• ঢাকা
  • বুধবার, ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ ইং
কভিড-১৯-এর ইমিউনিটি নিয়ে যত প্রশ্ন?

আমরা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারি না কীভাবে কভিড-১৯-এর ইমিউনিটি কাজ করে। আমরা প্রতিনিয়ত একটু একটু করে ভ্যাকসিনের কাছাকাছি যাচ্ছি এবং হার্ড ইমিউনিটি পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে আমরা বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক কিছু ধীরে ধীরে খুলতেও শুরু করেছি। যার ফলে বাড়ছে অনিশ্চয়তাও। এখানে আমরা এমন কিছু প্রশ্ন নিয়ে আলাপ করব, যার উত্তর আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি।

আমরা কতটা ইমিউনিটির কথা বলছি?

যখন সাধারণ মানুষ ইমিউনিটি নিয়ে কথা বলে, তারা যা বোঝাতে চায় তা হলো রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়। কিন্তু বেশির ভাগ সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে ইমিউন ও ইমিউন নয়-এর পথটা খুব একটা সহজ নয়। বরং অনেকটাই অস্পষ্ট। টুলেন্স ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট রবার্ট গেরি ইঙ্গিত দিয়ে ফ্লু ভ্যাকসিনের কথা বলেছেন। যেখানে বলা হচ্ছে, এই ভ্যাকসিন ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারে না। যদিও এটি ডিজাইন করা হয় গুরুত্বপূর্ণ সংক্রমণ রোধ করার জন্য।

যখন আমরা কভিড-১৯-এর ইমিউনিটি নিয়ে কথা বলছি, আমরা মূলত নির্দেশ করি আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার দিকে। যদিও এটা কিন্তু ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে। একটি প্রকাশিত প্রিপ্রিন্ট গবেষণা লন্ডনের রোগীদের শরীরে অ্যান্টিবডি পরিমাণ করে দেখেছে। যেখানে দেখা গেছে ২ থেকে ৮.৫ শতাংশ রোগীর শরীরে শনাক্তযোগ্য অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি। এই দলে যারা সংক্রমণ থেকে বেঁচে গেছে (যারা সাধারণত তরুণ), তারা সাধারণত ইমিউন সিস্টেমের কোষ মধ্যস্থ অস্ত্রের মাধ্যমে লড়াই করে বেঁচে গেছে। যেখানে শ্বেত রক্তকণিকা এবং সাইটোকিনস সরাসরি রোগজীবাণু মারার কাজ করেছে। এখানে ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডির তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না।

সংক্রমণের পর কতদিন ইমিউনিটি কাজ করে?

এ সম্পর্কে খুব পরিষ্কার ধারণা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিশ্বের নানা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অনেক রিপোর্টে দ্বিতীয়বার কভিড-১৯-এ সংক্রমিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এটা নিশ্চিত নয় যে কেন এমনটা হচ্ছে। এটা অবশ্য জানা গেছে যে অন্যান্য যেসব করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব রয়েছে সেগুলো সংক্রমণ থেকে সাময়িকভাবে ইমিউনিটি প্রদান করে। কখনো কখনো তা কয়েক মাসের বেশি টিকে থাকে না। কভিড-১৯ও হয়তো একই পথে হাঁটছে, যদিও সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

কোন ফ্যাক্টরগুলো ইমিউনিটিকে প্রভাবিত করে?

হার্ভার্ড টিএইচ চান স্কুল অব পাবলিক হেলথের সারাহ ফরচুন যেমন ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, আমরা সবাই জানি যে সংক্রামক রোগ থেকে পাওয়া ইমিউনিটি যুক্ত থাকে সংক্রমণ চলাকালে ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়ার শক্তি ও প্রতিরোধের সঙ্গে। একটি সংক্রমণ যার ফলে গুরুতর উপসর্গ দেখা যায় তা কিন্তু শক্তিশালী এবং দীর্ঘমেয়াদি ইমিউন সিস্টেমের দিকে আমাদের চালিত করে। আবার বিপরীত দিকে তাকালে আমরা যা দেখি তা হলো, মৃদু উপসর্গ কিংবা উপসর্গবিহীন রোগের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডির স্তর অনেক কম থাকতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে নেচার মেডিসিনের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর দেহে ইমিউন সিস্টেমের এমন আচরণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ গবেষণায় গবেষকরা উপসর্গহীন কভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের ছোট একটি দল নিয়ে কাজ করেছে। যেখানে তারা দেখেছে, সেসব রোগীর শরীরে খুব সামান্য পরিমাণেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে এই লোকগুলো কভিড-১৯ থেকে ইমিউন নয়। ফরচুন যদিও বলেছেন, আপনি চাইলে এখনই কোনো ধরনের সমাধানে পৌঁছতে পারেন না। কারণ এমনও হতে পারে যে সেই নিম্ন স্তরীয় অ্যান্টিবডিও হয়তো আপনাকে অসুস্থ হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।

অবশ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা এখনো এ বিষয়ে পরিষ্কার নয় যে উপসর্গবিহীন সংক্রমণ এবং উপসর্গ দেখা যায় এমন সংক্রমণ ইমিউনিটির দিক থেকে ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু উপসর্গবিহীন রোগীদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টেস্ট করা হয় না এবং শেষ পর্যন্ত তারা অনির্ণেয়ই থেকে যায়। আবার উপসর্গহীনতার যোগ্যতা অর্জনের সাবর্জনীন সংজ্ঞাটা কেমন তাও আবার নিশ্চিত কিছু নয়। এখনো পরিষ্কার নয় যে এটা কি তাহলে উপসর্গের অনুপস্থিতিকে বোঝাবে? আর যারা মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে তাদের সম্পর্কেই বা কী বলা যাবে?

অন্যান্য গবেষণা বলছে, যাদের ইমিউনের প্রক্রিয়ায় প্রদাহ আছে, তারা অনেক বেশি শনাক্তযোগ্য এবং অনেক শক্তিশালী, বলেন ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি কলেজ অব মেডিসিনের ডিন চার্লস কাইর্নস। সামনে আসতে থাকা সব প্রমাণ বলছে কোষ মধ্যস্থ ইমিউন প্রতিক্রিয়ার কথা, যা কিনা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

আবিষ্কারের পথে থাকা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এর অর্থ কী হবে?

ভ্যাকসিনেশন নিয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত কিছু জানি না। যেমনটা বলা হচ্ছিল, আমরা এখনো জানি না ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে আমরা কভিড-১৯ থেকে কেমন ইমিউনিটি পাব তা এখনো নিশ্চিত নয়। আমরা কি আদৌ পুরোপুরি সুরক্ষা পাব নাকি কেবল বাজে উপসর্গগুলোর হাত থেকে বাঁচতে পারব? ফরচুন অবশ্য বলেন, সম্ভবত আমরা কভিড-১৯ থেকে পূর্ণ সুরক্ষা পাব। যদিও আমরা নিশ্চিতভাবে তা বলতে পারছি না এবং এটা এমন কিছু নয় যে আমরা চাইলে অ্যান্টিবডি লেভেল পেয়ে যাব। তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের আগে কিছু বলা যাবে না (যা কিনা সরাসরি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা মাপার ক্ষেত্রে জড়িত)। এর ফলে আমরা অ্যান্টিবডি লেভেল এবং ইমিউনিটির মধ্যকার সম্পর্ক বুঝতে পারি। এছাড়া ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে কী ধরনের ইমিউন রেসপন্স প্রয়োজন, সেটি বুঝতে পারা যায়। যার ফলে রোগ থেকে সত্যিকার অর্থে সুরক্ষা পাওয়া যায়।

তবে কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে একবার রোগাক্রান্ত হওয়ার পরও যদি ভালোভাবে ইমিউনিটি অর্জন সম্ভব না হয়, তবে সেক্ষেত্রে সবার জন্য ভ্যাকসিনেশন প্রয়োজন হবে। এছাড়া ভ্যাকসিনের সুরক্ষা এবং কার্যকারিতার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন আছে, যারা অতীতে সংক্রমিত হয়েছে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য।

টেকনোলজি রিভিউ।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

জানুয়ারি ২০২৫
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ডিসেম্বর    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।