কে এম রুবেল, ফরিদপুর।
খামার পদ্ধতি গবেষণার মাধ্যমে কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে সমতল ইকো-সিস্টেমের প্রকল্পের আওতায় এনএটিপি ফেজ-২, বিএআরসি, ঢাকা এর অথার্য়নে সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (সগবি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), ফরিদপুরের আয়োজনে জেলার সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বসুনরসিংহদিয়া গ্রামে বারি উদ্ভাবিত তৈল (সূর্যমুখী), ডাল (মসুর ও খেসারী) ও মসলা (ধনিয়া ও কালোজিরা) ফসলের উৎপাদন কার্যক্রমের উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সরেজমিন গবেষণা বিভাগ ফরিদপুরের প্রধানবৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম আহম্মেদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ত্ব করেন আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বারি, বরিশাল এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কৃষিবিদ মো. রফি উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারি, গাজীপুরের মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারি গবেষণা উইং এর পরিচালক ড. মো. তারিকুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মনোজিত কুমার মল্লিক, মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বগুড়ার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হামিম রেজা, আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্র, মাদারীপুর এর মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ছালেহ উদ্দিন, আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র, গাজীপুর এর মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহা. সহিদুজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক ড. মো. হজরত আলী, আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র, গাজীপুর এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, বিএডিসি ফরিদপুরের উপপরিচালক কে.এম. মনিরুজ্জামান, আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র, মাগুড়াএর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান, মসলা গবেষণা উপকেন্দ্র ফরিদপুরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলাউদ্দিন খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সগবি, ফরিদপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ.এফ.এম. রুহুল কুদ্দুস।
অতিথিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন ডাল, তৈল ও মসলা ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে ফরিদপুর জেলা একটি অগ্রগামী জেলা হিসেবে বিবেচিত। ফরিদপুর জেলায় মসুর (প্রায় ২২ হাজার হেক্টর), খেসারী (প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর), কালোজিরা (প্রায় ২ হাজার হেক্টর) ও ধনিয়া (প্রায় ৬ হাজার হেক্টর) আবাদ খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও সূর্যমূখী আবাদ ফরিদপুরে একেবারেই নতুনভাবে শুরু হয়েছে। কৃষিতে ডাল ফসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণ, দারিদ্র বিমোচন ও পুষ্টিহীনতায় ভোগা বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস। ডালফসলে আমিষের পরিমাণ ২০ থেকে ৩০%। এজন্য ডালকে গরিবের মাংস বলা হয়ে থাকে। বারি মসুর-৮ জাতে ২৫ ভাগ আমিষ, ৬০ পিপিএম জিঙ্ক এবং ৮০ পিপিএম আয়রণ বিদ্যমান এবং জাতটি নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বপনযোগ্য। তৈল ফসল থেকে উৎপাদিত তেল আমাদের চাহিদার মাত্র এক তৃতীয়াংশ পূরণ করে। সূর্যমুখীতে ৪০-৪৫% লিনোলিক এসিড আছে এবং তেলে ক্ষতিকর ইরোসিক এসিড নাই। বারি সূর্যমুখী-৩ জাতটি খাটো জাতের। এছাড়াও মসলা জাতীয় ফসলও আমাদের রন্ধন ও ওষধী গুণ ছাড়াও অর্থনীতিতে খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় বারি উদ্ভাবিত আধুনিক জাত ও কলাকৌশল দ্বারা বসুনরসিংহদিয়া এলাকায় বারি সূর্যমুখী-৩ (৫ বিঘা), বারি কালোজিরা-১ (২ বিঘা), বারি ধনিয়া-২ (৭.৫ বিঘা) এবং মসুর (১০ বিঘা) আবাদ করা হয়েছে। সূর্যমুখী বাদে বাকী সবগুলো ফসলই বারি সিডার দ্বারা বপন করা হয়েছে। এছাড়াও অন্য এলাকায় বারি সূর্যমুখী-৩ (৮ বিঘা), বারি কালোজিরা-১ (৬ বিঘা) এবং মসুর (০৫ বিঘা) আবাদ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আগত কৃষক কিষাণীরা বারি সূর্যমুখী-৩, বারি কালোজিরা-১, বারি ধনিয়া-২ এবং বারি মসুর-৮ এর উৎপাদন প্লট পরিদর্শণ করেন এবং জাতগুলোর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কৃষকেরা গাছের অবস্থা দেখে খুবই আনন্দিত এবং এ ফসল ফলাতে কৃষকের উৎপাদন খরচ খুবই কম হয়েছ্।ে তাই কৃষকেরা অধিক ফলন পাওয়ার আশা করছে। কৃষকেরা খুব সহজে তাদের প্রচলিত ফসল ধারায় উল্লিখিত ফসল খাপ খাওয়াতে পারে অর্থাৎ পরের ফসল পাট/তিল আবাদ করতে পারে। তারা আধুনিক জাতের উচ্চ ফলনশীল বীজ প্রাপ্তিতে সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণকর্মীদের অনুরোধ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে পরিবর্তনশীল জলবায়ু মোকাবেলায় উপযোগী ডাল, তৈল ও মসলা জাত ও প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন ও উল্লিখিত আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় আবাদের জন্য কৃষকের প্রতি আহবান করেন। সভাপতি মহোদয় আগত অতিথি, কৃষক ও অন্যান্য কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।