বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে লকডাউনে ওষুদের দোকান বাদে সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশার মানুষ। এদেরই একজন চায়ের দোকানদার শারিরীক প্রতিবন্ধী ষাটোর্ধ বয়সের নলিন রাজবংশী।
বোয়ালমারী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের গুনবহা চন্দনা-বারাশিয়া নদীর পাড়ে ছোট্ট একটি ঘরে স্ত্রীসহ ছয় ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোন রকম জীবন যাপন করছিলেন তিনি। বাড়ির সামনে চায়ের একটি দোকানই ছিল তার সংসার চালানোর একমাত্র অবলম্বন। করোনা ভাইরাসের কারণে তাও রয়েছে বন্ধ। প্রায় মাস খানেক দোকান বন্ধ থাকায় করোনায় খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে অসহায় হড়ে পড়েন প্রতিবন্ধী নলিন পরিবার। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্তু তার পরিবারের খবর নেয়নি কোন জনপ্রতিনিধি বা বিত্তবানরা।
নিজেই চাকাযুক্ত হুইল চেয়ার নিয়ে বাড়ি থেকে রওনা হলেন উপজেলা পরিষদের দিকে। উপজেলা পরিষদে ঢুকে দাঁড়ালেন ইউএনও অফিসের সামনে।
ইউএনও ঝোটন চন্দ প্রতিদিনের ন্যায় বাসা বাংলো থেকে বের হচ্ছিলেন অফিসের উদ্দেশ্যে। অফিস থেকে প্রাথমিক কাজ সেরে রওনা হবেন কোন ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ করার জন্য। গাড়িতে ওঠেই পড়েছেন; কিন্তু চোখ পড়লো ওই প্রতিবন্ধীর দিকে। গাড়ি থেকে নেমে প্রতিবন্ধীর সবকিছু শুনে প্রাথমিক ভাবে কিছু চাল, ডাল, তেলসহ খাদ্য সহায়তা দিলেন প্রতিবন্ধীকে। কাগজে প্রতিবন্ধী নলিন রাজবংশীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য নাম ঠিকানা লিখলেন।
বৃহস্পতিবার (২৩.০৪.২০) রাতে হঠাৎ ওই প্রতিবন্ধীর বাড়িতে হাজির ইউএনও ঝোটন চন্দ। সবকিছু দেখে শুনে সংকটকালীন সময়ে তার (প্রতিবন্ধীর) আট সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণসহ সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঝোটন চন্দ।
প্রতিবন্ধী নলিন রাজবংশী বলেন, আমার পরিবারের আট সদস্যের মুখে দানা দেওয়ার একমাত্র উৎস দোকানটি। করোনা দূর্যোগের কারণে আজ প্রায় এক মাস হলো তা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আমার পরিবারে কেউ কোন সাহায্যে এগিয়ে না আসলে; নিজেই গিয়ের্ছিলাম ইউএনও স্যারের কাছে। যতদিন এই দূর্যোগ থাকবে ততোদিন ঝোটন চন্দ স্যার আমার পরিবারের সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন। স্যারের মত লোক সব উপজেলায় থাকলে আমার মত অসহায় মানুষেরা বেঁচে থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঝোটন চন্দ বলেন, প্রতিদিনের মত বাসা থেকে বের হয়ে ত্রাণ বিতরণের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় হুইল চেয়ারে একজন প্রতিবন্ধীকে আমার অফিসের সামনে দেখতে পাই। দেখে তার খোঁজখবর নিয়ে কথা শুনে তাকে তাৎক্ষনিকভাবে সরকারি খাদ্য সহায়তা প্রদান করি। রাতে তার বাড়িতে গিয়ে অভাবগ্রস্হ পরিবারের সব কিছু দেখে শুনে সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও এই সংকটকালীন সময়ে তার পরিবারের সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।