০ আলমগীর জয় ০
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ফরিদপুরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া দিবসটিতে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিহতদের স্মরণ করছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন।
সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক জনাব অতুল সরকার। সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায়। আলোচনা সভায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বীরমুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, বিভিন্ন সামাজিক সাংষ্কৃতিক সংগঠন অংশগ্রহণ করে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করেন অনিন্দিতা চৌধুরী মৃত্তিকা, মোঃ আল আমিন, দিল আফরোজ শ্রাবণী, মোঃ শামীম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোশার্রফ আলী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজভী জামান, সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার আবু সুফিয়ান চৌধুরী কুশল, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিষ্ণু পদ ঘোষাল, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি শওকত আলী জাহিদ, শিক্ষক শেখ জামাল প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা। সভাটি উপস্থাপনা করেন সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দবির উদ্দিন।
এদিকে বিকেল ৪ টায় কবি জসীম উদদীন হলে গণহত্যার উপর দূর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনী হবে। এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় শহীদদের স্মরণে স্বাধীনতা চত্ত্বরে প্রতীকী গণকবরে আলোক প্রজ্জ্বলন ও সন্ধ্যা ৭ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মুজিববর্ষ মঞ্চে গণহত্যা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর গীতিনাট্য-সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। রাত ৯ টা থেকে ৯ টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশের ন্যায় জেলায় প্রতীকী ব্ল্যাক আউট হবে।
উল্লেখ্য ২৫ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে এক বিভীষিকাময় বেদনাবিধুর রাত। ১৯৭১ সালের আজকের রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র, নিরপরাধ ও ঘুমন্ত সাধারণ বাঙালির ওপর যে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক ঘৃণ্যতম গণহত্যার নজির হয়ে আছে। বর্বর হত্যাযজ্ঞের এ দিনটি ২০১৭ সাল থেকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনের জন্য স্বীকৃতি আদায়ের কাজও চলছে।
এ রাতে হানাদার বাহিনী শুরু করে ‘অপারেশন সার্চলাইট’। অপারেশন শুরুর দেড় ঘণ্টার মধ্যেই কর্নেল জেড এ খান ও মেজর বিল্লাল স্বাধীনতার স্থপতি, অবিসংবাদিত নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার বাসা থেকে তুলে ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে আসে । গ্রেফতারের আগ মূহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গোপন ওয়ারলেস বার্তায় তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্র-জনতা-পুলিশ-ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘোষণা করছি আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন, যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করুন। এই হয়তো আপনাদের প্রতি আমার শেষ বাণী হতে পারে। আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান।’ নিচে দেখুন সাইন করা ঘোষণার কপি-এদিকে পিলখানায় ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত বাণী ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারাদেশে মেসেজ আকারে পাঠানো হয়। এই বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দফতরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙর করা একটি বিদেশী জাহাজও এই বার্তা গ্রহণ করে।
রাতে পিলখানার সাথে সাথে রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারী বাজারসহ সমগ্র ঢাকাতেই শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। রাজারবাগে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তাদের সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই। তবে ট্যাংক আর ভারী মেশিনগানের মুখে এ প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টেকেনি। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয় পুরো সদর দফতর। বিভিন্ন এলাকাতে যথেচ্ছ হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ করে চলে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী । ইকবাল হল (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) এবং জগন্নাথ হলে হত্যা করা হয় কয়েকশ নিরীহ ছাত্রকে এবং বড় বড় গর্ত করে পুঁতে ফেলা হয় ওইসব লাশ। রোকেয়া হলের মেয়েদের ধরে নিয়ে যাওয়া হলো ক্যান্টনমেন্টে। সারা শহরে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে পাষণ্ড বাহিনী। রিকশাওয়ালা, ভিখারি, শিশু, ফুটপাতবাসী কেউই তাদের ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পায়নি। বস্তির পর বস্তি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং প্রাণভয়ে পলায়নপর আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাকে ব্রাশফায়ারে পাখির মতো হত্যা করা হয়। রাতারাতি ঢাকা পরিণত হল মৃত মানুষের শহরে।