• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ ইং
ঝামেলা বাধাতে পারে ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ

শতাধিক ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী কোম্পানি এখন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন জরুরি ভিত্তিতে কাদের প্রদান করা হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুবার ইঙ্গিত দিয়েছে যে এটা হয়তো তাদের নিজের দেশেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদান করা হবে। ভারত ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোও একই ধরনের অবস্থান গ্রহণ করতে যাচ্ছে। ঘরোয়া বাজারে অগ্রাধিকারের এই প্রক্রিয়াকে বলা হচ্ছে ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ।

সেইন্ট লুইস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর হেলথ ল স্টাডিজের একজন গবেষক হিসেবে আমি ভ্যাকসিনের পথে এই দৌড়কে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ সব মানুষের ভ্যাকসিন পাওয়ার ন্যায়সংগত অধিকারকে খর্ব করবে।

ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ

ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ তখনই ঘটে যখন একটি দেশ তাদের জনগণের জন্য ভ্যাকসিন প্রস্তুত হওয়ার আগেই তার সরবরাহকে নিশ্চিত করে রাখে। সরকার এবং সম্ভাব্য প্রস্তুতকারকের মধ্যে প্রাক-ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে এটা সম্পন্ন হয়।

মার্চে হোয়াইট হাউজের প্রতিনিধি যোগাযোগ করেন জার্মান বায়োটেক কোম্পানি কিউরভ্যাকের সঙ্গে, যারা কিনা কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভ্যাকসিনের ওপর একচ্ছত্র অধিকার পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জার্মান সরকার মন্তব্য করে, জার্মানি বিক্রির জন্য না। অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের চিফ অব স্টাফ তাত্ক্ষণিকভাবে বলেছিলেন, জার্মানির বানানো ভ্যাকসিন জার্মানি ও বিশ্বের জন্য উপলব্ধ হবে।

জুনের ১৫ তারিখ জার্মান সরকার ঘোষণা দিয়ে জানায়, তারা ৩০০ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করছে কিউরভ্যাকের ২৩ শতাংশ শেয়ারের জন্য।

এপ্রিলে সানোফির সিইও (ফরাসি এই কোম্পানিও কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজ করছে) জানান, তারাও অর্থায়ন পেয়েছে ইউএস বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কাছ থেকে। তারা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এখন ভ্যাকসিনের সবচেয়ে বড় প্রি-অর্ডার করার অধিকার আছে। তবে জনগণের প্রতিবাদ ও ফরাসি সরকারের চাপের মুখে সানোফি নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে এবং বলেছে তারা কোনো দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করবে না।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটও কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তারাও ইঙ্গিত দিয়েছে ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সফল হলে আগে বেশির ভাগ ভ্যাকসিন ভারতেই বণ্টন করা হবে। একই সময়ে ভারত, রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে করা ভ্যাকসিন বণ্টন এবং চিকিৎসা কর্মসূচিতে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

নতুন কিছু নয়

ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ নতুন কিছু নয়। ২০০৯ সালে এইচ১এন১ ফ্লু মহামারীর সময় শুরুর দিকে কিছু ধনী দেশ এমন প্রাক-ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল বেশ কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সঙ্গে। যারা সে সময় এইচ১এন১ ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছিল। সে সময় দুই বিলিয়ন ভ্যাকসিন উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র একাই ছয় লাখ ডোজ নেয়ার জন্য সমঝোতা করেছিল। উন্নত অর্থনীতির প্রতিটি দেশ আগাম ক্রয়ের জন্য সে সময় সমঝোতা করেছিল। এরপর মহামারীর প্রকোপ কমে এলে ভ্যাকসিনের চাহিদাও কমে আসে। তখন উন্নত দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোকে ভ্যাকসিন অনুদান হিসেবে দিতে সম্মত হয়।

ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের সবচেয়ে তাত্ক্ষণিক প্রভাবটা পড়ে অনুন্নত দেশগুলোর ওপর, যাদের সম্পদ কম ও দরকষাকষির ক্ষমতাও কম। ফলে সেসব দেশের জনগণ জনস্বাস্থ্যসেবা লাভ করতে পারে না। দেখা যায় অনুন্নত দেশের যেসব মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে, তাদের বদলে এখানে ভ্যাকসিনের বরাদ্দ পায় উন্নত দেশের মাঝারি ঝুঁকিতে থাকা মানুষেরা। ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ ভ্যাকিসন বিকাশ ও বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যনীতির বিরুদ্ধেও পরিচালিত হয়।

কীভাবে এটি উল্টোদিকে চালিত হয়

যুক্তরাষ্ট্র ওষুধের উচ্চ দামের জন্য কুখ্যাত। এখন যুক্তরাষ্ট্র সরকার কি ভ্যাকসিনের একচেটিয়া অধিকার পেতে পারে, যার দাম অনেক বেশি হতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাসম্পন্ন মানুষেরাই কেবল ভ্যাকসিন সেবা পেতে সক্ষম হবে। এটা কোনো কাল্পনিক দৃশ্য নয়। ইউএস সেক্রেটারি অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস অ্যালেক্স আজার বলেছেন, সরকার কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে সামর্থ্যের নিশ্চয়তায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না।

তিনি বলেছেন, সরকার চায়, বেসরকারি খাতগুলো যেন ভ্যাকসিনের আবিষ্কার ও প্রস্তুতে বিনিয়োগ করে। তবে সরকার যদি দাম ঠিক করে দেয়, সেক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো হয়তো বিনিয়োগ করবে না। কারণ তাতে লাভজনক না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এমন চিন্তা বেশ সমালোচিত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এটা বাজে জনস্বাস্থ্যনীতি। এ অবস্থায় কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন যাদের প্রয়োজন তাদের জন্য যদি সাশ্রয়ী করা না হয়, তবে দরিদ্র মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন সেটি অন্যান্য দিক থেকেও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কী করা প্রয়োজন

জাতীয়তাবাদ বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যনীতির নিরিখে খুবই বিব্রতকর ব্যাপার। যদিও এমন প্রাক-ক্রয় চুক্তি আটকানোর জন্য কোনো আন্তর্জাতিক নীতিমালাও নেই। তাই এ রকম চুক্তির ব্যাপারে কোনো ভুল-ত্রুটিও নেই। ভ্যাকসিন সাধারণত অন্যান্য মেডিকেল উপকরণের মতো অনেক বেশি উৎপাদনও করা হয় না। তবে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে প্রাক-ক্রয় চুক্তি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকদের জন্য উৎসাহ প্রদানকারীও হতে পারে। জেনেভাভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গাভিও একই ধরনের প্রক্রিয়া ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য। তবে আমি ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদকে এই চুক্তির অপব্যবহার হিসেবেই দেখছি। তাই এক্ষেত্রে সবার মাঝে আচরণগত ও মানসিকতার পরিবর্তন আনাও জরুরি।

স্ক্রলইন

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

জানুয়ারি ২০২৫
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ডিসেম্বর    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।