বিজয় পোদ্দার ফরিদপুর: ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সারা দেশের ন্যায় ফরিদপুরেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। বিভিন্ন গ্রামে ঘর-বাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। গত ২০ মে বুধবার রাতে ফরিদপুরে সর্বোচ্চ বাতাসের গতি ছিল ৭৯ কিলোমিটার। রাত ৯টা থেকে দিবাগত রাত ৩টা পর্যন্ত বাতাসের গতি ৬০ কিঃমিঃ থেকে ৭৯ কিঃমিঃ এর মধ্যে উঠানামা করেছে।
এরপর ২৬ ও ২৭ মে মঙ্গল ও বুধবার ২ দিনের হঠাৎ ঝড় বৃষ্টিতে সারা দেশের মত ফরিদপুরেও পাট, ধান এবং কাঁচা তরকারি ও সবজির ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ফরিদপুরের নিম্নাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টির পানিতে মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের এ ক্ষতি হয়। চলমান করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্থ জীবনের ক্ষতি অব্যাহত থাকা মুহুর্তেই একের পর এক দুর্যোগ হানা দিচ্ছে। বজ্রপাতেও নানা স্থানে কৃষকের মৃত্যু হচ্ছে। সাধারণ মানুষ আশঙ্কা করছে এই বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়ার কারণে সঙ্কট হতে পারে সবজি ও কিছু কাঁচা তরকারি।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের বৃহত্তম কাঁচা বাজার হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আল-মদিনা ট্রেডার্স-এর পরিচালক আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, আমরা করোনায় লকডাউন ও সীমিত সময়ের কারনে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ। এরপর বৃষ্টি-ঝড় গত ২ দিনের বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গা তলিয়ে গেছে। এতে কাঁচা তরকারির মধ্যে পেঁপে, পটল, বেগুন, আলুসহ অনেক কিছু সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
তবে কৃষি পণ্য আনা-নেওয়া পরিবহন ক্ষেত্রে ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিলে এ সঙ্কট কাটানো সম্ভব হতে পারে। ফরিদপুর সালথা থানার কৃষক শিক্ষক নাজিমউদ্দিন খান জানান, আমাদের থানায় ও বড় খারদিয়া গ্রামে গত ২ দিনের বৃষ্টিতে পাট, ধান ও পেয়াজের ক্ষতি হয়েছে।
ফরিদপুরের হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারে ডিম ব্যবসায়ী মোঃ মোবারক মিয়া বলেন, বৃষ্টিতে পোল্ট্রি ফার্মের ক্ষতি হয়েছে। ডিমের দাম শতে ৭০০/- থেকে ৪৫০/- টাকায় নেমে গেছে। একের পর এক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ আমরা ও চাষী। ফরিদপুরের বাজারগুলোতে খবর নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুর অঞ্চলে মূলত যশোর, ঝিনাইদহ, বরিশাল থেকে বড় ধরনের সবজি ও কাঁচা তরকারি আসে। আর স্থানীয়ভাবে সদর উপজেলার ধুলদী, পরানপুর, শিবরামপুরসহ সংলগ্ন ইউনিয়নগুলোর গ্রাম গঞ্জের কৃষকদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য ফরিদপুরের মানুষের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে থাকে। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে রুট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
করোনা ভাইরাসের কারণে দূরপাল্লার পণ্য আনা-নেওয়ায় অনেক পরিবহন আসতে অনিহা প্রকাশ করে। চরভদ্রাসন উপজেলার ব্যবসায়ী জেরিন পোল্ট্রি ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ জামাল শেখ বলেন ব্যবসায়ীক ভাবে দেউলিয়া হওয়ার পথে। একে করোনা তার উপর পোল্ট্রি মুরগী মাংসের উপর নানা অপপ্রচারে আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এরপর ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও গত ২ দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে একেবারে নাজুক অবস্থা।
তারপরেও বর্তমান সরকারের কৃষি বান্ধব মননকে শুভেচ্ছা জানাই। দেশে কৃষিকে রক্ষায় শেখ হাসিনা সরকার অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তাছাড়া সীমিত আকারে দেশের সমস্ত কিছু খুলে দেওয়ায় বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙা করতে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে আমাদেরকে উৎসাহ দিবে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জেলায় ৮৬.৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। এর পরিমাণ ৩৩.৫ হেক্টর এছাড়া কলা বাগান, কাচা মরিচ, বেগুনসহ বেশকিছু ফসল ক্ষেত নষ্ট হয়েছে ২৯ হেক্টর, সবজি নষ্ট হয়েছে ১৮.৪ হেক্টর, পেঁপেঁ নষ্ট হয়েছে ৬ হেক্টর জমির।