সাজ্জাদ মাহমুদ সুইট
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি।
রাজশাহীতে দক্ষিণা বাতাসে আম্র মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধ চারিদিক। কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতালে ফাগুনের উত্তাল বাসন্তী হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রাম বাংলার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে ফুটেওঠে নয়নাভিরাম শিমুল ফুল।
কিন্তু কালের বিবর্তনে রাজশাহী জেলার বাঘা,চারঘাট,পুঠিয়া,দূর্গাপুর,বাগমারা সহ প্রায় উপজেলায় আগুন ঝরা ফাগুনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। এক যুগ আগেও জেলার বিভিন্ন গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে কানাচে আর রাস্তায় প্রচুর শিমুল গাছের দেখা মিলতো। প্রতিটি গাছে গাছে প্রস্ফুটিত শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিতো বসন্তকে।
বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি সাবেক ইউপি সদস্য শুকুর আলী বলেন,আগে গ্রামের প্রায় সব জায়গায় প্রচুর শিমুল গাছ ছিল। প্রাকৃতিক ভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন শিমুল গাছ। এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজ গুণ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এখনো নানা রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে। বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়।
শিমুল গাছ রোপণের ৫-৬ বছরের মধ্যে ফুল ফোটে। ৯০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। সেই তুলনায় বেশ মোটাও হয়। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে শিমুল গাছ দেড়শ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে যায়। প্রাকৃতিকভাবে বাতাসে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়।
অন্যান্য গাছের মত এ গাছ কেউ শখ করে লাগায় না। নেওয়া হয় না কোন যত্নও। অযত্ন আর অনাদরে প্রাকৃতিকভাবেই এ গাছ বেড়ে ওঠে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য। বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। অথচ বর্তমানে মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে কারণে অকারণে কেটে ফেলছে। অতীতে ব্যাপকহারে নির্মাণ কাজ, টুথপিকসহ নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি। ফলে আজ বিলুপ্তির পথে এই গাছ।
শিমুল গাছ উজাড় হওয়ার ফলে পরিবেশের উপরে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। এ গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় কাক, কোকিল, চিল, বকসহ নানা ধরনের পাখি বাসা বেঁধে বসবাস করত। এ গাছ বর্তমানে কমে যাওয়ায় এখন এসব পাখিরা আবাসস্থল হারিয়ে পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। গাছের সাথে সাথে আবাসস্থলের অভাবে ধীরে ধীরে এসব পাখিরাও হারিয়ে যাচ্ছে। বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের শরের হাট থেকে পদ্মা নদী পারাপারের জন্য একটি ঘাট রয়েছে। শিমুল গাছের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে শিমুল তলা ঘাট।
স্থানীয় ডাঃ খন্দকার মোহাইমিনুর রহমান মেয়র
বলেন, ঔষধি গাছ হিসেবেও শিমুল গাছ পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিষফোঁড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এ গাছের মূল ব্যবহার করত। শিমুল গাছ শোভাবর্ধন ও ঔষধি গাছ হিসেবে অতুলনীয়। এ গাছ বিলুপ্তিতে বিপাকে পড়েছে পরিবেশ।
প্রতি কেজি তুলার দাম ৫-৬ শত টাকা। একটি বড় ধরনের গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আগের তুলনায় এখন শিমুলের তুলার দাম অনেক বেড়ে গেছে। এরপরও এই গাছ নিধন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।