সময় যত ঘনিয়ে আসছে, জমজমাট হয়ে উঠছে কোরবানির পশুর হাট! আর হাট যত জমছে, ততবেশি ঝুঁকি বাড়ছে করোনা সংক্রমনের!
সকাল হতে শুরু, এরপর দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা, নানা স্থানের ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম ঘটছে হাটে! যেখানে গুটিকয়েকের মাঝে স্বাস্থ্য বিধি মানার প্রবনতা থাকলেও, অধিকাংশ মানুষের মাঝে তা একেবারেই নেই! বিশেষ করে পশু বিক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্কাই করছেন না! গরু নিয়ে শ্যালো চালিতো গাড়ীতে গাদাগাদি করে হাটে প্রবেশ করছেন, এরপর কোনরুপ সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই মিশে যাচ্ছেন সকলের মাঝে! হাটে প্রবেশের আগে অনেক ক্রেতাদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবনতা থাকলেও অবশেষে তারাও যেন কালের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন।
আর এতে করেই জনসাধারণের পাশাপাশি সংক্রমনের উচ্চ ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছেন পুলিশ ও সাংবাদিকরা! অধিকাংশ হাটেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকছেন পুলিশ! পুরো হাট চলাকালীন সময়ে শৃঙ্খলা ঠিক রাখার পাশাপাশি সকলের নিরাপদ চলাচল ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন তাঁরা। এর ফলে প্রতিনিয়তই হাটে আগত ক্রেতা বিক্রেতার খুব কাছাকাছি আসতে হচ্ছে তাঁদের! ক্রেতা বিক্রেতার খুব কাছাকাছি থাকলেও নিজেদের সরবরাহকৃত মাস্ক ও কিছু সার্জিক্যাল মাস্ক ছাড়া কোন প্রকার সুরক্ষা সামগ্রী এ সময় তাঁদের পরিধান করতে দেখা যায়নি!
সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে চিত্রটি আরও ভয়াবহ! পুলিশ সদস্যরা হাটের ভেতরে সেভাবে প্রবেশ না করলেও, একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরী করতে সাংবাদিকদের ক্যামেরা হাতে ছুটতে হচ্ছে হাটের এ মাথা থেকে ও মাথা! মুখে মাস্ক থাকলেও পুলিশের মত তাঁদেরও কোন প্রকারের সুরক্ষা সামগ্রী পরিধান করতে দেখে যায়নি!
রাজশাহী নগরীর সিটি হাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটে প্রবেশ পথের সামনেই পুলিশ জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে মাইকিং করছেন। কিছু পুলিশ জনসাধারণের খুব কাছাকাছি এসে তারা কোন পথে যাবেন সে নির্দেশনাও দিচ্ছেন। কেউবা আবার সকলকে সরিয়ে, মহাসড়কে যেন যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে সেই ব্যবস্থা করছেন।
সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে নিজেদের জীবনকে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরএমপিতে কর্মরত একজন পুলিশ সদস্য জানান, ‘আমাদের অসংখ্য সহকর্মী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। হয়তো আমাদেরও কিছু হয়ে যেতে পারে, তবে আমরা পুলিশ, জীবনের চেয়ে দায়িত্ব বড়।’
এদিকে প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাটের মধ্যে সেভাবে প্রবেশ করতে না দেখা গেলেও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা হাটের মধ্যে প্রবেশ করছেন। ক্রেতা বিক্রেতার সাক্ষাতকার নেবার সময় চলে যাচ্ছেন তাদের খুব কাছাকাছি! তবে সামাজিক দুরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
‘হাটে পুলিশ-সাংবাদিকরা কতটা করোনা সংক্রমনের ঝুঁকিতে রয়েছেন?’ এ বিষয়ে সিনিয়র সাংবাদিক আহম্মদ আলী জানান, “অবশ্যই তাঁরা সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিতে! কারন ক্রেতা বিক্রেতারা অতিদ্রুত তাদের কাজ শেষ করে হাট ত্যাগ করতে পারছেন। একজন সাংবাদিকের সে সুযোগ থাকলেও পুলিশের ক্ষেত্রে তা একদমই নেই। যা তাঁদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মাঝে ফেলে দিতে পারে! তবে বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও দ্রুত স্থান ত্যাগের বিষয়টি একেবারেই সম্ভবকর হয়ে ওঠেনা। ফলে তাঁরাও যে ঝুঁকিমুক্ত, এ কথা বলা যাবেনা।”
তবে রাজশাহী নগরীর অদূরেই কাটাখালী হাটের চিত্র ছিলো তুলনামূলক ভালো। এখানে অধিকাংশ পুলিশ সদস্যরা নিরাপদ দুরত্ব নিশ্চিত করতে হাটের মাঝেই অবস্থিত পুলিশ বক্সে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকেই সকলকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। এসময় পুলিশ বক্সের ভেতরে রুপালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও সামাজিক দুরত্ব বজাই রেখে নকল টাকা পরীক্ষা করতে দেখা গেছে।