নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা নতুন এক অ্যালার্ট সিস্টেম আবিষ্কার করেছেন, যা কোনো আগ্নেয়গিরিতে অগ্নুৎপাতের আগাম বার্তা দেবে। তারা বলেছেন, গত ডিসেম্বরে হোয়াইট আইল্যান্ডে ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের আগে সতর্কবার্তা দিতে পারতো এটি।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে কিছু পর্যটক হোয়াকারি নামের হোয়াইট আইল্যান্ডে ঘুরতে যান। তখন আকস্মিকভাবেই অগ্নুৎপাত শুরু হয় দেশের সবচেয়ে সক্রিয় এই আগ্নেয়গিরিতে। ওই ঘটনায় ২১ জনের প্রাণহানি ঘটে।
নতুন অ্যালার্ট সিস্টেম কম্পিউটার অ্যালগরিদম ব্যবহার করে রিয়াল-টাইম ডেটা বিশ্লেষণ করে অগ্নুৎপাতের পূর্বাভাস দেবে। গত সপ্তাহে গবেষণাটি নেচার সাময়িকীকে প্রকাশিত হয়।
গবেষণা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শেন ক্রোনিন জানান, দ্বীপে থাকা মানুষজনকে সতর্ক করতে বর্তমান পদ্ধতিটা খুব ধীর গতিতে কাজ করে। তার কথায়, ‘বর্তমানে (অ্যালার্ট সিস্টেম) রিয়াল-টাইম ডেটাই সংগ্রহ করা হয়, কিন্তু যা ঘটে তা হলো, একটি প্যানেল এই তথ্যগুলো মূল্যায়ন করেন এবং তা পরবর্তীতে যায় একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কাছে।…এতে অনেকটা সময় চলে যায়। যে পদ্ধতিতে আমরা সতর্কবার্তা পাঠাই তা হয়তো ১০ বছর আগে ঠিক ছিল, কিন্তু এটা সময়ের সঙ্গে মানানসই নয়।’
গত ৯ বছর ধরে হোয়াইট আইল্যান্ড থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এসেছে নতুন অ্যালার্ট সিস্টেম। ওই তথ্যগুলোর ধরন থেকে তারা এমন ইঙ্গিত পান যে, একটি অগ্নুৎপাত আসন্ন। হোয়াইট আইল্যান্ডে এটি পাঁচটি অগ্নুৎপাতের মধ্যে চারটি সঠিক পূর্বাভাস দিতে পেরেছে।
অধ্যাপক ক্রোনিন বলেন, ‘আমরা একটি ছাড়া সবগুলোই ধরতে পেরেছি, বাকিটা একটু ভিন্ন ধরনের ছিল যাতে কোনো লাভার উদগিরণ হয়নি এবং অপেক্ষাকৃত অগভীর অঞ্চল থেকে উদগিরণ হয়েছে ও তাতে ভিন্ন ধরনের পূর্বাভাস সিগন্যাল ছিল। আমরা স্বাভাবিক ধরনের উদগিরণ চিহ্নিত করতে পেরেছি এবং এখন দ্বিতীয় মডেলটি নিয়ে কাজ করছি (অগভীর উদগিরণ)।’
ড. ক্রোনিন জানান, হোয়াইট আইল্যান্ডে উদগিরণের আগেই নতুন সিস্টেম নিয়ে তাদের গবেষণা শুরু হয়েছিল। কিন্তু উদগিরণের পর তাদের কাজের গতিটা বেড়ে গেছে। তিনি মনে করেন, গত ডিসেম্বরে নতুন সিস্টেমটি কাজে লাগালে অন্তত ১৬ ঘণ্টা আগেই কর্মকর্তাদের অগ্নুৎপাতের ব্যাপারে সতর্ক করতে পারতো।
নিউজিল্যান্ডের অফিশিয়াল আগ্নেয়গিরি মনিটরিং এজেন্সি জিএনএস সায়েন্স বলছে, নতুন অ্যালার্ট সিস্টেমটির সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে তারা আশাবাদী, যদিও এর সীমাবদ্ধতা নিয়েও সতর্ক করে দেয় তারা।
কর্মকর্তা নিকো ফোরনিয়ার নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে বলেন, ‘একটি বৈজ্ঞানিক কৌশল উন্নয়নের পথে থাকলেও এটিতে এখনো উচ্চমাত্রার অনিশ্চয়তা রয়েছে।’ আরেক বিজ্ঞানী ড. ডেভিড ডেম্বসে বলেন, ‘ভবিষ্যতের প্রতিটি অগ্নুৎপাতের পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষেত্রে এটি ১০০% সঠিক নাও হতে পারে। এটি হয়তো সন্দেহজনক কোনো কিছুর অ্যালার্ট দিল, কিন্তু তা অগ্নুৎপাত নাও হতে পারে। কিন্তু এটা একটা উন্নতি, কেননা বর্তমান পদ্ধতিতে অল্প সময়ের মধ্যে পূর্বাভাসের সুযোগ নেই।’
সূত্র: বিবিসি