়া যাবে কিনা, বা নিলে কি মাত্রায় নিতে হবে ইত্যাদি।
এসব প্রশ্নের যথোপযুক্ত সমাধানের জন্য প্রয়োজন প্রাক রমযান প্রস্তুতি, বিশেষ করে ডায়াবেটিস এডুকেশন। রমজানের ৬-৮ সপ্তাহ পূর্বেই রোগীদের ঝুঁকি নির্ধারণ, ওষুধ পুনঃব্যবস্থাপনা ও রোজাকালীন করণীয় সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হয়। এবছর কোভিড-১৯ প্যানডেমিকের কারণে এ পূর্ব প্রস্তুতি যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়নি। সে কারণেই রোগীদের জন্য আজকের এই আয়োজন।
পবিত্র কোরআনে সূরা আল বাকারাহ-তে বলা আছে, পারা ২, আয়াত ১৮৩ ; ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।দ আয়াত ১৮৪; দতোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে।’
ইসলাম সহজ ও শান্তির ধর্ম। আল্লাহ আমাদের কাজ গুলো সহজ করে দেন এবং জটিলতা কামনা করেন না । কাজেই রোগীর ইচ্ছাকে সম্মান করে একজন চিকিৎসকের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে কিভাবে তিনি তার রোগীকে একটি ফরয কাজ নির্বিঘ্‌েন সম্পাদন করতে সাহায্য করবেন। কাজেই চিকিৎসক যদি রোগীকে রোজা রাখতে নিষেধ করেন, তবে ধরে নিতে হবে, রোজা পালন সেই রোগীর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ডায়াবেটিক রোগী যাদের রোজা পালন আবশ্যক নয় তারা হলেন অপ্রাপ্তবয়ষ্ক, মানসিক ভারসাম্যহীন, অতিবৃদ্ধ, দুর্বল, এবং হঠাৎ গুরুতরভাবে অসুস্থ ব্যক্তি, দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগ, ডায়াবেটিসের জটিলতাজনিত অসুস্থতা, ৫০ মাইলের অধিক দূরত্ব ভ্রমণকারী, মাসিক চলাকালীন সময়ে স্ত্রীলোক, গর্ভবতী ও দুগদ্ধদানকারিণী স্ত্রীলোক।
এছাড়া অন্যান্য রোগীর ঝুঁকি মাত্রা ৩টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন : ঝুঁকিশ্রেণী ১ঃ অত্যধিক উচ্চ ঝুঁকিতে যারাঃ তারা রোজা রাখতে পারবেন না। ঝুঁকিশ্রেণী ২ঃ উচ্চ ঝুঁকিতে যারাঃ তাদের রোজা রাখা উচিত নয়। ঝুঁকিশ্রেণী ৩ঃ মধ্যম ও কম ঝুঁকিতে যারাঃ তাদের রোজা রাখা বা না রাখা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল।
ডায়াবেটিসের রোগী যাদের রোজা রাখা অত্যাধিক উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ (ঝুঁকিশ্রেণী ১) তারা হলেন, বিগত ৩ মাসের মধ্যে গ্লুকোজ অতিরিক্ত কমে গিয়েছিল, ঘনঘন গ্লুকোজ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়, গ্লুকোজ অতিরিক্ত কমে গেলেও কোনো উপসর্গ হয় না বলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বুঝতে দেরি হয় , বিগত ৩ মাসের মধ্যে কিটোএসিডোসিস/ হাইপার অসমোলার স্টেট হয়েছিল এমন, অনিয়ন্ত্রিত টাইপ ১ ডায়াবেটিস, গুরুতর হঠাৎ অসুস্থতা, গর্ভবতী মা যাদের ইনসুলিন বা সালফোনাইল ইউরিয়া জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে হয়, দীর্ঘমেয়াদি ডায়ালাইসিসের রোগী বা কিডনীর কার্যক্ষমতা অনেক কম, জটিল হৃদরোগ, মস্তিষ্কের স্ট্রোক বা অন্যান্য রক্তনালীর রোগ, রোগাক্রান্ত অতিবৃদ্ধ।
ডায়াবেটিসের রোগী যাদের রোজা রাখা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ (ঝুঁকিশ্রেণী ২) তারা হলেন, টাইপ ২ ডায়াবেটিস যাদের গ্লুকোজ দীর্ঘদিন যাবৎ অনিয়ন্ত্রিত, টাইপ ১ ডায়াবেটিস যাদের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রিত, টাইপ ২ ডায়াবেটিস যাদের গ্লুকোজ দিনে একাধিকবার ইনসুলিন নিয়ে বা মিঙড ইনসুলিন নিয়ে ভাল নিয়ন্ত্রণে আছে, কিডনী রোগী যার কিডনীর কার্যক্ষমতা মাঝারি পর্যায়ে বিনষ্ট হয়েছে, নিয়ন্ত্রিত হৃদরোগ, ব্রেনস্ট্রোক, যার অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ রোগ আছে, অত্যধিক শারীরিক পরিশ্রমকারী, বুদ্ধি-চেতনাকে প্রভাবিত করতে পারে এমন ওষুধ গ্রহণকারী ডায়াবেটিসের রোগী।
যাদের রোজা রাখা মধ্যম ও কম ঝুঁকিপূর্ণ (ঝুঁকিশ্রেণী ৩), তারা হলেন, টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগী, যাদের গ্লুকোজ নিম্নোক্ত চিকিৎসায় ভাল নিয়ন্ত্রণে আছেঃ – জীবনযাত্রার পরিবর্তন -মেটফরমিন – একার্বোজ, ভগ্লিবোজ -পিয়োগ্লিটাজোন/ রসিগ্লিটাজোন -গ্লিক্লাজাইড/ গ্লিমেপিরাইড – ইনক্রিটিন-মূলক চিকিৎসা -ডাপাগ্লিফ্লোজিন/ কানাগ্লিফ্লোজিন -দীর্ঘমেয়াদি ইনসুলিন ।
দেখা যাচ্ছে, সবারই কিছু না কিছু ঝুঁকি আছে। তবে তার মানে এই নয় যে, তিনি রোজা রাখতেই পারবেন না। বরং ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী রোজা রাখা বা না রাখা নিভর্র করে।একজন রোগী উপরিউক্ত ঝুঁকি মাত্রা জেনেও ধর্মীয় আগ্রহের কারণে যদি রোজা রাখার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করেন, তবে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের ভূমিকা হবে তাকে ঝুঁকি গুলো অবহিত করে, যতটা সম্ভব ঝুঁকি কমিয়ে নিরাপদ রোজা রাখতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা।
খাদ্য ব্যবস্থা : প্রতিদিনের খাবারকে ৩ ভাগে ভাগ করবেন, ইফতার, সন্ধ্যারাত ও সেহেরী। রোজার আগে সারাদিনে যত ক্যালরি খাবার খেতেন, রোজাতেও তাই থাকবে, যা ডায়াবেটিসের গাইড বইটিতে প্রতিটি রোগীর জন নির্দিস্ট করে দেয়া আছে। ইফতারে চিনি মুক্ত শরবত খাবেন। আজানের অল্প আগে বা আজান দেয়ার সাথে সাথে ইনসুলিন নিয়ে খাবার খেয়ে নামাজে যাবেন। স্বাভাবিক সময়ে সকালে যে ওষুধ বা ইনসুলিন নিতেন, রমজানে তা ইফতারে নিবেন। প্রথম দিকে সতর্কতা বসত ২ বা ৪ ইউনিট কমিয়ে নিতে পারেন। পরের রোজা গুলোতে গ্লুকোজ মেপে মাত্রা ঠিক করে নিতে পারেন। খেজুর খেতে পারবেন, তবে একটা বা দুটোর বেশি না।
অতিরিক্ত শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। ইফতারে মিষ্টি জাতীয় খাবার – যেমন : জিলাপী, লাড্ডু, বরফি, মিষ্টি, চিনিযুক্ত শরবত পরিহার করুন; প্রচুর ডাবের পানি পান করুন। ভাজা খাবার- যেমন : সমুচা, পাকোড়া, পুরি, পরটা, কাবাব, যতটা সম্ভব কম খাবেন। চিনিমুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন, সালাদ ও সবুজ সবজি বেশী করে খান। সন্ধ্যা রাতের খাবার একেবারেই বাদ দেয়া ঠিক না। অন্যান্য সময়ের রাতের খাবারের সমপরিমাণ খাবার খেতে হয়। কম খেলে ইনসুলিন বা ট্যাবলেটের মাত্রা ও খুব কমিয়ে দিতে হবে। সেহেরির খাবার কখনোই বাদ দেয়া যাবে না। সেহেরীতে অধিক আঁশযুক্ত খাবার, লাল আটা, লাল চাল, শাকসবজি ও ফল খাবেন। সেহেরীতে খেতে হবে অন্নান্য দিনের দুপুরের খাবারের সমপরিমান এবং সেহেরীর শেষ সময়ের অল্প আগে খাবার গ্রহণ করুন ।স্বাভাবিক সময়ে রাতে যে পরিমাণ ইনসুলিন বা ট্যাবলেট নিতেন, রোজায় সেহেরি তে তার অর্ধেক নিবেন। তবে এই চিকিৎসাগুলো আপনার চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিয়ে তবেই শুরু করুন। কারণ, ডায়াবেটিসের বর্তমান মাত্রা অনুযায়ী, ঔষধের ডোজের তারতম্য হতে পারে। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করুন। যারা থাইরয়েডের ওষুধ খান, তারাও তা সেহেরির আগে খেয়ে নিবেন।
মোট খাবারের ৪৫-৫০% শর্করা , ২০-৩০% প্রোটিন , ৩৫% এরও কম ফ্যাট , বিশেষ করে মনো- আনস্যাচুরেটেড বা পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ভালো। কাজেই রান্না বা ভাজার তেলে এ সময় অলিভ ওয়েল ব্যবহার করা উত্তম।
ব্যয়াম : বাসায় স্বাভাবিক হাঁটা চলা করবেন। তবে অতিরিক্ত ব্যায়ামে বিশেষ করে ইফতারের আগে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে । কিন্তু কেউ যদি ব্যয়াম করতেই চান, তবে তা ইফতারের ২ ঘণ্টা পরে করা যেতে পারে। রোজা থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম পরিহার করুন, বিশেষ করে ইফতারের পূর্বে। তারাবীহ্‌ এর নামাজ পালনের মাধ্যমেও ব্যায়ামের উদ্দেশ্য কিছুটা পূরণ হয় ।
রোজা রেখে রক্ত পরীক্ষা করা যাবে কিনা, ইনসুলিন নেয়া যাবে কিনা এ নিয়ে অনেকের মনেই সংশয়। রোজা রেখে রক্ত পরীক্ষা ও ইনসুলিন দেওয়া যাবে। এতে রোজার কোন ক্ষতি হয়না। রক্তের গ্লুকোজ মাপবেন ইফতারের ৩০ মি পূর্বে, ইফতারের ২ ঘণ্টা পর, সেহরির আগে ও ২ ঘণ্টা পর, মধ্য দুপুর ১২টায়, অন্য যে কোনো সময় রোগী যদি গ্লুকোজ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো দেখেন বা শারীরিক ভাবে অস্বস্তিবোধ করেন।
কখন রোজা ভাঙ্গতে হবে? রক্তের গ্লুকোজ ৩.৯ বা তার নিচে থাকলে, দিনের যেকোনো সময় গ্লুকোজের মাত্রা ১৬.৭ মিঃমোল/লিঃ বা এর বেশি হলে সাথে সাথে প্রশাবের কিটোন বডি দেখতে হবে, এছাড়া অন্য কোন মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে, সাথে সাথে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে।
গর্ভাবস্থায় রোজা : গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রন না হলে বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়, তাই রোজা না রাখাই ভালো। এই রোজাগুলোর জন্য ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী যা করণীয়, তা করে নিবেন।
সতর্কতা অবলম্বন করুন রোজা শুরুর পূর্ব রাত্রি ও চাঁদ রাত কারন এদুই সময়ে ঔষধের কিছুটা তারতম্য হয়। উক্ত দুই সময়ের ব্যবস্থাপত্র আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন। এখন যেহেতু লক ডাউন, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ), চট্টগ্রাম, ফ্রি টেলি-মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সেবা চালু করেছে। সেখান থেকে ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞের নম্বর জেনে নির্ধারিত সময়ে ফোন করে আপনার চিকিৎসা জেনে নিতে পারবেন ।
রমযানে রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণের জন্য অতি মাত্রায় শকর্রা ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং যেসব রোগী কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খেয়ে থাকেন, তা পূর্বের নিয়মে চলবে। একই ভাবে প্রেশারের ওষুধও পূর্বের নিয়মে চলবে। কিন্তু প্রেশার চেক করে যদি কমে গিয়ে থাকে তবে ঔষধের মাত্রা পুনঃনির্ধারণ করতে পারেন। তবে প্রেশারের ডাইউরেটিঙ জাতীয় ওষুধ সেবন না করাই ভালো। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। রমযান কালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা কিছুটা জটিল। এর জন্য প্রয়োজন রোগীর এ বিষয়ে সঠিক ধারনা ও চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত খাদ্যাভ্যাস গুলো সঠিকভাবে মেনে চলার মানসিকতা। অনেকে মনে করেন, যেহেতু সারাদিন রোজা রেখেছেন, তাই ইফতারে চিনি দিয়ে শরবত বা জিলাপি খেলে এমন কিছু হবে না । কিন্তু তা ঠিক নয়। এতে ডায়াবেটিস অতি মাত্রায় বেড়ে গিয়ে জটিলতা তৈরি করতে পারে যা আপনার পরবর্তী রোজাগুলো সঠিক ভাবে পালনে অন্তরায় হতে পারে। তাই খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও ওষুধ সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকতে হবে।
ধর্মীয় বিধানের সাথে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে একজন ডায়াবেটিক রোগী যেন নির্বিঘ্নে তার ফরয কাজ টি সম্পাদন করতে পারেন তার জন্য রোগী এবং চিকিৎসক উভয়ের সমান অংশ গ্রহন প্রয়োজন। সুস্থ ও নিরাপদে রোজা পালন শেষে একটি করোনামুক্ত ঈদের আনন্দে আপনাদের জীবন উদ্ভাসিত হোক, পৃথিবীটা ফিরে পাক সেই চিরচেনা রূপ, সেই দিনের প্রত্যাশায়।
লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।