সনতচক্রবর্ত্তী:আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমউদ্দিন ছোট্র বাড়ি রসুলপুরে যাও’ পল্লীকবি জসীম উদ্দীন’র বিখ্যাত এই কবিতা আমরা সবাই পড়েছি। কবিতার মতো আসমানী নাহলেও কাছাকাছি একজনের সাথে দেখা হলো ফরিদপুর জেলার মধুখালি উপজেলা কামারখালি বাজার সংলগ্ন ।
তার নাম,কৃষ্ণা দত্ত । প্রায় ২৫ বছর আগে মেয়ে ও স্ত্রীকে রেখে চলে যান স্বামী দিলীপ কুমার দত্ত । সেই থেকে অন্যের বাড়ি কাজ করে, চেয়ে চিন্তে মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে ছোট একটি ভাঙ্গা ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন স্বামী হারা কৃষ্ণা দত্ত।
কৃষ্ণা দত্ত বলেন, ‘শুনেছি কত মানুষ গরিবগেরে সাহায্য দেয়। কিন্তু আমাগের কেউ খবরও নেয় না। সরকার নাকি কত ঘর দিচ্ছে, আমাগেরে একটা ঘর দিলি খেতে না পারলেও মেয়েটারে বিয়ে দিয়েছি, কিন্ত তার সংসার চলে না ঠিক মত কোন দিন খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছি। শান্তিতে ঘুমোতে পারি না। আমাগের এই ভাঙ্গা ছোট ঘরে সবাই খুব কষ্টে থাকি। বৃষ্টির দিনে পানি পড়ে আর ঝড়ের দিনে ভয়ে অন্যের ঘরের চলে যায়।’
সরেজমিনে কৃষ্ণা দত্তের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উপরে ভাঙ্গা টিনের ছাওনি, ভাঙ্গা টিনের বেড়া এবং মাটির ঘরের মেঝে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা। এরকম একটি কুড়ে ঘরে বসবাস করছেন কৃষ্ণা দত্ত ।
এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে একটি কন্যা সন্তান ফেলে রেখে স্বামী দিলিপ কুমার দত্ত চলে যায়। সন্তানও বৃদ্ধ বাবা মাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। এসময় আমার পাশে মানবতার হাত বাড়িতে দেন মোঃ খোকন মিয়া (ভ্যান্ডার) তার ঘরে বিনা ভাড়ায় থাকতে দেয়। বর্তমান মেয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে শশুর বাড়ী সংসার করে। রান্না করার শক্তি নেই। মেয়ের অসচ্ছল সংসারে যা জোটে তাই দিয়ে যায়। রোগ শোক আকড়ে ধরেছে। প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকার ওষুধ খেতে হয়। সারা দিন বিছানায় পরে থাকি। দু:চিন্তা কুড়ে কুড়ে খায়। ঘর মালিক যদি ঘর থেকে নামিয়ে দেয় তাহলে রাস্তায় পরে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা। শীতের রাতে পুড়ন কাপর দিয়ে দরজা জানালা ঘিরে রাখি। ভাবছি এবার ঝড়ের মধ্যে বেচে থাকতে পারবো কিনা জানিনা। বৃষ্টি এলে ঘর জলে ভেসে যায়। সারারাত বসে থাকি। এতো কষ্ট এই বয়সে সহ্য হয় না। তাই ভগবান নিয়ে গেলে বেচে যাতাম। সারা জীবনে একটু সুখের মুখ দেখলাম না।
জমিজমা না থাকায় সংসারার চালাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় কৃষ্ণা দত্তের। অন্যের বাড়ি কাজ না পেলে অনাহারে থাকতে হয়।
কামারখালি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাকিব হোসেন চৌধুরী ইরান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।
তিনি আরও বলেন, জমিজমা নেই এরকম ভূমিহীন হতদরিদ্র মানুষের জন্যই উপহারের ঘর দেয়া হচ্ছে। খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা হবে, যদি সে ভু’মিহীন হয় তাহলে খাস জমিতে তাকে ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।