মোঃ আলাউদ্দিন মন্ডল, রাজশাহী : রাজশাহীবাসী এই ধরনের ঘটনা গত ১০০ বছরের মধ্যে দেখে নাই।রমজান আসলেই একটা সাজ সাজ রব পড়ে যায় রোজাদারদের রোজা রাখার ও সেহেরী খাওয়ার আনন্দের সীমা থাকে না।অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যেও ব্যাবসায়িক লাভের পাশাপাশি ধর্মীয় বিধি বিধান পালন করার মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে।যা এবার রমজানে অনুপস্থিত।
আজ রমজনের প্রথম রোজ। রেস্টুরেন্ট পাড়ায় নেই ইফতারের আয়োজনের ধুম। যেখানে দুপুরের পরের সময়টা ব্যস্ততা থাকার কথা, সেখানে উল্ট চিত্র। অনেকটাই সুনশান নিরাবতা বিরাজ করেছে রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার এলাকায়।
রেস্টুরেন্টগুলোতে নেই কর্মীদের কাজের কলহ, নেই রোজাদারদের আনাগনা।
রমজানে রোজা রাখাকে কেন্দ্র বড় ধরনের আয়োজন থাকে ইফতারকে কেন্দ্র করে। তবে এবছর ইফতারের কোন আয়োজন বা বেচা-বিক্রি নেই দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোতে। ধর্মপান মুসলমানদের এবছর বাড়িতে করতে হবে ইফতার এমনটি জানাচ্ছে রাজশাহী মেট্রোপলিন পুলিশ (আরএমপি)। তারা বলছেন- করোনাভাইরাসের সংক্রামন রোধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন- আরএমপি পুলিশের মুখপাত্র গোমালম রুহুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, দোকানপাট খোলার বিষয়ে আগের নির্দেশনা বহল থাকবে।
জানা গেছে- রাজশাহীতে রমজান মাসের বিভিন্ন ধরনের ইফতারের বিকিনিকি হয় বিভাগীয় এই শহরের। পাড়া মহল্লায়,ওলি,গলি সর্বত্র ইফতারীর পশরা চোখে পড়ার মত একটি ব্যাপার বিশেষ করে রমজানের প্রথম দিকে।শুধু তাই নয়, রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবারও। এসবের মধ্যে রয়েছে- শাহী জিলাপী, শাহী ফিরনি ইত্যাদি। নগরীর রেস্টুরেন্টগুলোতে আসরের নামাজ পরেই পরশা সাজিয়ে বসে ব্যবসায়ীরা। বিক্রি চলে ইফতারের আগে পর্যন্ত।
রাজশাহীতে ইফতারের প্লেটে থাকে- জিলাপি, ছোলা, বেগুনি, পিয়াজু, রসুন চপ, আলু চপ, ডিম চপ, কিমা চম, কাঁচা ছোলা, ভাজা বাদাম, বুনদিয়া, ভাজা চিঁড়া। এছাড়া ইফতারে ফল জাতীয় খাবারের মধ্যে খেজুর, আপেল, শসা, কলা, গাজর। পানীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে- ঘোল, মাঠা, আখের রস। কোথায় কোথাও পাওয়া যায় লেবুর শরবতও।
তবে এবছর নগরবাসীকে ইফতার করতে হবে ঘরেই। কারণ করোনাভাইরাসের সংক্রামন রোধে বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। সেই হিসেবে বন্ধ থাকবে ইফতারের দোকানও। তাই সবাইকে বাড়িতে ইফতার করতে হবে এমনটি জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। সেই লক্ষে এবছর হচ্ছে কোন ধরনের ইফতার পাটিও। কারণ ইফতার পার্টিতে লোকজনের সমাগম ঘটে। তাই ইফতার পার্টির বন্ধের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, আমরা ভালো নেই। ইফতারকে কেন্দ্র করে ২০ লাখ টাকা প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে। এতে করে অনেক শ্রমিক বেকার হয়েছে। প্ররোদনা দেওয়ার কথা ভাবছি। তবে দেওয়ার সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, নগরে ১ হাজার ২৪৫ জনকে সহায়তা করা হবে। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রাফে মোহাম্মদ গণমাধ্যমকে বলেন, রেস্তোঁরাগুলো যদি ইফতার পণ্য বিক্রি করতে চায় তবে রেস্তোঁরার ভেতরে সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে বিক্রি করতে পারেন। এক্ষেত্রে গ্রাহকরা পার্সেল করে খাবার নিয়ে যেতে পারবেন কিন্তু ভেতরে বসে খেতে পারবেন না।