রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার এখন কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। দেশের সকল শ্রেণির মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে স্বাস্থ্যখাতের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে এনে সংবিধানের মৌলিক নীতির ভিত্তিতে জনস্বাস্থ্য খাত পূর্ণগঠন করা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) দুপুরে জাতীয় সংসদের বাজেট বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বাদশা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা বলেছিলেন। সেটা যদি আমরা ধারাবাহিকভাবে বিকশিত করতাম, তৃণমূলে যদি স্বাস্থ্যব্যবস্থার একটা ভিত্তি গড়ে তুলতে পারতাম তাহলে আজ যত বড় করোনা আসুক না কেন, তাকে মোকাবিলা কররার পথ খুঁজে পেতাম। কিন্তু আমরা সেই পথ ধরে এগোইনি। বরং আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একটা অভিযোগ আছে, এন এন-৯৫ মাস্ক কিনতে গিয়ে দুর্নীতি করা হচ্ছে এই করোনার মধ্যে। এখন যদি এই অভিযোগ আসে তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কোন কিছু হতে পারে না। অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমাদের পাশের দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন, বিগত দিনগুলোতে স্বাস্থ্যখাতে কি রকম অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। আমাদের কি তাই হয়েছে? আমাদের জনস্বাস্থ্যখাতকে কি যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়েছে?বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তাই অর্থমন্ত্রীকে বলব, আপনি সংবিধানকে পড়ে দেখুন, বঙ্গবন্ধু এই স্বাস্থ্যখাতকে কতখানি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সেটা একটু দেখবেন। আমি মনে করি সংবিধান পড়ে বাজেট তৈরি করা দরকার। সংবিধান না জেনে বাজেট তৈরি করতে গেলে বাংলাদেশের গতিমুখ পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন আমরা বলি- আমরা কানাডা হব, আমরা অ্যামেরিকা হব। এখন এই সমস্ত কথা আর আসে না। এই সমস্ত বিচ্ছিন্ন কথা এই ভ্রান্তি থেকে আসে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের আক্রমণে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভঙ্গুরতার চরম পর্যায়ে তখনও তিনি স্বাস্থ্যখাতের জন্য ৪১ হাজার কোটি বরাদ্দের কথা বললেও, আসলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য কেবলমাত্র বরাদ্দ করেছেন ২৯ হাজার কোটি টাকা। আর তাও দু’টি বিদেশী সাহায্য পুষ্ট প্রকল্প বাদ দিলে দাঁড়াবে ২৫ হাজার কোটি টাকায়। অথচ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দু’মাসে আমরা কি দেখলাম। হু করোনা ভাইরাসকে বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি হুমকি বলে ঘোষণা করায় তিন মাস পর আমাদের দেশে সাত মার্চে করোনা শনাক্ত হল, তখন প্রস্তুতির সেই মূল্যবান সময় আমরা হারিয়ে ফেলেছি।বাদশা বলেন, হু যখন বলছে টেষ্ট, টেষ্ট এবং টেষ্ট তখন ওই টেষ্ট সীমাবদ্ধ রেখেছি রোগতত্ব বিভাগের আওতায়। দেশে বিদ্যমান ল্যাবগুলো তো ব্যবহার করলামই না, নতুন ল্যাবও স্থাপন করা হলো না। প্রথম থেকেই কীট সংকট, পিপিই সংকটে ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধারা হা হুতাশ করে মরছে, আমরা দেখলাম জেলার কর্তাব্যক্তিরা সেগুলো গায়ে চড়িয়ে ফটোসেশন করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম পর্যায়ে গুরুত্ব পেল গার্মেন্টস শিল্পসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রণোদনা। কিন্তু করোনা সংক্রমণ যেন সামাজিক সংক্রমণে রূপ না নিতে পারে সেই লক্ষ্যে কোন ব্যবস্থা দেখলাম না। চীন থেকে ফেরত ছাত্রদের কোয়ারাইন্টাইনে রাখা হলো। তারপর প্রবাস থেকে বিশেষ করে ইতালী থেকে আমাদের যে কর্মীরা ফিরে এলেন তারা অব্যবস্থাপনার জন্য বিক্ষোভ করায় ‘নবাবজাদা’ বলে গালি দিয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হলো। পাশের দেশ ভারতে ‘লকডাউন’ ঘোষিত হয়েছে, অন্যান্য দেশেও লকডাউন, কিন্তু আমাদের সরকারের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হলো ‘লকডাউন’ হচ্ছে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। ঘোষণা করা হলো সাধারণ ছুটি। ফলে পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতি হতে থাকলো।
এ ধরনের কৌশলের অন্তরালে কি মনোভাব? তিনি আরও বলেন, এখন নতুন কৌশল সমস্ত এলাকা গুলোকে রেড, ইয়লো, গ্রীন জোনে ভাগ করা হচ্ছে। এই সমস্ত এলাকার জনগণের মধ্যে সংক্রামন রোধে কি কৌশল নেওয়া হবে। আমরা এটি উপলব্ধি করতে পেরেছি যদি লকডাউন ঘোষণা করা হতো তাহলে দ্বায়িত্ব নিতে হতো সংগঠিত সামাজিক শক্তি, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক কর্মী, প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সম্মিলিতভাবে দ্বায়িত্ব নেওয়ার প্রশ্ন ছিল। তখনই কেবলমাত্র জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্ববদ্ধ করা ও ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতো। এই অবস্থাতে এমন দাঁড়াল যে প্রণোদনা প্যাকেজ, ত্রাণ সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ও সময় উপযোগী সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়লো। স্থানীয় সরকারের প্রায় ১০০ জন জনপ্রতিনিধিকে পদচ্যূত করা হলো। এখন বাকি তিন মাসের প্রস্তুতি পর্ব কি দেখি? এখন অর্থনীতির প্রয়োজনেই যখন সাধারণ ছুটি তুলে নেয়া হলো, তথাকথিত লকডাউন শিথিল করা হলো তখন করোনা সংক্রমণ তৃতীয় স্টেজে। শনাক্তকরণে আমরা চীনকে ছাড়িয়েছি, এখন পৃথিবীর দশম দেশ। করোনা রোগী-সাধারণ রোগী হাসপাতালের দরজায় ঘুরছে, মৃত্যুবরণ করছে, অক্সিজেন সিলিন্ডার নাই, আইসিইউ নাই। অর্থমন্ত্রী কোভিড মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দিয়েছেন। কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে এর ব্যয় হবে? ইতিমধ্যে বালিশ-পর্দা কাণ্ডের মত, এন-৯৫ মাস্ক কেলেংকারী হয়েছে। ৭৫০ টাকায় মাস্ক ৫০০০ টাকায় কেনার অভিযোগ উঠেছে। আরটি-পিসিআর ২০০৯ সালেরটা কেনা হচ্ছে দ্বিগুণ-ত্রিগুণ দামে তখন এই থোক বরাদ্দের ব্যয়ের চরিত্র কি দাঁড়াবে সেটা বোঝা যায়। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জাতীয় ট্রাক্স ফোর্সের কথা বলেছিলাম। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছেই জবাবদিহি করবেন। সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার স্লোগানকে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই বরাদ্দ জিডিপির ন্যূনতম ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এই করোনা ভাইরাসকালে কেবল নয়, আরও বহুদিনি ধরেই কৃষিই আমাদের রক্ষা করবে। সেই খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি, প্রণোদনা, যান্ত্রীকিকরণে অর্থ বরাদ্দ হলেও এখানেও সেই একই বিপদ। কৃষক তার ধানের মূল্য এবার কিছুটা পেলেও খাদ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কিছু চালকল মালিক-আড়তদাররা। তাই খাদ্য উৎপাদন হলে।