বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : চন্দনা-বারাশিয়া নদীর ওপর একটি ব্রীজ নির্মানের দাবি ছিলো সাত গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের। কিন্তু এলাকাবাসীর এ আকুতির প্রতি নজর দেয়নি কোনো জনপ্রতিনিধি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যন্ত দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধি বা সরকারি দপ্তরে বার বার ধর্ণা দিয়েও মেলেনি সমাধান। এ অবস্থায় গ্রামবাসীরা সম্মিলিত ভাবে নিজেদের উদ্যোগে শুরু করেছেন ব্রীজটির নির্মাণ কাজ।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ‘বিলসড়াইল বটতলা‘ নামক স্থানে চন্দনা-বারাশিয়া নদী ওপর এ ব্রীজ নির্মানের কাজ চলছে। ব্রীজটির আয়তন ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং সাড়ে তিন ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি থেকে ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। গ্রামবাসীদের ধারণা আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে নির্মাণ করা সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করছেন তারা।
গতকাল সোমবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ময়না ইউনিয়নের বিলসড়াইল, বান্দুগাম, ঠাকুরপুর, হাটুভাঙ্গা, মিরেরচর, কান্দাকুল ও ইচাখালিসহ ৭টি গ্রামের জনসাধারণের যাতায়াতে সহজ হয় ব্রীজটি নির্মাণ হলে। এই রাস্তা দিয়ে ওই এলাকার লোকজন সাতৈর বাজারসহ কয়েকটি হাট-বাজারে যাতায়াত করে। এই জায়গায় ব্রীজ না থাকায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কমপক্ষে এক থেকে দেড় কিলোমিটার ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে ওই এলাকাবাসীর।
ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে ওই ৭টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ উপকৃত হবে। চন্দনা-বারাশিয়া নদী পাড়ি দিয়ে কেএফ করিম উচ্চ বিদ্যালয়, সাতৈর উচ্চ বিদ্যালয়, সাতৈর প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতৈর দাখিল মাদ্রাসা, সাতৈর কিন্ডারগার্ডেন, একতা একাডেমীর বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ও সাতৈর বাজারের লোকজনসহ প্রায় সহ¯্রাধিক লোকজন প্রতিদিন যাতায়াত করে। বর্ষাকালে ওই জায়গায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়।
সাতৈর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাসেল জানান, ব্রীজ না থাকায় তারা ঝুঁকি নিয়ে এত দিন ধরে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেত। এখন বিদ্যালয়গামী শিশুরাসহ আমরা ব্রীজটির নির্মাণ হলে নির্বিঘেœ পারাপার হতে পারবো। তবে ওই সাঁকো দিয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়ত করতে হতো। মাইক্রোবাস, অটোবাইক কিংবা মোটরসাইকেল ওই গ্রামগুলি থেকে বের হয়ে বোয়ালমারী উপজেলা সদর, ফরিদপুর শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় যেতে তাদের এক কিলোমিটার পথ ঘুরে এলানখালী-সাতৈর অথবা ময়না-বোয়ালমারী সড়ক দিয়ে যেতে হয়।
এলাকাবাসী জানান, গত ১৫ বছর ধরে তারা চন্দনা-বারাশিয়া নদীর ওই জায়গায় একটি ব্রীজ নির্মানের জন্য বিভিন্ন ব্যাক্তি প্রতিষ্টানের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমনকি স্থানীয় সাংসদের কাছে তারা এ সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া কয়েকবার আবেদন করেছেন উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে। কিন্তু তাতেও কোন ফল জোটেনি। এ কাজে সরকারি-বেসরকারি কোন সহায়তা না পেয়ে গ্রামবাসীরা নিজেরা স্বেচ্ছায় গ্রামে গ্রামে টাকা তুলে ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। চলাচলের পথে অনেকেই বাঁশের সাকো থেকে খালের মধ্যে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এমনকি অনেকের মোবাইল ফোনও পড়ে গেছে নদীর মধ্যে। এ অবস্থায় গত দুই মাস আগে এলাকাবাসী নিজেদের টাকায় ওই জায়গায় একটি সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেন।
ব্রীজ নির্মানের মূল উদ্যোক্তা বিলসড়াইল গ্রামের শেখ হারুন-অর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রায় দুই মাস আগে এ ব্যাপারে এলাকাবাসীকে নিয়ে একটি সভা করি। ওই সভায় নিজেদের টাকায় ব্রীজটি নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই সভায় গ্রামের বিত্তশীলসহ সর্বস্তরের লোকদের কাছে ব্রীজ নির্মানের জন্য আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়। ইতিমধ্যে ১০৫জন গ্রামবাসীর মাধ্যমে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা সংগ্রহ হয়। এ অবস্থায় গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ব্রীজ নির্মানের কাজ শুরু হয়। বালু, রড, সিমেন্ট, খোয়া দিয়ে নদী ওপর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। ব্রীজ নির্মাণের স্থানে অংশের মেশিনের মাধ্যমে পানি সরাতে খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা।  এখন চলছে সেতুর পিলার বা খাম্বা নির্মানের কাজ। ওই ব্রীজের জন্য মোট পাঁচ জোড়া খাম্বা নির্মাণ করা হবে। একাজে নিয়োজিত স্থানীয় রাজমিস্ত্রিদের প্রতি বর্গফুট বাবদ দিতে হবে ৩৫০ টাকা।
তিনি আরো বলেন, ব্রীজ নির্মাণের জন্য যে টাকা তোলা হয়েছে আমরা আশা করছি তাতে পিলারগুলির নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। পরবর্তিতে পাটাতন ঢালাই দেওয়ার জন্য আরো টাকার প্রয়োজন হবে। তবে আমাদের তহবিলে টাকা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ইচ্ছা করলে কেউ আমাদের এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির মো. সেলিম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে ব্রীজ নির্মানের জন্য কোন বাজেট নেই। ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ব্রীজ নির্মাণ করা সম্ভব না। তবে গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগে যে ব্রীজটি নির্মাণ করছেন সেটি একটি শুভ উদ্যোগ। এ কাজে আমার কিছু করার থাকলে করবো।