• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
সাড়ে ৩ কোটি বধির শিশু জন্ম বিশ্বে

ছবি প্রতিকী

আজ বিশ্ব বধির দিবস। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার বিশ্বের প্রায় ১৩০টি দেশ দিবসটি পালন করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, বিশ্বের প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ শিশুর শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা আছে। তার মধ্যে ৬০ শতাংশের প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল।

কিন্তু সচেতনতার অভাবে তারা হারিয়েছে শ্রবণ ক্ষমতা।
এ ছাড়া মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশের শ্রবণ ক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। সংখ্যার হিসেবে প্রায় ৪৬ কোটি ৬০ লাখ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ২০৫০ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াবে ৯০ কোটিতে।

শ্রবণ সংক্রান্ত সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ‘ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ ডেফ’-এর উদ্যোগে ১৯৫১ সালে রোমে প্রথম শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা দিবস পালন শুরু হয়।

কানে শুনলে বাচ্চারা কথা বলতে শেখে। কিন্তু জন্ম থেকেই যদি কানে শব্দ না পৌঁছায় তাহলে কথা বলতে শেখার কোনো প্রশ্নই নেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১০০ শিশুর মধ্যে ৪ জন স্বাভাবিকভাবে শুনতে পায় না। অথচ বাবা-মা বা পরিবারের অন্যরা সে বিষয়ে সচেতন নন।

এ কারণে বিসিজি বা অন্যান্য টিকার মতো ইউরোপ-আমেরিকায় সদ্যোজাত শিশুর শ্রবণ ক্ষমতা পরীক্ষার করা বাধ্যতামূলক।
জন্মের সময় শ্রবণ শক্তি স্বাভাবিক থাকলেও ৩-৪ বছর বয়সে মেনিনজাইটিস, টাইফয়েড বা এনকেফেলাইটিস হলে শ্রবণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

অন্য অনেক অসুখের মতোই কানে শোনার অসুবিধা যদি জন্মের সময় নির্ণয় করা যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে হিয়ারিং এড দিয়ে বা দরকার হলে ককলিয়ার ইমপ্লান্ট করে শিশুকে শব্দের জগতে ফিরিয়ে আনা কঠিন নয়।

গর্ভাবস্থায় হবু মায়ের কোনো অসুখ যেমন মাম্পস, রুবেলা, হারপিস, চিকেন পক্স বা টক্সোপ্লাসমোসিসের মতো ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ হলে শিশু জন্মগতভাবে শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মা যদি এমন কিছু ওষুধ খান, যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তখন বাচ্চা বধির হয়ে জন্মাতে পারে। সন্তান ধারণের সময় ওষুধ খাবার ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত।

চিকিৎসকের দেওয়া ফলিক অ্যাসিড বা আয়রন ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। অবশ্য হাই প্রেশার সুগার বা অন্যান্য ক্রনিক অসুখ থাকলে তার ওষুধ খেতেই হবে। আবার গর্ভাবস্থায় মায়ের চোট লাগলেও শিশুর শ্রবণযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কানের গঠনগত কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে বাচ্চা বধির হয়ে জন্মায়।   অনেকে আবার ছোট বয়সে নানা শারীরিক কারণে শ্রবণ ক্ষমতা লোপ পায়।

কান বা শ্রবণযন্ত্রের বিশেষ করে অন্তঃকর্ণের কোনো গঠনগত ত্রুটি থাকলে জন্মের সময় থেকেই বাচ্চা কানে শুনতে পায় না। শোনার জন্য প্রয়োজনীয় নার্ভ অডিটরি নার্ভ। এই স্নায়ুর আশপাশে কোনো টিউমার থাকলে কানে শোনার সমস্যা হয়। বংশগত কারণেও বাচ্চা বধির হয়ে জন্মাতে পারে। আবার জন্মের সময় কোনো সমস্যা না থাকলেও পরে নানা কারণে শ্রবণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রেও অবিলম্বে সঠিক চিকিৎসার সাহায্য না নিলে কথা বলা-সহ ব্যক্তিত্ব বিকাশে অসুবিধা হয়। অ্যাকোয়ার্ড অর্থাৎ জন্মের পর নানা কারণে শিশুর শ্রবণ যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে সব বাচ্চা নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ভূমিষ্ঠ হয় ও স্বাভাবিকের থেকে অনেক কম ওজন নিয়ে জন্মেছে, তাদের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা হতে পারে।

আঘাত বা অন্য কোনো কারণে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং সময়মতো চিকিৎসা না হলে বাচ্চার কানে শোনার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। বাচ্চারা কানে কিছু পুরে দিলে এবং তা কানের মধ্যে থেকে গেলে শ্রবণযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এমনকি কানে ময়লা জমে খোঁচাখুঁচি করতে গেলে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে শোনার ক্ষমতা ধীরে ধীরে লোপ পায়।

খেয়াল রাখতে হবে, কোনো শব্দ হলেই বাচ্চা মাথা ঘুরিয়ে তাকায় বা চমকে ওঠে কি-না। একটু বড় হলে মা বাবার গলা চিনতে পারে। ১৫ মাস বয়সে বাচ্চারা মা, বাবা, দাদা ইত্যাদি বলতে শেখে। না বলতে পারলে বুঝতে হবে সমস্যা আছে। এ ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।

পরীক্ষা করে যদি জানা যায় শ্রবণ সহায়ক নার্ভ দুর্বল, তবে ছোট বয়স থেকেই ‘হিয়ারিং এড’ দিতে হবে। উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ‘ডিজিটাল হিয়ারিং এড’ কানে শোনার সব ঘাটতি দূর করতে পারে। ছোট থেকে ‘হিয়ারিং এড’ নিলে বাচ্চারা চট করে মানিয়ে নিতে পারে। ভবিষ্যতে কোনো সমস্যাও হয় না। যদি কোনো বাচ্চার ককলিয়ার নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে ‘হিয়ারিং এড’ দিয়েও কোনো লাভ হয় না। এদের শ্রবণ ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় ককলিয়ার প্রতিস্থাপন। এরপর অডিয়োলজিস্ট ও স্পিচ থেরাপিস্ট  নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেন।

পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে বাচ্চার শোনার ক্ষমতা ফিরিয়ে না আনলে স্বাভাবিকভাবে কথা শিখতে ও বলতে অসুবিধা হয়। বাচ্চাদের পাশাপাশি বেশি বয়সেও নানা কারণে শ্রবণ ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। চশমার মতোই হিয়ারিং এডকেও জীবনের অঙ্গ করে নিলে সুস্থ জীবন যাপন করা যায় অনায়াসে। কোলাহল মুখর জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা যাবে না।

আনন্দবাজার পত্রিকা অবলম্বনে

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।