হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
পচন ধরেছে পায়ে। মাছি পড়ছে পচন ধরা স্থানে। কিছুদিন হলো সেই পচনধরা পায়ে বাসা বেঁধেছে পোকা। চিৎকার চেঁচামেচি ও কান্নায় কেউ কেউ ফিরে তাকালেও পচনধরা পায়ের দুর্গন্ধে কেউ আর কাছে ভিড়ছেনা। চিকিৎসকরা হাসপাতালের ভর্তি হওয়া বেড থেকে নামিয়ে ফেলে রেখেছে পথের ধারের ধুলোবালির ফ্লোরে।
এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম তিনি হলেন ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগ থেকে ফেলে দেওয়া রোগী রিনা (৩০)। এখন হাসপাতালটির ট্রমা সেন্টারের গেটে তার অবস্থান। যিনি, তার নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেননা। যার, ডান পায়ে ধরেছে পচন। কিছুদিন যাবৎ সে পায়ে বাসা বেঁধেছে পোকা। দেহে কোনোরকম এক টুকরো পোশাক জড়ানো। তাও মাঝেমধ্যে সে ফেলে দিচ্ছে। পচন ধরা পায়ে পোকা বাসা বাধার পর থেকে তার চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর ডাক্তারের দায়িত্ববোধের অভাবে এখন সে মৃত্যুর প্রহর গুনছে বলে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুই মাস আগে পায়ে আঘাত পেলে এ হাসপাতালে কে বা কাহারা ফেলে রেখে যান। ফেলে রাখা দেখে ;পরে নাসিরউদ্দিন নামে পুলিশের এক সদস্য উদ্যোগ নিয়ে হাসপাতালটির চিকিৎসক ও নার্সদের অনুরোধ করে পায়ে ব্যান্ডিসহ কিছুটা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, কিনে দেন খবারও। কিন্তু, হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের অবহেলায় তার (রিনা) পায়ে পচন ধরে। পরবর্তীতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির অর্থোপেডিক্স বিভাগ থেকে ওই হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারের গেইটে ফেলে রাখা হয়েছে। চিকিৎসার অভাবে পচন ধরা পায়ে এখন পোকা বাসা বেঁধেছে। তার পা-টি কেটে ফেললে হয়তো বা সে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারবে; এমনটাই বললেন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী।
তবে, চিকিৎসা অবহেলার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবী করেন হাসপাতালটির অর্থোপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাহীন জোয়ার্দার।
তিনি বলেন, সে হাসপাতালটিতে আসার পর থেকেই আমরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। তাকে ওষুধপত্র ও খাবার দেওয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগত টাকা দিয়েও কিছু কিছু সময় খবার ও ওষুধ কিনে দিচ্ছেন বলেও দাবী এ চিকিৎসকের।
তার পা কাটার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ চিকিৎসক বলেন, পা কেটে না হয় দিলাম; তবে তাকে পরবর্তীতে দেখভাল করবে কে? কেউ যদি তার পক্ষে দায়িত্ব নেন, তবে এব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়। তিনি আরও বলেন, অনেকসময় পা না কেটেও পোকা ধরার পর ব্যান্ডেজ করে চিকিৎসা দেওয়া হলে রোগী সুস্থ হন।
এব্যাপারে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. দীপক কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। এব্যাপারে কি করা যায় তা ওই বিভাগের ডাক্তারদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, এসময় এই প্রতিবেদক সংবাদকর্মী পরিচয় দিলে; তাৎক্ষণিক হাসপাতালের একজন স্টাফকে ঘটনাস্থলে পাঠান বিষয়টি দেখার জন্য।
এব্যাপারে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমরা কিছুদিন আগে কিছু ওষুধপত্র কিনে দিয়েছিলাম তাকে। কিন্তু, তাকে দেখাশোনার জন্য লোক দেওয়া সম্ভব নয়। যদি, আবার ওষুধ দরকার হয় প্রয়োজনে ওষুধ কিনে দেওয়ার চেষ্টা করবো।