• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
মূর্তি বা ভাস্কর্য মানেই শিরকের উপকরণ নয়, এটি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি

ছবি সংগৃহিত

‘মূর্তি বা ভাস্কর্য মানেই শিরকের উপকরণ নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট। ভাস্কর্য স্থাপনকে মূর্তি স্থাপনের সঙ্গে তুলনা করে এটাকে শিরক

সংস্কৃতি বা বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে আখ্যা দেওয়াকে মামা বাড়ির আবদার বলে মনে করেন সংগঠনের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে জোটের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাঙালি সংস্কৃতি বিজাতীয় সংস্কৃতি নয়, এটি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতিতে যেসব জিনিস শিরক বা আল্লাহর সঙ্গে অংশীবাদিতার মিশ্রণ ছাড়াই পালিত হয়ে আসছে, সেটিকে হঠাৎ করে শিরক সংস্কৃতি বলা নোংরা রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়।’ তিনি আরও বলেন, বুখারি শরিফের শুরুতেই রয়েছে বিখ্যাত হাদিস, ‘ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়্যাত’ (নিয়তের ওপর কাজ নির্ভরশীল)। মূর্তি বা ভাস্কর্য মানেই শিরকের উপকরণ নয়। হযরত আয়েশার (রা.) ঘরে ঘোড়ার ছোট মূর্তি রাখা ছিল (সূত্র : বুখারি শরিফ-কিতাবুল আদাব)। কই, রাসুল (সা.) তাঁকে তো নিষেধ করেননি। এই ছোট পুতুল বা মূর্তি পূজার জন্য ছিল না; বরং খেলার জন্য ছিল। তাই রাসুল (সা.) নিষেধ করেননি। একইভাবে যেসব ভাস্কর্য সৌন্দর্যচর্চা ও রুচিশীলতার পরিচয় বা ঐতিহাসিক কোনো ঘটনার স্মৃতিফলক হিসেবে স্থাপিত হয়, তা ইসলামী শিক্ষানুযায়ী নিষিদ্ধ নয়।’ তিনি বলেন, ‘ভাস্কর্য, প্রতিমা পূজা, মূর্তি এক জিনিস নয়। পবিত্র কোরআনের সুরা সাবার ১৩ নম্বর
আয়াতে ভাস্কর্য নির্মাণের মূর্তি বা ভাস্কর্য মানেই শিরকের উপকরণ নয়, এটি আমাদের
উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘উহারা সুলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী প্রাসাদ, ভাস্কর্যসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত ডেগ নির্মাণ করিত। আমি বলিয়াছিলাম, হে দাউদ-পরিবার, কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তোমরা কাজ করিতে থাক। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ।’ প্রতিমা পূজার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের সুরা ইব্রাহিমের ৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘স্মরণ কর, ইব্রাহিম বলিয়াছিলেন, হে আমার প্রতিপালক, এই নগরীকে নিরাপদ করিও এবং আমাকে ও আমার পুত্রগণকে প্রতিমা পূজা হইতে দূরে রাখিও।’ সুরা সাবার ১৩ নম্বর আয়াতের তামাসিলা (ভাস্কর্য) এবং সুরা ইব্রাহিমের ৩৫ নম্বর আয়াতের আসনাম (প্রতিমা পূজা) এই দুটি শব্দের অর্থকে বিকৃত করে যারা একই অর্থে মূর্তিকে ভাস্কর্য বানাতে চাচ্ছেন তাদের বলব, ‘অনুগ্রহ করে কোরআনের শব্দের অর্থকে ভুল ব্যাখ্যা করে মাঠ গরম করার চেষ্টা করবেন না। কারণ এ দেশের মানুষ আপনাদের ’৭১ সালেও চিনতে ভুল করেনি, এখনও করবে না। ১৯৫২ সালের ভাষাশহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নামে স্থাপিত স্মৃতিভাস্কর্যের সামনে গিয়ে যখন বাংলাদেশের মুসলমানরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে, তখন তারা কেউই সেখানে ইবাদতের নিয়তে বা প্রার্থনার নিয়তে যান না। সেখানে জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শহীদদের ত্যাগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয় মাত্র।’
মূতি বা ভাস্কর্যমাত্রই শিরকের উপকরণ নয় দাবি করে সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি আরও বলেন, ‘যেটি যে উদ্দেশ্যে বানানো হয়, সেটিকে সেভাবে বিবেচনা করতে হবে। হযরত মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রাসুলের (সা.) প্রিয় স্ত্রী ছিলেন। তাঁর কয়েকটি পুতুল ছিল বলে হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি তাঁর বান্ধবীদের সঙ্গে এসব পুতুল নিয়ে খেলা করতেন। কই, মহানবী (সা.) তো তাকে শিরক বলে এসব পুতুল নিয়ে খেলতে বারণ করেননি। আবার এসব পুতুল শিরকের উপকরণ এমন কথাও কখনও বলেননি। রাসুলের (সা.) বাসগৃহে পুতুলের অবস্থান স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছে, পুতুল বা ভাস্কর্যমাত্রই শিরকের উপকরণ নয়। কট্টর ওয়াহাবিপন্থি হুজুররাও এটি জানেন, প্রাণীর ভাস্কর্য মানেই শিরক নয়। সৌদি আরবের জেদ্দার মূল কেন্দ্রে ‘দি ফিস্ট’ নামে একটি ভাস্কর্য আছে, এটি একটি মুষ্টিবদ্ধ হাতের ভাস্কর্য। আরও আছে ঘোড়ার ও মাছের ভাস্কর্য; একইভাবে মুসলিম অধ্যুষিত সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও মিসরে রয়েছে ঘোড়া ও অন্যান্য জীবের ভাস্কর্য। সুতরাং বলা যায়, ভাস্কর্য জীবের হোক বা জীব দেহের কোনো অংশের হোক, তা যদি শিরক বা পূজার উদ্দেশ্যে নির্মিত না হয়, তবে এতে দোষের কিছু নেই।’
চরমোনাইর পীর মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করীম এবং হেফাজতের নেতা মামুনুল হককে উদ্দেশ করে মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, ‘আমরা বলব, আপনাদের দেশবিরোধী এসব আন্দোলন বাস্তবায়নের জন্য জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে গিয়ে বিল উত্থাপন করে তা পাস করুন।’ ইসলামী জোটের সভাপতি বলেন, ধর্মের নাম নিয়ে সরল মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং গুজব রটিয়ে তাদের রাজপথে নামিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করা ধার্মিকতার লক্ষণ নয়। এ ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যেকোনো সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। তা ছাড়া মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না, কারণ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে (ইতঃপূর্বে) অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে বলব, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশের শিক্ষাবিদ ও দেশপ্রেমিক ইসলামী চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’ গঠন করে বিজ্ঞানভিত্তিক এককেন্দ্রিক, গণমুখী, অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা চালু করা, জাতীয় চিন্তা-চেতনায় সব শিক্ষার্থীকে এক ও অভিন্ন মনস্কে গড়ে তোলা। বিশ্বায়নের সামগ্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যোগ্য নাগরিক হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জোটের সহসভাপতি মুফতি জোবাইদ আলী, ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ আব্দুস সোবহান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আবুল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মোসলেহ উদ্দিন ফোরকান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা ফারুক হোসাইন, মুফতি মাওলানা শরীফ হোসাইন প্রমুখ।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।